নামাজের বিবরণ – সুন্নাত এবং মুস্তাহাবসমূহ।
নামাজ হচ্ছে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ। হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যাদের নামাজের হিসাব সঠিক এবং সুন্দর হবে তারাই নাজাত পাবে এবং যাদের নামাজের হিসাব এলোমেলো বা সঠিক হবেনা তাদের পরবর্তী কার্যক্রম গুলো খুবই কঠিন হবে। নামাজ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক এবং জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন সকল নর-নারীর জন্য ফরজ বা অবশ্যই পালনীয়।
আমি আজকের আর্টিকেলে “নামাজের বিবরণ – সুন্নাত এবং মুস্তাহাবসমূহ” ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আপনার সকলে আমাদের সঙ্গে থাকবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা “নামাজের বিবরণ – সুন্নাত এবং মুস্তাহাবসমূহ” এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
সূচিপত্রঃ নামাজের বিবরণ – সুন্নাত এবং মুস্তাহাবসমূহ।
- ভূমিকা।
- নামাজের সুন্নাতসমূহ।
- নামাজের মুস্তাহাবসমূহ।
- উপসংহারঃ নামাজের বিবরণ – সুন্নাত এবং মুস্তাহাবসমূহ।
নামাজের সুন্নাতগুলো হচ্ছেঃ-
১। নামাজের সময় হলে নামাজের জন্য আযান দেয়া।
২। তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় পুরুষের দু'হাত কান পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোকের দু'হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো।
৩। ইমাম হলে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা।
আর পড়ুনঃ নামাজের বিবরণ – ফরজ এবং ওয়াজিবসমূহ
৪। মুক্তাদি হলে নিরবে তাকবীর বলা।
৫। হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলিসমূহ আলাদা করে রাখা।
৬। তাকবীরে তাহরীমার পর পুরুষগণ নাভীর বরাবর এবং মহিলাগণ বুকের উপর বাম হাতের উপর ডান হাত বাঁধা।
৭। সানা পাঠ করা।
৮। সানা পড়ে তাআ'যুজ (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম) ও তাসমিয়া (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম) পাঠ করা।
৯। রুকুর মধ্যে মাথা পিঠ বরাবর রাখা।
১০। রুকু ও সিজদায় বেজোড় অর্থাৎ তিন/পাঁচ/সাতবার করে তাসবীহ পাঠ করা।
১১। সিজদার সময় হাত ও পায়ের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখা।
১২। নামাজের মধ্যে ওঠা বসার সময় তাকবীর অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলা।
১৩। সিজদার সময় দু'হাতের মধ্যখানে মাথা রাখা।
১৪। পুরুষের বেলায় সিজদার সময় জমিন হতে দু'হাতের কনুই পৃথক অর্থাৎ উঁচু করে রাখা।
১৫। মহিলাদের জন্য ছড়িয়ে দেয়া।
১৬। ফরজ নামাজের সময় ইকামত বলা।
১৭। শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দরুদ শরীফ পাঠ করা।
১৮। রুকু করার সময় দু'হাত হাঁটুর উপর রাখা।
আর পড়ুনঃ পিরিয়ডের কতদিন পর রোজা নামাজ, সহবাস করবেন - হায়েজ অবস্থায় আমল
১৯। রুকু অবস্থায় থাকাকালীন পুরুষেরা হাতের আঙ্গুলিগুলো পৃথক পৃথক রাখা এবং মেয়ে লোকেরা তা মিলিয়ে রাখবে।
২০। রুকু থেকে মাথা উত্তোলনের সময় সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলা।
২১। দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাম হামদ বলা। ২২। সূরা ফাতিহা শেষ হওয়ার পর চুপে চুপে আমিন বলা।
২৩। সালাম বলার সময়ে ডানে বামে মুখ ফেরানো।
২৪। শেষ বৈঠকে দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পাঠ করা।
২৫। তাশাহুদ পড়ার সময় বসার কালে পুরুষের ডান পা খাড়া করে ও বাম পা বিছিয়ে এবং স্ত্রীলোকের বেলায় উভয় পা বিছিয়ে বসা।
২৬। তাশাহুদ পাঠ করার মাঝে (আশহাদু আল্লা ইলাহা) বলার সময় ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল উপরে উঠানো।
২৭। সিজদার সময় উভয় হাতের আঙ্গুলগুলি কিবলামুখী করে রাখা।
২৮। সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে নাক, তারপর কপাল লাগাতে হবে।
২৯। সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে কপাল, এরপর নাক, তারপর হাত, অতঃপর হাঁটু উঠানো।
৩০। নামাজ সমাপনান্তে মুনাজাত করা।
৩১। ইমাম নামাজে কোন ব্যাপারে ভুল করলে মুক্তাদি তাকবীর বলে লোকমা দেয়া।
নামাজের মুস্তাহাবসমূহ।
নামাজের মুস্তাহাবগুলো হচ্ছেঃ-
১। সোজাভাবে দাঁড়ানো।
২। তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত আস্তিন হতে বের করে তাহরীমা বাঁধা।
৩। নামাজ অবস্থায় হাই ও কাঁশি আসলে যথাসাধ্য চেপে রাখার চেষ্টা করা।
আর পড়ুনঃ ছোট সুরা সমূহ - নামাজে কোন সূরার পর কোন সূরা পড়তে হবে
৪। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে রাখা অর্থাৎ কিরায়াত পাঠকালে-সিজদার স্থানে, রুকুর সময়-দু'পায়ের পাতার উপরে, সিজদার সময়- নাকের অগ্রভাগে, বৈঠক অবস্থায়-কোলের উপর, সালাম ফেরাবার সময়-কাঁধের উপরে দৃষ্টি রাখবে।
৫। রুকুর সময় মাথা ও পিঠ কোমর বরাবর রাখা।
৬। দাঁড়াবার সময় দু'পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল পরিমান ফাঁকা রাখা। তবে মহিলাগণ উভয় পাকে মিলিত অবস্থায় রাখবে।
৭। সিজদার সময় হাত ও পায়ের আঙ্গুলিগুলো কিবলামুখি রাখা।
৮। হাইয়্যাল আ'লাচ্ছালাহ বলার পর নামাজের জন্য উঠে দাঁড়ানো।
৯। ক্বাদ ক্বামাতিছ ছালাহ বলার পর ইমাম নামাজ আরম্ভ করবে।
১০। নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা।
১১। তাশাহুদের বৈঠকে থাকাকালীন উভয় হাত দু'হাঁটুর উপর রাখা।
১২। প্রথম রাকায়াতে বড় সূরা এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ছোট সূরা পাঠ করা।
১৩। সিজদার সময় পেটকে রান এবং উরু থেকে পৃথক রাখা।
১৪। সিজদার সময় হাতের সমস্ত আঙ্গুলগুলো মিলিত অবস্থায় মাটিতে রাখা।
১৫। সিজদা করার সময়-প্রথমে দু'হাঁটু, তারপর দু'হাত অতঃপর নাক এবং তারপর কপাল ভূমিতে স্থাপন করবে। সিজদা থেকে উঠার সময় সম্পূর্ণ বিপরীত করবে।
১৬। সিজদার সময় উভয় হাতে এমনভাবে মাটিতে রাখতে হবে, যেন উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী দু'কান বরাবর থাকে। পায়ের জায়গা থেকে আড়াই হতে পৌঁণে তিন হাত দূরত্বে মাথা মাটিতে রেখে সিজদা করা।
১৭। তারতীলের সাথে অর্থাৎ ধীর গতিতে স্পষ্টভাবে সঠিক উচ্চারণে আয়াতে কারীমাগুলো পাঠ করা।
১৮। দরূদ শরীফ পাঠ করার পর দোয়ায়ে মাসুরা পাঠ করা।
১৯। তারতীবমত কিরায়াত পাঠ করা।
২০। রুকু ও সিজদার সয়ম ৩/৫/৭/৯ বার তাসবীহ পাঠ করা।
উপসংহারঃ নামাজের বিবরণ – সুন্নাত এবং মুস্তাহাবসমূহ।
সম্মানিত পাঠাগণ! আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত আলোচনা করেছি। আশা করছি সকলে আজকের “নামাজের বিবরণ – সুন্নাত এবং মুস্তাহাবসমূহ” আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হয়েছেন। যদি কেউ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের প্রিয়জনদের কাছে শেয়ার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার এবং পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক চলারমত জন্য তৌফিক দান করেন। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলের সহায় হোন (আমীন)।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url