নামাজ ত্যাগ করার পরিণাম এবং ১৫টি শাস্তি

আমাদের আজকের বিষয় হচ্ছে "নামাজ ত্যাগ করার পরিণাম এবং ১৫টি শাস্তি"। জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন কোন সত্যিকার মুসলমান স্বজ্ঞানে ও স্বেচ্ছায় নামাজ ত্যাগ করতে পারেনা। আর যে মুসলমান নামাজেরমত এত বড় নেয়ামত ত্যাগ করলো, তার পরিণাম বড়ই ভয়াবহ ও কঠিন। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, নামাজ ত্যাগকারীর জন্য ১৫টি শান্তি নির্দিষ্ট আছে। তাহলোঃ পাঁচ প্রকার দুনিয়াতে, তিন প্রকার মৃত্যুর সময়, তিন প্রকার কবরে এবং চার প্রকার হাশরে। আমরা এখন নামাজ ত্যাগ করার পরিণাম এবং শাস্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আমাদের সঙ্গে থাকবেন। 


সূচিপত্রঃ নামাজ ত্যাগ করার পরিণাম এবং ১৫টি শাস্তি।

  • ভূমিকা।
  • নামাজ ত্যাগকারীর ৫ প্রকার শাস্তি দুনিয়াতে।
  • নামাজ ত্যাগকারীর ৩ প্রকার শাস্তি মৃত্যুর সময়।
  • নামাজ ত্যাগকারীর ৩ প্রকার শাস্তি কবরে।
  • নামাজ ত্যাগকারীর ৪ চার প্রকার শাস্তি হাশরে।
  • নামাজ পড়ার ব্যাপারে কতিপয় মাসায়েল।
  • উপসংহারঃ সূচিপত্রঃ নামাজ ত্যাগ করার পরিণাম এবং ১৫টি শাস্তি।

নামাজ ত্যাগকারীর দুনিয়াতে ৫ প্রকার শাস্তি। 


এই শাস্তি গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ-
১। রুজী-রোজগারের বরকত কেড়ে নেয়া হবে।
২। মুখমন্ডল থেকে নেককারের জ্যোতি মুছে ফেলা হবে।
৩। সে (নামাজ ব্যতীত) যে আমলই করুক না কেন, তার প্রতিদান পাবে না। 


৪। তার কোন দোয়া কবুল হবে না। 
৫। নেক বান্দাদের দোয়া হতে সে কোন ফলও পাবে না।

নামাজ ত্যাগকারীর মৃত্যুকালে ৩ প্রকারের শাস্তি। 

এই শাস্তি গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ-
১। বে-ইজ্জতের সহিত তার মৃত্যু হবে
২। সে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে
৩। পিপাসা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে। উল্লেখ্য যে, সমস্ত সমুদ্রের পানি দিলেও তার তৃষ্ণা মিটবেনা।

নামাজ ত্যাগকারীর কবরে ৩ প্রকার শাস্তি। 

এই শাস্তি গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ-
১। তার (নামাজ ত্যাগকারী) কবর এত সংকীর্ণ হবে যে, এক দিকের পাঁজরের হাড় অন্য পাঁজরে ঢুকে যাবে।
২। তার কবরে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হবে

৩। তার কবরে এমন একটি সাপ নিযুক্ত করা হবে, যার চক্ষুদ্বয় আগুনেরমত এবং নখগুলো লোহার। সাপটি এত বড় হবে যে, একদিনের রাস্তা অপেক্ষা দীর্ঘ। তার আওয়াজ হবে বজ্রের মতো কঠোর। সাপটি বলবে, আমার পরওয়ারদেগার আমাকে হুকুম দিয়েছেন যে, ফজরের নামাজ ত্যাগ করার দরুণ-সুর্যোদয় পর্যন্ত, জোহরের নামাজ ত্যাগ করার দরুণ-আসর পর্যন্ত, আছরের নামাজ ত্যাগ করার দরুণ-মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিব নামাজ ত্যাগ করার দরুণ-এশা পর্যন্ত এবং এশা নামাজ ত্যাগ করার দরুণ-ভোর পর্যন্ত তোমাকে দংশন করতে থাকবো। এ সাপটি একবার দংশন করলে ৭০ হাত মাটির নিচে চলে যাবে। কিয়ামত বা পুরুত্থান পর্যন্ত এভাবে সে আযাবে গ্রেপ্তার থাকবে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, "এ সাপ দুনিয়াতে একবার নিংশ্বাস ফেললে সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে।"


নামাজ ত্যাগকারীর হাশরে ৪ প্রকার শাস্তি।

এই শাস্তি গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ-
১। হিসাব-নিকাশে কঠোরতা
২। আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি
৩। জাহান্নামে প্রবেশ
৪। তদুপরী এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করার জন্য ৮০ হোকবা দোজখে জ্বলতে হবে। আবার কোন কোন কিতাবে ২,৮৮,০০০ বৎসর দোজখে জ্বলতে হবে বলে উল্লেখ আছে।

নামাজ পড়ার ব্যাপারে কতিপয় মাসায়েল।

১। উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) 'কে বলিতে শুনিয়াছেন যে, "কোন মুসলিম যখন আল্লাহর জন্য প্রতিদিন ফরজ নামাজগুলো ছাড়া আরো বার রাক'আত সুন্নাত নামাজ পড়ে, আল্লাহ তাহার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করিবেন।" (বার রাক'আত সুন্নাত নামাজ হলোঃ ফজরের পূর্বে দুই রাক'আত, যোহরের পূর্বে চার রাক'আত ও পরে দুই রাক'আত, মাগরিবের পরে দুই রাক'আত এবং ঈশারের পর দুই রাক'আত) (সহীহ মুসলিম শরীফ-১৬৯৬)।

২। যে ব্যক্তি ফরজ নামাজ ব্যতীত "দিন-রাত্রিতে ১২ রাক'আত (নফল নামাজ) আদায় করে, তাহার জন্য বেহেশতে একটি গৃহ নির্মিত হয়(সহীহ মুসলিম শরীফ-১৬৯৬)।

৩। যে লোক আছরের ফরজের পূর্বে "চার রাক'আত সুন্নাত নামাজ আদায় করিবে, তাহার জন্য বেহেশতে একটি গৃহ নির্মিত হইবে।"

৪। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করতঃ "সূর্য উদয় পর্যন্ত আল্লাহ তাআ'লার যিকিরে মশগুল থাকিয়া সুর্যোদয়ের পরে দুই রাক'আত এশরাকের নামাজ আদায় করিবে, সেই ব্যক্তি একটি হজ্জ ও একটি উমরার সওয়াব লাভ করিবে। উল্লেখ্য যে, যদি কেউ ফজরের পরে দুনিয়াবী কাজ-কর্ম করার পর এ নামাজ আদায় করে তাতেও নামাজের সওয়াব পাবে (তিবরারণী)।

আর পড়ুনঃ নামাজের বিবরণ – ফরজ এবং ওয়াজিবসমূহ

৫। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করতঃ "জায়নামাযে বসিয়া কথাবার্তা না বলিয়া যিকিরে মশগুল থাকিবে এবং সুর্যোদয়ের পরে দুই রাক'আত ইশরাক নামাজ আদায় করিবে। তাহার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করিয়া দেওয়া হইবে, যদিও তাহার গুনাহ সমুদ্রের অসংখ্য বুদবুদের (ফেনার) তুল্য হইয়া থাকে।" (আহমদ)।

উপসংহারঃ সূচিপত্রঃ নামাজ ত্যাগ করার পরিণাম এবং ১৫টি শাস্তি।

আমাদের আজকের বিষয় ছিল "নামাজ ত্যাগ করার পরিণাম এবং ১৫টি শাস্তি"। আমরা চেষ্টা করেছি এ ব্যাপারে বিস্তার আলোচনা করার জন্য। যদি এখান থেকে কেউ সামান্যতম কিছু জানতে পারেন বা শিখতে পারেন তাহলে আমাদের এ লেখা স্বার্থক। আমি সকলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি উপরোক্ত নির্দেশাগুলো মেনে চলার জন্য। তাহলে আমাদের জীবনের সার্থক এবং সুন্দর হবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url