অজুর ফরজ ও সুন্নাতসহ বিস্তারিত বিবরণ।
অজু হল ইসলামের বিধান অনুসারে দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি অন্যতম পন্থা। মুসলমানদের নামাজের পূর্বে অযু করে নেয়া বাধ্যতামূলক। মহান আল্লাহ তাআলা পবি ত্র। ইসলামের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো পবিত্রতা। পবিত্রতা মানে জীবনব্যাপী পবিত্রতা। নামাজ পড়তে, পবিত্র কুরআন পড়তে ও স্পর্শ করতেও অজুর প্রয়োজন হয়।
এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ।’ অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম, মিশকাত, পৃষ্ঠা: ৩৮)।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ অজুর ফরজ ও সুন্নাতসহ বিস্তারিত বিবরণ
- ভুমিকা।
- অজু কি।
- অজুর ফরজসমূহ।
- অজুর সুন্নাতসমূহ।
- অজুর মুস্তাহাবসমূহ।
- অজু করার নিয়াত (বাংলা উচ্চারণ)।
- অজু করার দোয়া (বাংলা উচ্চারণ)।
- অজু করার পরের দোয়া (বাংলা উচ্চারণ)
- অজু ও তারপর সালাত আদায়ের ফজীলত।
- কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে অজু করার ফজীলত।
- অজু করার পর দুই রাক'আত নামাজ পড়ার ফজীলত।
- শেষ কথা - অজুর ফরজ ও সুন্নাতসহ বিস্তারিত বিবরণ।
১। অজু কি।
পবিত্রতা হাসিলের জন্য অজুই শ্রেষ্ঠ এবং শেষ পন্থা। কারণ, অজু করেই অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজ আদায় এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তিলওয়াতসহ অন্যান্য সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করতে হয়। পাক-পবিত্রতার সাথে মৃত্যু হলে ঈমানের সাথে মৃত্যু হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকে। কারণ, মৃত্যুকালে শয়তান প্রবঞ্চনা দিতে তার নিকট আসতে পারেনা।
হাদিসে উল্লেখ রয়েছেঃ "যে ব্যক্তি অজু করার সময় দরূদ শরীফ পাঠ না করবে, তার অজু পরিপূর্ণ হবেনা।" অন্য এক হাদিসে উল্লেখ রয়েছেঃ "মু'মিন বান্দার হাত ও পায়ে যে পর্যন্ত অজুর পানি পৌঁছবে কিয়ামতের দিন তাকে সে পর্যন্ত নূরের জেওরে বিভূষিত করা হবে।" অজু করার পর কোন স্থান শুষ্ক থাকার সন্দেহ হলে বাম পায়ের গোড়ালি ধৌত করে নিলেই চলবে।
২। অজুর ফরজসমূহ।
অজুর ফরজ চারটি।এগুলো হচ্ছেঃ-
১। সম্পূর্ণ মুখ মন্ডল ভালভাবে ধৌত করা অর্থাৎ, ললাটের (কপালের) উপরিভাগের চুল গজানোর স্থান হতে থুতনীর নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ভালভাবে ধৌত করা।
২। কনুইসহ দু'হাত ভালভাবে ধৌত করা।
৩। মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা।
৪। দু'পায়ের ছোট গিরাসহ ধৌত করা।
২। কনুইসহ দু'হাত ভালভাবে ধৌত করা।
৩। মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা।
৪। দু'পায়ের ছোট গিরাসহ ধৌত করা।
৩। অজুর সুন্নাতসমূহ।
অজুর সুন্নাতগুলো হচ্ছেঃ-
১। নিয়াত করা।
২। বিসমিল্লাহ বলে অজু আরম্ভ করা।
৩। হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
৪। উভয় হাত কজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
৫। মিসওয়াক করা।
৬। তিনবার কুলি করা।
৭। তিনবার নাকে পানি দেয়া।
৮। সম্পূর্ণ মুখ মন্ডল তিনবার ধৌত করা।
৯। উভয় হাত কনইসহ তিনবার ধৌত করা।
১০। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
১১। উভয় কান একবার মাসেহ করা।
১২। টাখনু পর্যন্ত উভয় পা তিনবার ধৌত করা।
১৩। পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
১। নিয়াত করা।
২। বিসমিল্লাহ বলে অজু আরম্ভ করা।
৩। হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
৪। উভয় হাত কজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
৫। মিসওয়াক করা।
৬। তিনবার কুলি করা।
৭। তিনবার নাকে পানি দেয়া।
৮। সম্পূর্ণ মুখ মন্ডল তিনবার ধৌত করা।
৯। উভয় হাত কনইসহ তিনবার ধৌত করা।
১০। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
১১। উভয় কান একবার মাসেহ করা।
১২। টাখনু পর্যন্ত উভয় পা তিনবার ধৌত করা।
১৩। পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
১৪। এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
১৫। ধারাবাহিকতা বজার রেখে অজুর কাজগুলো সম্পূর্ণ করা।
8। অজুর মুস্তাহাবসমূহ।
অজুর মুস্তাহাবগুলো হচ্ছেঃ-
১। অজু করার সময় কেবলামুখি হয়ে বসা।
২। নিচু স্থান অপেক্ষা একটু উঁচু স্থানে বসা।
৩। ডান দিক হতে অজু আরম্ভ করা।
৪। অজুতে অন্য কোন লোকের সাহায্য না নেয়া।
৫। নামাজের সময় হওয়ার পূর্বে অজু করা।
৬। অজুর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা।
৭। অজু করার সময় কথা না বলা।
৮। বাম হাত দ্বারা নাসিকা পরিস্কার করা।
৯। ঘাড় মাসেহ করা।
১০। উভয় কানের পৃষ্ঠদেশ মাসেহ করা।
১১। অজুর অঙ্গসমূহ ভালভাবে ধৌত করা।
১২। আংটি ও অন্যান্য গহনা নেড়ে-চেড়ে উক্ত স্থান ভিজিয়ে দেয়া।
১৩। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ না করে মধ্যম পরিমান পানি খরচ করা।
১৪। উভয় পা বাম হাত দ্বারা ধৌত করা।
১৫। অজুর উদ্ধৃত্ত পানি থেকে সামান্য পরিমানে পান করা।
১৬। অজুর শেষে দরূদ ও কালেমায়ে শাহাদাৎ পাঠ করা।
১। অজু করার সময় কেবলামুখি হয়ে বসা।
২। নিচু স্থান অপেক্ষা একটু উঁচু স্থানে বসা।
৩। ডান দিক হতে অজু আরম্ভ করা।
৪। অজুতে অন্য কোন লোকের সাহায্য না নেয়া।
৫। নামাজের সময় হওয়ার পূর্বে অজু করা।
৬। অজুর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা।
৭। অজু করার সময় কথা না বলা।
৮। বাম হাত দ্বারা নাসিকা পরিস্কার করা।
৯। ঘাড় মাসেহ করা।
১০। উভয় কানের পৃষ্ঠদেশ মাসেহ করা।
১১। অজুর অঙ্গসমূহ ভালভাবে ধৌত করা।
১২। আংটি ও অন্যান্য গহনা নেড়ে-চেড়ে উক্ত স্থান ভিজিয়ে দেয়া।
১৩। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি খরচ না করে মধ্যম পরিমান পানি খরচ করা।
১৪। উভয় পা বাম হাত দ্বারা ধৌত করা।
১৫। অজুর উদ্ধৃত্ত পানি থেকে সামান্য পরিমানে পান করা।
১৬। অজুর শেষে দরূদ ও কালেমায়ে শাহাদাৎ পাঠ করা।
১৭। তাহিয়াতুল অজুর নামাজ আদায় করা।
১৮। অজু শেষে যে পানি থাকে তা দাঁড়িয়ে পান করা।
৫। অজু করার নিয়াত (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ)।
নাওয়াইতু আন্ আতাওয়াজ্জাহা লিরাফয়িল হাদাছি ওয়াসিস্তবাহাতাল্ লিচ্ছালাতি ওয়া তাক্বাররুবান্ ইলাল্লাহি তায়ালা (আমি নাপাকী দুর করিবার জন্য ও নামাজের বিশুদ্ধতার এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অজুর নিয়ত করিতেছি)।
৬। অজু করার দোয়া (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ)।
বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি আলা দীনিল ইসলামি, আল ইসলামু হাজুন ওয়াল কুফরু বাতিলুন আল ইসলামু নুরুন ওয়াল কুফরু জুলমাতুন (মহান আল্লাহর নামে শুরু করিতেছি এবং দ্বীন ইসলামের জন্য তাঁহাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি। ইসলাম সত্য এবং কুফরী মিথ্যা (বাতিল)। ইসলাম জ্যোতির্ময় কুফরী অন্ধকার)।
৭। অজু করার পরের দোয়া (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ)।
আল্লাহুম্মাজ আল্নী মিনাত্তাওয়্যাবীনা ওয়াজ, আলনী মিনাল মুতাত্বাহহিরীনা ওয়াজ আলনী মিন ইবাদিকাছ-ছালিহীন। সুবহানাকা ওয়া তুবু ইলাইকা (হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীগণের মধ্যে শামিল কর এবং একজন পবিত্র বান্দা বানাও এবং সত্যবাদীগণের মধ্যে শামিল কর। তুমি অতি পবিত্র, তোমার কাছে তওবা করিতেছি)।
আরও পড়ুনঃ নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ - যে ৩ শ্রেণির ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না
৮। অজু ও তারপর সালাত আদায়ের ফজীলত।
হযরত হুমরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত উসমা (রাঃ) অজুর কাজ সেরে বললেন যে, আল্লাহর কসম আমি তোমাদেরকে একটি হাদীস শুনাব। আল্লাহর কসম যদি আল্লাহর কিতাবের মধ্যে একটি আয়াত না থাকত তাহলে আমি তোমাদেরকে কখনোই হাদীসটি শুনাতাম না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তি যখন অজু করে এবং অজুকে উত্তমরুপে আদায় করে তারপর সালাত আদায় করে তখন তার সালাত ও পূর্ববর্তী সালাতের মধ্যবর্তী সকল শুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। উরওয়া বলেন, আয়াতটি হল- "আমি যে সকল স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য, কিতাবে তা সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়ার পরেও যারা তা গোপন রাখে, আল্লাহ তাদেরকে লানত (অভিশাপ) দেন এবং তাদেরকে অভিশাপ দেয়" (সূরা-২ঃ১৫৯)। ছহীহ মুসলিম শরীফ-৩৪২।
৯। কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে অজু করার ফজীলত।
হযরত ইয়াহয়া ইবনে আয়্যব (রঃ) কুতায়বা ও ইবনে হুজর (রঃ) এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন (কাজের) কথা বলব না, যা দ্বারা আল্লাহ তা'আলা পাপরাশি দূর করে দেবেন এবং মর্যাদা উঁচু করে দেবেন? সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, হ্যাঁ, আবশ্যই ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ- তা হল, অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে অজু করা, মসজিদে আসার জন্য বেশি পদচারণা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। জেনে রাখ এটাই হল রিবাত (তথা নিজে আটকে রাখা)। ছহীহ মুসলিম শরীফ-৩৭৭।
১০। অজু করার পর দুই রাক'আত নামাজ পড়ার ফজীলত।
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম) বলিয়াছেন, "যে ব্যক্তি আমার ন্যায় এরূপ অজু করে একাগ্রচিত্তে দুই রাক'আত (সুন্নাত/নফল) তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজ পড়িবে, তাহার পূর্বের সকল গোনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হইবে।” (বুখারী-১৫৯ এবং মুসলিম-৫৩৯)।
১১। শেষ কথা - অজুর ফরজ ও সুন্নাতসহ বিস্তারিত বিবরণ।
অজু হচ্ছে পবিত্রতা অর্জনের সর্ব প্রথম একটি মাধ্যম। যার মাধ্যমে শরীর পবিত্র করা হয়। আমরা চেষ্টা করেছি এই আর্টিকেলের মধ্যে এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য। আপনারা এখান থেকে কেউ যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই লেখাটি সার্থক।
যদি আমাদের এই লেখাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের প্রিয়জনদেরকে শেয়ার করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি। মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী চলার মত তৌফিক দান করুন (আমিন)।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url