কিয়ামতের ফিতনা সমূহ

ফিতনা একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, চক্রান্ত, বিপর্যয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি। শেষ জামানায় মানুষ বেশি ফিতনায় জড়িয়ে পড়বে। কেউ কারো কথা বিশ্বাস করবে না অযথা ঝগড়া বিবাদে মগ্ন হবে।তাই আমারা নিয়ে হাজির হয়েছে “কিয়ামতের ফিতনা সমূহ” নিয়ে। আমরা পর্যায়ক্রমে বিস্তারিতভাবে “কিয়ামতের ফিতনা সমূহ” এই ব্যাপার আলোচনা করব। আশা করছি আপনারা সকলে আমাদের সঙ্গে থাকবেন। তাহলে আর দেরি না করে চলুন আমরা “কিয়ামতের ফিতনা সমূহ” এই ব্যাপারে বিস্তার আলোচনা করছি।


সূচিপত্রঃ কিয়ামতের ফিতনা সমূহ।

  • ভূমিকা।
  • ফিতনা কি?
  • কিয়ামতের ফিতনা সমূহ।
  • উপসংহারঃ কিয়ামতের ফিতনা সমূহ।

ফিতনা কি?

সম্মানিত পাঠকগণ! কিয়ামতের আলামত এবং লক্ষণ – এ ব্যাপারে জানার পাশাপাশি "কিয়ামতের ফিতনা সমূহ" সম্পর্কেও জানতে হবে। আপনারা কি এমন কেউ আছেন, ফিতনা শব্দটি শুনেন নাই? যাইহোক, ফিতনা একটি "আরবি" শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বিপদ-আপদ, বিশৃঙ্খলা, পরীক্ষা করা, নৈরাজ্য, অরাজকতা, অন্তরঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

কিয়ামতের ফিতনা সমূহ।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কিয়ামতের পূর্বে অনেক ফিতনা আবির্ভাব হবে এই ব্যাপারে আমাদের পূর্বেই অভিহিত করে গেছেন। ফিতনা থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে নিম্নবর্ণিত পয়েন্ট সমূহের সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে এবং এই ব্যাপারে আমাদের কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবেঃ

১। ইনসাফ উঠে যাবে।

২। স্ত্রীর আনুগত্য করবে। 

৩। সুদের লেনদেন করবে।

আরও পড়ুনঃ কিয়ামতের আলামত এবং লক্ষণ – এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন

৪। তালাকের আধিক্য হবে। 

৫। ভদ্রলোকরা নির্গৃহীত হবে। 

৬। পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। 

৭। হৃদয়গুলো উজাড় করা হবে। 

৮। আকস্মিক মৃত্যুহার বেড়ে যাবে। 

৯। রেশমি পোশাক পরিধান করা হবে। 

১০। জান ও মালের নিরাপত্তা কমে যাবে। 

১১। মানুষের গুনার পরিমাণ বেড়ে যাবে। 

১২। আত্মীয়দের সঙ্গে বাজে আচরণ করবে। 

১৩। অপবাদ আরোপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। 

১৪। বন্ধুদের ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করবে না। 

১৫। নেতৃবর্গ জালেম এবং অত্যাচারী হয়ে উঠবে। 

১৬। পবিত্র কুরআন শরীফকে সুসজ্জিত করা হবে। 

১৭। জুলুম অত্যাচার ব্যাপক হারে লাভ করবে বা বৃদ্ধি পাবে। 

১৮। জাতীয় এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করা হবে।

১৯। সমাজের সবচেয়ে নিচু ও নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে নেতা বানানো হবে। 

২০। ঠিকমত যাকাত দেয়া হবে না। যাকাতকে জরিমানা করা মনে হবে।

 ২১। শরীয়তের দন্ডবিধিকে অকার্যকর করা হবে। ন্যায় বিচার কমে যাবে।

২২। মদের দোকান বেড়ে যাবে এবং ব্যাপকভাবে মদ পান শুরু করা হবে। 

২৩। বাদ্যযন্ত্র এবং বাজনার বিভিন্ন উপকরণকে বিশেষভাবে যত্ন করা হবে।

২৪। লোকেরা সন্তান লাভের পরিবর্তে সন্তান নেয়াকে অপছন্দ মনে করবে। 

২৫। আদালতে ন্যায়বিচার বিক্রি হবে। কোন সঠিক ও ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে না।

২৬। অন্তর সমূহ পাথরে চেয়ে কঠিন হবে। এমনকি মানুষের দয়া-মায়া উঠে যাবে। 

২৭। মানুষ নিজের পিতা-মাতার অবাধ্যতা করবে। পিতা-মাতার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবে। 

২৮। মুসলমানেরাও নির্দ্বিধায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে। এ ব্যাপারে তাদের কোন ভয় থাকবেনা।

আরও পড়ুনঃ জানাজার নামাজের নিয়ম, সঠিক নিয়ত, দোয়া ও ফজীলত

২৯। মানুষ আমানতের খিয়ানত করবে অর্থাৎ কারো কাছে কিছু রাখলে সেটা আত্মসাৎ করবে। 

৩০। নিচু এবং হীনা মনের লোকেরা সম্পদশালী হবে এবং তারা অত্যন্ত বিলাসী জীবন যাপন করবে। 

৩১। আমানতের মালকে লুটের মাল মনে করা হবে এবং আমানত করা মাল হতে ইচ্ছামত ভোগ করবে।

৩২। গায়রুল্লাহ এর নামের শপথ করা হবে কিন্তু শপথ শুধুমাত্র একমাত্র আল্লাহর নামেই করা উচিত।

৩৩। আখিরাতের কাজের দ্বারা দুনিয়া উপার্জন করা হবে এবং মানুষ দিন বিক্রি করে দুনিয়া উপার্জন করবে। 

৩৪। শুধুমাত্র পরিচিত লোকদের সালাম দেওয়া হবে। অপরিচিতদেরকে সালাম দেওয়া হবে না। সালামের প্র্যাকটিস কমে যাবে। 

৩৫। আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য কোনো আযাব আসবে। লোকদের চেহারা বিকৃত হবে। অথবা আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হবে।

৩৬। দুর্নীতি পরায়ন লোকদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ মনে করা হবে এবং ভালো লোকদেরকে দুর্নীতি পরায়েন মনে করা হবে। 

৩৭। রাষ্ট্রপ্রধান, শাসনবর্গ, মন্ত্রী পরিষদ এবং তাদের সমর্থক ও সহযোগীদের একাংশ মিথ্যা বলার অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং সর্বদা মিথ্যা কথা বলবেন।

৩৮। মহিলারা পুরুষের বেশভূষা ধারণ করবে এবং পুরুষেরা মহিলার বেশভূষা ধারণ করবে। দূর থেকে বোঝাই যাবে না, কে পুরুষ এবং কে মহিলা।

৩৯।  এমনকি আলেম এবং কারী যারা কুরআন তেলাওয়াত করবে, কুরআনের শিক্ষা দেবে তাদের মধ্যেও একদল পথভ্রষ্ট হয়ে বদ এবং ফাসেক হয়ে যাবে।

৪০। উঁচু উঁচু ভবন এবং উঁচু উঁচু সৌধ নির্মাণ করা হবে। মদীনার সুউচ্চ এক অট্টালিকার উপর আরোহণ করা হবে (সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৭০৭৩)।

৪১। লোকেরা নামাজে ডাকাতি করবে। নামাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে। অথচ নামাজ হচ্ছে ঈমান এবং কুফুরের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।

৪২। কিয়ামতের আগে কতিপয় মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব হবে। জুলুম অত্যাচার করাকে গর্বের বিষয়ে মনে করা হবে (সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৭১৬৮)।

৪৩। মিথ্যা কথাকে হালাল মনে করবে। মিথ্যাকে সত্য হিসেবে পরিণত হবে এবং সত্যকে মিথ্যা মনে করা হবে। মিথ্যা আরোপ করা হবে (সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৭০৭০)।

৪৪। মসজিদকে কারুকার্যময় করা হবে কিন্তু মুসল্লিদের অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকবে না। মুসল্লিদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাবে। বদকার লোকেরা মসজিদের শোরগোল সৃষ্টি করবে। 

৪৫। হিংস্র পশুর চামড়া ব্যবহার করা হবে। লোকেরা জীবজন্তুর চামড়া দিয়ে তৈরি করা উন্নত মানের পোশাক পরিধান করবে। কিন্তু তাদের দিলগুলো মৃত জন্তুর চেয়ে বেশি দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠবে। 

৪৬। পবিত্র কুরআন গানের সুরে তেলাওয়াত করা হবে। কিন্তু কোরআনকে বোঝার জন্য অথবা ব্যক্তিগত জীবনে কোরআন মানার জন্য এবং সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা দাওয়াতের উদ্দেশ্যে তেলাওয়াত করা হবে না। 

৪৭। বিভিন্ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করে মানুষ পার্থিব সম্পদ উপার্জনের কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। পরকালের চিন্তায় দ্বীনি এলেম শিক্ষা দেওয়া হবে না। বরং দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে দ্বীনি এলেম শিক্ষা দেওয়া হবে (সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৭১০৪)।

৪৮। অনাবৃষ্টির কারণে দুর্ভিক্ষ হবে না। বরং দুর্ভিক্ষ হবে এ কারণে যে, কেবল বৃষ্টি হতে থাকবে, বৃষ্টিই কেবল হতে থাকবে। ফলে ভূমি কোন কিছুই উদ্গত করবে না। বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ বেশ উষ্ণ এবং গরম থাকবে (সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৭১১৯)।

৪৯। হয়তো তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে লাল বর্ণের তুফান আসবে অথবা ভূমিকম্প আসবে। কুফা নগরীতে লাল রক্তিম এমন ঝঞ্ঝা বায়ু প্রবাহিত হবে, ওটা লোকদেরকে সমুদ্রের মধ্যে নিক্ষেপ করবে (সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৭০৯০, ৭১০৯, ৭১১০ ও ৭১১১)। 

৫০। মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে, কি অপরাধে সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, কি অপরাধে সে নিহত হয়েছে। সামান্য বিষয়ের রক্তপাত করবে (সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৭১৩১ ও ৭১৩২)।

৫১। গায়িকাদের সম্মান করা হবে। অর্থাৎ যে মহিলারা গান বাজানোর পেশায় থাকবে, তাদের অত্যাধিক সম্মানের চোখে দেখা হবে। অথচ দ্বীনদার নেককার নারীদের সম্মানের চোখে দেখা হবে না। তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন রকমের কুৎসা রচনা করা হবে।

আরও পড়ুনঃ দোয়া মাসুরা আরবি ও বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ এবং কখন পড়তে হয় 

৫২। উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোককেদের উপর বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করবে। তাদের সমালোচনা করবে এবং বলবে, তারা এই এই কথা ভুল বলেছে। আজকের যুগে দেখা যায় উম্মতের শ্রেষ্ঠ জামাত সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে অনেকে বেয়াদবি করছে। 

উপসংহারঃ কিয়ামতের ফিতনা সমূহ।

আমাদের আজকে বিষয় ছিল “কিয়ামতের ফিতনা সমূহ” আমরা এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করেছি। আশা করি সকলে এই ব্যাপারটি সঠিকভাবে মেনে চলবেন। তাহলে আমাদের জীবন সার্থক এবং বড় সুন্দর হবে। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলের তৌফিক দান করুন (আমিন)


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url