গোসলের বিবরণ - গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়ালা

গোসল একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে পুরো শরীর ধোয়া। শরিয়তের পরিভাষায়, পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দিয়ে পুরো শরীর ধোয়াকে গোসল বলা হয়। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় হচ্ছে “গোসলের বিবরণ - গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়ালা।” 



আপনি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন গোসলের ফরজসমূহ, সুন্নাতসমূহ, মুস্তাহাব, গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়ালা এবং গোসলের নিয়াত সম্পর্কে। আমি ধারাবাহিক ভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করছি। আশা করছি সঙ্ঘে থাকবেন।

সূচিপত্র। গোসলের বিবরণ - গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়ালা।

  • ভূমিকা। 
  • গোসলের ফরজসমূহ। 
  • গোসলের সুন্নাতসমূহ। 
  • গোসলের মুস্তাহাব।
  • গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়ালা। 
  • গোসলের নিয়াত।
  • সর্বশেষ মন্তব্য। গোসলের বিবরণ - গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়ালা।

২। গোসলের ফরজসমূহ। 

গোসলের ফরজ তিনটি। এগুলো হচ্ছেঃ- 

১। গড়গড়ার সাথে কুলি করা (রোযাদার হলে গড়গড়া করতে হবে না। কারণ, তাতে গলার মধ্যে পানি প্রবেশ করে রোযা ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা থাকে)। 

আর পড়ুনঃ তায়াম্মুম কি - এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন।

২। দু'নাকের নরম গোশত পর্যন্ত পানি পৌঁছে দেয়া (এটাও রোযাদার হলে করবে না। এতেও রোযা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে)। 

৩। সমস্ত শরীর ভালভাবে ধৌত করা (যদি পুকুর, খাল কিংবা নদীতে গোসল করে, তবে তাতে সরাসরি নেমে শরীর মর্দন করবে। আর, ওপরে বালতি বা কলসের পানি দ্বারা গোসল করলে ভালভাবে গায়ে পানি ঢালতে হবে। মনে রাখতে হবে, এর যে কোন একটি বাদ পড়লে যেমন কুলি করা, নাকে পানি দেয়া এবং সমস্ত শরীরের মধ্যে একটি পশম বা তার সমপরিমান স্থান শুকনা থাকলে ফরয গোসল হবেনা)।


৩। গোসলের সুন্নাতসমূহ। 

গোসলের সুন্নাত পাঁচটি। এগুলো হচ্ছেঃ- ১। দু'হাত কজি পর্যন্ত ধৌত করা। 

২। গোসল করার পূর্বে নারী হোক অথবা পুরুষ হোক, তাদের লজ্জাস্থান ভালভাবে ধৌত করে নেয়া। 

৩। শরীরের অন্যত্র কোন প্রকার নাপাক লেগে থাকলে তা পূর্বেই ধৌত করে নেয়া। 

৪। পা ধৌত করা ছাড়া অবিকল নামাজের অজুর ন্যায় অজু করে নেয়া। 

৫। সমস্ত শরীরে ভালভাবে পানি বইয়ে দেয়া। কলস বা বালতির পানি দ্বারা দাঁড়িয়ে গোসল করলে গায়ে তিনবার পানি দেয়ার পর উক্ত স্থান হতে সরে পা তিনবার ধৌত করতে হবে। আর পুকুর কিংবা নদীতে গোসল করলে গায়ে তিনবার পানি দেয়ার বদলে তিনটি ডুব দিলেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।


৪। গোসলের মুস্তাহাব।

গোসলের মুস্তাহাব একটি। এটি হচ্ছেঃ- গোসলের সময় শরীর ভালভাবে মর্দন করা। সেটা দুটো কারণেঃ- 

১। ফরজ গোসল হলে কোন স্থান চুল পর্যন্ত শুকনো থাকার সন্দেহ থাকবে না। 

২। শরীরে ময়লা থাকলে তা পরিস্কার হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাকে পছন্দ করেন। উল্লেখ্য যে, গোসলের নিয়মের মধ্যে কোন ওয়াজিব নেই।


৫। গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়ালা। 

গোসল সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসায়ালা হচ্ছেঃ- 

১। কোন মহিলার ফরয গোসল করার সময় চুল যদি খোলা এবং লম্বাভাবে ঝোলানো থাকে, তাহলে গোসলের সময় সব চুল ভেজানো ফরজ। কিন্তু শক্ত করে খোঁপা বাঁধা থাকলে খোঁপা খুলে তা ভেজানের প্রয়োজন হয় না। শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌছালেই চলবে। 

২। মহিলাদের শরীরে বা নাকে গহনা থাকলে তা নেড়ে চেড়ে ভালভাবে ধৌত করতে হবে। এর ভিতরে কোন স্থান শুকনো থাকলে তাতে ফরজ গোসল আদায় হবে না। 

আর পড়ুনঃ ওযুর ফরজ কয়টি - ওযুর ফরজ ও সুন্নাত কয়টি ভিডিওসহ দেখুন

৩। পুরুষদের মাথায় বেশি চুল কিংবা অবৈধভাবে লম্বা চুল, খোঁপা বা বেনী থাকলে তা খুলে ভালভাবে ধৌত করতে হবে। অন্যাথায় তার ফরজ গোসল আদায় হবেনা। 

৪। ফরজ গোসল করতে কেবলার দিকে ফিরে করা উচিত নয়। 

৫। যদি কোন স্ত্রীলোক খাহেশের সময় তার আঙ্গুলি অথবা ঐরুপ কোন বস্তু তার লজ্জাস্থানে প্রবেশ করায়, তবে বীর্য বের হোক বা না হোক, তার উপর গোসল ফরজ হবে। 

৬। কোন অপ্রাপ্ত বরস্ক বালিকার সাথে সঙ্গম করলেও গোসল ফরজ হবে। 

৭। দাঁতের ভেতর সুপারির কণা আটকে থাকলে ফরজ গোসল হবেনা। কেননা, এ অবস্থায় দাঁতের গোড়ায় পানি প্রবেশ করতে পারেনা। 

৮। মুর্দাকে গোসল দিয়ে নিজে গোসল করা মোস্তাহাব। 

৯। নাপাক অবস্থায় আয়াতে সেজদা শুনলে তার উপর সেজদা ওয়াজেব হবেনা। 

১০। অজু ও তায়াম্মুম করে কপালের পানি ও ধুলা-বালি মুছে ফেলা মাকরূহ। কেননা অজু, তায়াম্মুম ও নামাজের পর যতক্ষণ পর্যন্ত পানি ও ধুলা-বালি থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার রহমত তার উপর নাজিল হতে থাকে।


৬। গোসলের নিয়াত।

নাওয়াইতুল গুসলা লিরাফই'ল জানাবাতি (আমি নাপাকি দূর করার জন্য গোসলের নিয়াত করছি)।

৭। সর্বশেষ মন্তব্য। গোসলের বিবরণ - গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়ালা। 

গোসলের মাধ্যমে শরীর পবিত্র, ঠান্ডা এবং পরিষ্কার হয়। আমরা “গোসলের বিবরণ - গোসল সম্পর্কে কতিপয় মাসায়ালা।” উপরোক্তভাবে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। আশা করি সকলেই উপকৃত হয়েছেন এবং বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আমাদের এই ক্ষুদ্র পরিসরে লেখাটি সামান্য পরিমাণ ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের প্রিয়জনেরজ নিকট শেয়ার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

আর পড়ুনঃ চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলের সহায় হোন ও আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করে দিন (আমিন)।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url