সাইবার অপরাধের ধরণ

বর্তমানে সাইবার অপরাধের ধরণ বিভিন্ন রকমের। প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের উন্নতির ফলে মানুষ ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আমাদের সাইবার অপরাধের ধরণ জেনে রাখা দরকার। সাইবার অপরাধের ধরণ গুলো জানা থাকলে আমরা সাইবার অপরাধ থেকে দূরে থাকতে পারবো।


বর্তমানে যেহেতু প্রায় সবকিছুই অনলাইন ভিত্তিক হয়েছে সেহেতু অনলাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ এবং সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে আমাদের ধারণা রাখতে হবে।

সূচিপত্রঃ- সাইবার অপরাধের ধরণ

ভূমিকাঃ

সাইবার অপরাধ মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে সকল অপরাধ করা হয়। সাইবার অপরাধ বলতে আমরা মূলত হ্যাকিং কে বুঝে থাকি। কিন্তু শুধু হ্যাকিংই সাইবার অপরাধ নয়। সাইবার অপরাধের ধরণ অনেক রকম হতে পারে। শিশু পর্নোগ্রাফি থেকে শুরু করে ব্যাংকে সংরক্ষিত গ্রাহকদের তথ্য কিংবা কোন ব্যক্তির পার্সোনাল তথ্য বা পার্সোনাল ছবি ইত্যাদি ব্যবহার করে কাউকে ব্ল্যাকমেল করাও সাইবার অপরাধ।

সাইবার অপরাধ কিঃ

কম্পিউটার এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্কিত সম্পর্কিত অপরাধ গুলো হল সাইবার অপরাধ বা কম্পিউটার অপরাধ।

সাইবার অপরাধ কাকে বলেঃ

সাইবার অপরাধ বলতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বা ভার্চুয়ালি যে অপরাধগুলো করা হয় সেগুলোকেই সাইবার অপরাধ বলে। অন্যভাবে বললে কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল ধরনের অনৈতিক কাজকে সাইবার অপরাধ বলা হয়।


সাইবার অপরাধ মূলত সহজে আয় করার উদ্দেশ্যে কিংবা কারো ব্যক্তিগত তথ্য বা সরকারি তথ্য চুরি করার ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়ে থাকে। সাইবার অপরাধের কারণ যাই হোক না কেন বর্তমানে সাইবার অপরাধের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সাইবার অপরাধের ধরণঃ

বর্তমানে যেমন সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে সাইবার  অপরাধীরাও দিন দিন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। নিম্নে সাইবার অপরাধের ধরণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
Hacking কিঃ Hacking শব্দের অর্থ হলো অন্যায় ভাবে প্রবেশ করা। যখন কোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অন্য কারো কম্পিউটার বা ওয়েবসাইটে মালিকের অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করে তথ্য চুরি, তথ্যের এডিট ইত্যাদি কাজ করে তখন তাকে হ্যাকিং বলে। অন্যান্য সাইবার অপরাধ গুলোর মধ্যে হ্যাকিং এর পরিমাণ সবচাইতে বেশি। যদিও সব ধরনের হ্যাকাররা অপরাধী নয়। সাধারণত হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররা কোন ধরনের ক্ষতি করে না। ব্ল্যাকহেড হ্যাকার থেকে কোন ওয়েবসাইট বা কোম্পানির তথ্যকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে কোম্পানির মালিকরা হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার দের ব্যবহার করে থাকেন।
হ্যাকাররা প্রধানত Malware, Viruses, Worms, এবং Ransomware ইত্যাদি ব্যবহার করে অথবা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস গুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের malicious software ঢোকাতে পারে।

Cryptojacking কিঃ Cryptojacking অথবা malicious cryptomining হল সাইবার অপরাধের ধরণ গুলোর মধ্যে অন্যতম। এক্ষেত্রে অপরাধীরা ভিকটিমের সিস্টেমে তাদের অজান্তেই cryptocurrency mining software load লোড করে থাকেন। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা বুঝতেই পারে না যে তাদের ডিভাইসে cryptocurrency mining সফটওয়্যারটি চলমান রয়েছে।

Cyberextortion কিঃ সাইবার অপরাধের ধরণ গুলোর মধ্যে Cyberextortion বা ransomware attack বেশ মারাত্মক। র‍্যানসাম শব্দের অর্থ হলো মুক্তিপণ। তার মানে এই ধরনের অপরাধীরা ভিকটিমের ডিভাইসের সিস্টেমে অথবা কোন অর্গানাইজেশন এর সিস্টেমকে হ্যাক করে থাকে। হ্যাক করার পরে অপরাধীরা সিস্টেমের সকল তথ্যগুলোকে ইনক্রিটেড করে রাখে।


কোম্পানির মালিক বা ভিকটিম যখন এই সকল তথ্যকে ডিক্রিপ্ট বা এর পূর্বের অবস্থায় ফেরত নিতে চায় এই কাজটি করার জন্য হ্যাকাররা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দাবি করে থাকে। অর্থ প্রদানের ফলে হ্যাকাররা সকল তথ্য ফেরত দিয়ে থাকে। এই পদ্ধতিটিকে Cyberextortion বা ransomware attack বলা হয়।

Credit card fraud কিঃ Credit card fraud হল সাইবার অপরাধের ধরণ গুলোর মধ্যে অন্যতম। এক্ষেত্রে হ্যাকাররা ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের সিস্টেমে প্রবেশ করে তাদের ব্যাঙ্কিং কিংবা ক্রেডিট কার্ড এর তথ্য চুরি করে থাকে। এবং তারা এই চুরি করা তথ্যগুলো ছোটখাটো সাইবার অপরাধীদের কাছে বিক্রি করে থাকে।

Identity theft কিঃ যখন কোন সাইবার অপরাধী একটি ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য বা পরিচয় যেমন, নাম, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, আইডেন্টিফিকেশন, এড্রেস, ব্যাংকিং ইনফরমেশন ইত্যাদি তথ্য মালিকের অনুমতি ছাড়াই চুরি করে থাকে এবং নিজের স্বার্থ হাসিল করে তখন তাকে আইডেন্টিফিকেশন সাইবার অপরাধ বলা হয়। 

হ্যাকাররা প্রধানত চুরি করা তথ্যগুলো ডিপ ওয়েব বা ডার্ক ওয়েব এর মার্কেটপ্লেস গুলোতে কেনাবেচা করে থাকে। তথ্য গুলোর মধ্যে রয়েছে আইডেন্টিটি ইনফরমেশন, ফাইন্যান্সিয়াল ইনফর্মেশন, ওয়েবমেইল, পার্সোনাল হেলথ ইনফরমেশন, পার্সোনাল অডিও বা ভিডিও ইত্যাদি।

Cyberespionage কিঃ এই ধরনের সাইবার অপরাধীরা সরকার অথবা কোন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম বা নেটওয়ার্কের অন্যায় ভাবে প্রবেশ করে। প্রবেশের পরে তারা গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্যগুলো চুরি করে। এ ধরনের তথ্য চুরি করার পেছনে তাদের স্বার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে-অর্থনৈতিক লাভ, অথবা বিচারগত কোন সমস্যা।


অথবা তারা গোপন তথ্যগুলো পরিবর্তন কিংবা সংশোধন অথবা ধ্বংস করতে পারে। এই ধরনের অপরাধীরা কোন সরকার অথবা অন্য সংস্থার সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক এর মধ্যে প্রবেশ করে। এবং সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য চুরি করে থাকে। এই সকল Attacks এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

Phishing কিঃ প্রতারণামূলক ইমেইল বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি করাকে ফিশিং বলে।

ফিসিং এর জন্য অপরাধীরা প্রধানত স্প্যাম ইমেইল ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে সাইবার অপরাধীরা টার্গেটেড ব্যক্তি কে আকর্ষণীয় ইমেল পাঠিয়ে থাকেন। এবং ওই ব্যবহারকারী তার সিকিউরিটি বা নিরাপত্তার কথা ভুলে ওই টাইম লিংকে ক্লিক করার ফলে তার ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ হ্যাকারদের অধীনে চলে যায়।

Software piracy কিঃ সাইবার অপরাধের ধরণ গুলোর মধ্যে সফটওয়্যার পাইরেসি অন্যতম। এক্ষেত্রে কপিরাইট যুক্ত কোন সফটওয়্যারকে স্বত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা কিংবা বিক্রি করাকে সফটওয়্যার পাইরেসি বলে। এ ধরনের কার্যকলাপ ও সাইবার অপরাধের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও সফটওয়্যার পাইরেসির মধ্যে রয়েছে কপিরাইট লংঘন, ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন এবং পেটেন্ট এর মত অপরাধ।

স্প্যাম কিঃ কোন যন্ত্রের মাধ্যমে তৈরি অপ্রয়োজনীয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং আপত্তিকর ইমেল গুলোকে বোঝানো হয়। এক্ষেত্রে অপরাধীরা টার্গেটেট ব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত মেইল পাঠাতে থাকে। এ ধরনের অপরাধীর হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেকের অর্থ এবং সময় নষ্ট হয়।

আপত্তিকর তথ্য ফাঁসঃ অপরাধীরা এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি সম্পর্কে ভুল কিংবা আপত্তিকর তথ্য কিংবা ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশ করে থাকে। আপত্তিকর তথ্য ফাঁস করার জন্য বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছুদিনের জন্য ফেইসবুক এবং ইউটিউবকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সাইবার অপরাধের ধরণ গুলোর মধ্যে আপত্তিকর তথ্য ফাঁস তুলনামূলক সহজ।

প্রতারণা কিঃ সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদেরকে প্রতারণা করার জন্য অপরাধীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতে থাকে। এক্ষেত্রে সাইবার অপরাধীরা ভুল পরিচয় এবং মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।

হুমকি প্রদর্শণ কিঃ সাইবার অপরাধের ধরণ গুলোর মধ্যে হুমকি প্রদর্শন অন্যতম। বর্তমানে কাউকে হুমকি প্রদর্শন করা কিংবা ভয়-ভীতি দেখানো সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ইন্টারনেট কিংবা ইমেইল অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।


বিভিন্নভাবে মানুষদেরকে হুমকি প্রদর্শন করে তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। যেহেতু ইন্টারনেটে নিজের পরিচয় গোপন করে অথবা মুখোমুখি দেখা না করে অপরাধ করার সুযোগ রয়ে যায়। তাই অপরাধীরা এই পন্থা অবলম্বন করে খুব সহজেই আরেকজনকে হুমকি বা ভয় বিধি দেখাতে পারে।

উপসংহারঃ

বর্তমানে ইন্টারনেট জগতে সাইবার অপরাধীদের সংখ্যা বাড়ছে। এক্ষেত্রে নিজেকে এবং নিজের সফল তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে সাইবার অপরাধের ধরণ গুলো জানতে হবে। আজকে আমরা আমাদের এই পোস্টে সাইবার অপরাধের ধরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের যদি উপকার হয় কিংবা আপনারা যদি নতুন তথ্য জেনে থাকেন তাহলে বন্ধুবান্ধব এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url