তায়াম্মুম কি - এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন।

তায়াম্মুম একটি আরবি শব্দ। ইসলামিক পরিভাষায় তায়াম্মুম শব্দের অর্থ সংকল্প বা উদ্দেশ্য। যদি আশে-পাশে পানি পাওয়া না যায় তাহলে পরিষ্কার বালি বা পাথর বা কাদা ব্যবহার করে তায়াম্মুম করতে হয়। আমি আজকের আর্টিকেলে তায়াম্মুম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি সবাই মনোযোগ দিয়ে আমাদের সঙ্ঘেই থাকবেন। চলুন বিস্তারিত জানা জাক।



সূচিপত্র। তায়াম্মুম কি - এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন।

  • ভূমিকা।
  • তায়াম্মুম কি? 
  • তায়াম্মুমের পদ্ধতি।
  • মৃত ব্যক্তির তায়াম্মুম।
  • তায়াম্মুমের ফরজ। 
  • তায়াম্মুমের শর্তাসমূহ।
  • তায়াম্মুমের মাসয়ালা।
  • উপসংহার - তায়াম্মুম কি এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন।

১। তায়াম্মুম কি? 

তায়াম্মুম (আরবি: تيمم) একটি আরবি শব্দ। তায়াম্মুম শব্দের অর্থ সংকল্প বা উদ্দেশ্য। তায়াম্মুম পরিষ্কার বালি বা পাথর বা কাদা ব্যবহার করে শুষ্ক আচার শুদ্ধকরণের একটি ইসলামিক কাজ, যা তায়াম্মুম হিসেবে পরিচিত। সহজে পরিষ্কার পানি না পাওয়া গেলে বা যদি একটি শুদ্ধ পানি না থাকে তাহলে ধোয়ার (ওজু বা গোসল) জায়গায় করা যেতে পারে। ইসলামের বিধান অনুসারে, তায়াম্মুম হল অযু বা গোসলের বিকল্প স্বরূপ বালি, মাটি বা ধূলা দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা।

২। তায়াম্মুমের পদ্ধতি।

যে তায়াম্মুম করবে সে তার উভয় হাত পবিত্র মাটিতে একবার মারবে, অতঃপর তার হাতের আঙ্গুলের ভিতর অংশ দিয়ে তার মুখ ও উভয় পাঞ্জাকে হাতের তালু দ্বারা মাসেহ করবে। 


মাসেহ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেনঃ

"এবং যদি তোমরা রোগাগ্রস্ত হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা হতে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ কর (স্ত্রী সহবার কর), অতঃপর পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। তখন তোমরা তা দ্বারা তোমাদের মূখমন্ডল ও হাত মাসেহ কর।" (সূরা আল মায়েদাহ-৬)।

৩। মৃত ব্যক্তির তায়াম্মুম।

মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পূর্বে গোসল দিতে হয়। তবে প্রয়োজনীয় পানি না-পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করাতে হয়।

৪। তায়াম্মুমের ফরজ। 

তায়াম্মুমের ফরজ তিনটি। এগুলো হচ্ছেঃ 
১। নিয়াত করা
২। পরিষ্কাররূপে মুখ মাসেহ করা 
৩। কনুইসহ দুই হাত পরিষ্কাররূপে মাসেহ করা। 

উল্লেখ্য যে, যে সকল কারণে ওযু ভঙ্গ হয়, সেই একই কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হবে। এ ছাড়া, যখন পানি পাওয়া যাবে তখন তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে। পানি ব্যবহার করতে অপারগ ব্যক্তির বিধান, যে ব্যক্তি পানি পাবে না তার বিধানের ন্যায়। কারণ, আল্লাহ পাক এরশাদ করেণঃ 
"তোমরা যথা সাধ্য আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুন-১৬) 

এ প্রশংগে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেনঃ "আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করলে, তোমরা তা তোমাদের সাধ্যমত করার চেষ্টা করবে।" 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আম্মার ইবনে ইয়াছেরকে তায়াম্মুম পদ্ধতি সম্পর্কে বলেনঃ "মাটিতো তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল যে, এভাবে তোমার উভয় হাতকে (মাটিতে) মারতে।" অতঃপর তাঁর উভয় হাতকে একবার মাটিতে মারলেন এরপর উভয় হাত দ্বারা তাঁর চেহারা ও দু'হাত মাসেহ করলেন।" 

ধূলি মিশ্রিত পবিত্র মাটি ছাড়া তা তায়াম্মুম জায়েয নয় এবং নিয়াত ব্যতীত তায়াম্মুল সহীহ হবে না। এর প্রমাণে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বাণীঃ "সমস্ত কাজ-কর্মই নিয়াতের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেকটি মানুষের জন্য তাই হবে, যা সে নিয়্যত করেছে (বুখারী)।”

৫। তায়াম্মুমের শর্তাসমূহ। 

যদি আশেপাশে পানি পাওয়া না যায় তাহলে অযু বা গোসলের পরির্বতে নিম্নোক্ত অবস্থায় তায়াম্মুম করতে হবে।

১। আশেপাশে ১.৭ কিলোমিটারের মধ্যে পানি পাওয়া না তায়াম্মুম করতে হবে।
২। পানি পেতে যদি শত্রুর, সাপ কিংবা বিপদজনক পশুর আক্রমণের ভয় থাকে তাহলে তায়াম্মুম করতে হবে।
৩। এত অল্প পানি থাকে যে তা গোসল বা অযুতে ব্যবহার করলে খাওয়ার পানির সংকট হবে তাহলে তায়াম্মুম করতে হবে।
৪। কেউ তার সুচিন্তিত অভিজ্ঞতা অথবা বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে জানতে পারে যে, পানি ব্যবহার তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে তাহলে তায়াম্মুম করতে হবে।

৬। তায়াম্মুমের মাসয়ালা।


১। পানির খবর পাওয়া গেল, কিন্তু শরয়ী (এক মাইল) মাইল থেকে দূরে, তবে সে স্থান থেকে পানি এনে অজু করা ওয়াজিব নয়; বরং তায়াম্মুম করা জায়েয।
২। কেউ জনবসতি থেকে এক মাইলের দূরে আছে। যদি সে এক মাইলের কমে কোথাও পানি না পায় তবে তার জন্যেও তায়াম্মুম করা দুরস্ত হবে। সে মুসাফির হোক বা না হোক।
৩। রাস্তায় কুপ আছে, কিন্তু কুপ থেকে পানি উঠাবার জন্য সাথে কিছু নাই, কোথাও চেয়েও পাওয়া গেল না, এ ক্ষেত্রে তায়াম্মুম দুরস্ত হবে।

৭। উপসংহার। তায়াম্মুম কি – এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন। 


সম্মানিত পাঠকগন! আমাদের আজকের বিষয় ছিল "তায়াম্মুম কি - এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন"। আমরা চেষ্টা করেছি এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য। যদি এই লেখা আপনারা সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই লেখা সার্থক।


যদি আপনাদের এই লেখাটি সামান্য পরিমাণ ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের  প্রিয়জনকে শেয়ার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলের সহায় হোন (আমীন)।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url