দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ - দাঁত ফাঁকা হলে করণীয়

দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ এর ফলে আপনি দাঁতের সৌন্দর্যের সমস্যায় ভুগতে পারেন। এই পোস্টে দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ গুলো তুলে ধরা হবে। দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ এর ফলে মুখের হাসি অসুন্দর হয় বলে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।


যাদের পারিবারিকভাবে দাঁতের কোন ধরনের সমস্যা থাকে, তাদের দাঁত ফাঁকা হয়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন বদ অভ্যাসের কারণে দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা অংশ সৃষ্টি হয়। যদি আপনি দাঁত ফাঁকার বিষয়ে অসচেতন থাকেন, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই দাঁতের ফাঁকা অনেক বড় হয় যা দেখতে খুবই বেমানান লাগতে পারে।

পেইজ সূচিপত্র

দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা হলে কি হয়

যেহেতু দাঁত একজন মানুষের সবচেয়ে বড় অলংকার। কারণ মুখের সৌন্দর্য দাঁতের মাধ্যমে ফুটে উঠে। আপনি যখন হাসি দিয়ে সুন্দর করে নিজের আত্মভঙ্গিমা প্রকাশ করতে চান, ঠিক তখনই দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ না জানার ফলে এই সৌন্দর্যের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটে থাকে।

বর্তমান সময়ে দাঁত ফাঁকা হলে করণীয় না জানার ফলে দাঁতের মাঝখানের ফাঁকা সমস্যাটি খুবই নিয়মিত একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনাকে প্রথমে দাঁত ফাকা হয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হবে। বাচ্চাদের অনেক সময় দাঁত ফাঁকা উঠার কারনে পিতা মাতারা খুবই দুশ্চিন্তায় থাকেন।


অনেক সময় দাঁতের মাড়ি ব্যথা করতে থাকে। যদি কোন চোট বা আঘাতের কারণে দাঁত ফাঁকা হয়ে যায়, তাহলে মাড়ির ব্যথাও বেড়ে যেতে পারে। বাচ্চাদের বিশেষ করে তেরো বছরের পর থেকে স্থায়ীভাবে একজন ডেন্টিস্ট দেখিয়ে দাঁতে ফাঁকা এর চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।

ফাঁকা যদি খুবই অল্প পরিমাণে থাকে, কসমেটিক ফিলিং করতে পারে। যদি এর মাধ্যমেও কোন সমাধান করা না যায়, তাহলে বিভিন্ন ক্রাউন পদ্ধতি এর মাধ্যমে অর্থাৎ দাঁত যখন বেশি ফাঁকা থাকে। সেটিকে অর্থোডন্টিক চিকিৎসা দিয়ে আর্টিফিশিয়াল ধরনের দাঁত লাগিয়ে দিতে পারে। যা আপনার মুখের সৌন্দর্য ফিরে আসতে পারে।

দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ

দাঁত কখনোই নিজেই ফাঁকা হয়ে যায় না। এই ফাঁকা হওয়ার পিছনেও অনেক কারণ বিদ্যমান রয়েছে। বিভিন্নভাবেই দুই দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেই সকল বিষয় নিয়ে দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ রয়েছে চলুন সেই সম্পর্কে জেনে আসি।

১। দাঁত ফাঁকা হলে করণীয় না জানলে আপনার অনেক ধরনের রোগ থাকতে পারে। কিন্তু যদি কখনো এমন হয় যে, হঠাৎ করেই আপনি হাড়জনিত কোন রোগে ভুগছেন।

২। অর্থাৎ হাড়জনিত রোগের প্রভাবে আপনার দাঁত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। দাঁতের ক্ষয় বেড়ে যাওয়ার ফলে আপনার দাঁত ফাঁকা হয়ে যেতে পারে।

৩। যদি কারো পূর্বপুরুষের দাঁত ফাঁকা থাকার মত সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের দাঁত ফাঁকা হয়ে যেতে পারে। এটি খুবই প্রচলিত একটি বিষয়।

৪। দাঁতের আকৃতি যদি ছোট উঠে তাহলে দাঁত ফাঁকা হবে। কারণ দাঁতের মাড়ি পর্যাপ্ত পূরণ না হওয়ার কারণে দাঁত ছোট হয় বলে দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা অংশ রয়ে যায়।

৫। আর সেই ফাঁকা অংশের কারণে দাঁত ফাঁকা হয়। কোন সমস্যায় যদি দাঁত আপনি উপড়িয়ে ফেলে দিয়ে থাকেন, তাহলে দাঁত ফাঁকা হলে করণীয় না জানলে দুই দাঁতের মাঝখানে এক ধরনের ফাঁকা অংশের সৃষ্টি হতে পারে।

৬। হাড় জনিত সমস্যা বা অন্যান্য রোগের কারণেও আপনার দাঁত ক্ষয় হয়ে দাঁত ফাঁকা হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে দিনে তিনের অধিক দাঁত ব্রাশ করার কারণে আপনার দাঁত থেকে ক্যালসিয়াম ক্ষয় হতে পারে। যার ফলে দাঁত ফাঁকা হয়ে যায়।

৭। দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ জেনে এই সময় যদি আপনি শক্ত হাড্ডি খুব জোর দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করেন। অথবা শক্ত কোন কিছু কামড়িয়ে ধরে রাখেন, তাহলে আপনার দাঁত গুলো ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যেতে পারে।

৮। আপনার যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য কোন ধরনের বদ অভ্যাস থাকে তাহলে দাঁত ফাঁকা হতে পারে। যেমন আপনি যদি আপনার জিহ্বা দিয়ে দাঁত সবসময় ধাক্কা দিতে থাকেন তাহলে দাঁত ফাঁকা হবে।

৯। অনেক ক্ষেত্রেই আপনি খেয়াল করলে দেখবেন ছোট বাচ্চারা আঙুল চোষতে অনেক পছন্দ করে। এই অবস্থায় তাদের দাঁত ফাঁকা উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা কেন হয়

যেকোন কারো জন্মগত কোন ত্রুটির কারণেও দাঁত ফাঁকা হয়ে উঠতে পারে। কারণ দাঁত কিভাবে ফাঁকা হয়ে উঠবে তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা হওয়ার সমস্যা যেকোন কারণেই হতে পারে। তবে একটি কমন বিষয় হচ্ছে যে জেনেটিক কারণে দাঁত ফাঁকা সমস্যা হয়।

যা জন্মের পরই নতুন প্রজন্ম এই সমস্যার শিকার হয়। যদি কোনো কারণে দাঁতের আকৃতি ছোট হয়ে যায়, তাহলে দাঁত ফাঁকা হতে পারে। ছোট দাঁত হওয়ার কারণে দাঁতের মাঝের অংশ ফাঁকা থেকে যায়। আপনার চোয়াল যদি একটু বেশি বড় আকৃতির হয়ে যায়, তাহলে একটু ফাঁকা করে উঠতে পারে।


দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে না জানার ফলে দুই দাঁতের মাঝখানে অনেক বড় করে ফাঁকা অংশ দেখা যেতে পারে। দাঁতের কোন ধরনের সমস্যার কারণে যদি আপনি দাঁত উপড়িয়ে ফেলেন, তাহলে দুই দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা অংশের সৃষ্টি হবে।

দাঁত ফাঁকা হলে করণীয় বিষয় না জানলে দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত ব্রাশ করার কারণে ক্যালসিয়াম ক্ষয় হয়ে দাঁতের মধ্যে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও দাঁত খিলাল ও শক্ত কিছু খাওয়ার কারণে আপনি দাঁতে চোট পেলে দাত ফাঁকা হয়ে যেতে পারে।

দাঁত ফাঁকা সমান করার উপায়

যেহেতু দাঁত আপনার মুখে সৌন্দর্যের একটি অংশ। তাই দাঁত ফাকা সমান করার জন্য আপনাকে সচেতন হতে হবে। যদি আপনি দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ এর বিষয়ে অবহেলা করেন, তাহলে এই সমস্যা ধীরে ধীরে আরো বাড়তে পারে। সেই কারণে দাঁত ফাঁকা সমান করার উপায় গুলো যেমন,

  • দাঁত ফাঁকা সমান করার জন্য আপনি ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে পারেন।
  • এই ডেন্টাল ফ্লস আপনাকে দাঁতে লেগে থাকা খাবার পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
  • নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রেখে দাঁত ক্ষয় হওয়ার সমস্যাকে দূরীভূত করুন।
  • পোরসেলিন ক্যাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে দাঁতের ফাঁকা দূর করুন।
  • দাঁত ফাঁকা হলে করণীয় জেনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অর্থোডন্টিক পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
  • ব্রেসেস নামক এক ধরনের বন্ধনী ব্যবহার করতে পারেন।
  • এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে পঞ্চাশ থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্তও খরচ হতে পারে।

দাঁত ফাঁকা থাকলে করণীয় কি

দাঁত ফাকা থাকলে অনেকেই স্বাধীনভাবে হাসতে পারে না। সব সময় কথা বলার সময় মুখে হাত দিয়ে ঢেকে কথা বলার চেষ্টা করে। যার ফলে স্বাধীনভাবে হাসতে না পারার কারণে মানসিকভাবে খুব বেশি বিপর্যস্ত হয়ে যায়। এই অবস্থায় দাঁত ফাঁকা হলে করণীয় না জানলে তার প্রতিভা বিকাশ ভালোভাবে হয় না।

দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ জেনে যদি আপনি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তাহলে খুব সহজেই এই সমস্যাকে দূরীভূত করা যায়। দাঁত ফাঁকা থাকলে করণীয় বিষয়ের মধ্যে প্রথমেই আপনি একজন অর্থোডন্টিক চিকিৎসা করাবেন। যার মাধ্যমে দাঁত ফাঁকা সমস্যা দূরীভূত হবে।


এছাড়াও লাইট কিউর কম্পোজিট ফিলিং এর মাধ্যমে পোরসেলিন ক্যাপ দিয়ে করা হয়ে থাকে। আপনি চাইলে এই অবস্থায় দাঁতের বড় ফাঁকা বন্ধ করতে ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্ট করতে পারেন। ফাঁকা দাঁতের চিকিৎসা করার জন্য অনেকে রাবার দিয়ে দুই দাঁতের মাঝখানটা একসাথে করে বেঁধে রাখে টাইট করে। 

যার ফলে দাঁতের ফাঁকা অংশ দিয়ে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে শুরু করে। যদিও এই প্রক্রিয়াটি খুব বেশি কার্যকর নয়। তারপরেও যদি কেউ নিয়মিত ব্যবহার করে, তাহলে ভালো ফলাফল পেতে পারে। এছাড়াও আধুনিক পদ্ধতি কম্পোজিট বন্ডিং মেটেরিয়ালস এর মাধ্যমে দ্রুত দাঁতের ফাঁকা অংশ দূর করা যায়।

কোন চিকিৎসায় দাঁত ফাকা ভালো হয়

দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করে আপনাকে তাদের চিকিৎসার জন্য তৈরি হতে হবে। কারণ দুই দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা থাকলে দেখতে খুব বেশি সুন্দর দেখা যায় না। দাঁত ফাঁকা হলে করণীয় জেনে চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি এই সমস্যা দূর করতে পারেন যেমন, 
  • প্রথমত আপনি চাইলে অর্থোডন্টিক পদ্ধতি এর মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।
  • এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হলে গেলে আপনার ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। 
  • সেই জায়গায় আপনি যদি পোরসেলিন ক্যাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে দাঁতের চিকিৎসা শুরু করেন। তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই দাঁত ফাঁকা ভালো করা সম্ভব। 
  • পাশাপাশি ক্রাউন করেও অনেকে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই চিকিৎসা করে ভালো হচ্ছে। 
  • আপনি চাইলে বর্তমানে বাজারে যেই আধুনিক কম্পোজিট বন্ডিং মেটেরিয়ালস পাওয়া যায়। 
  • সেটির মাধ্যমে ডাক্তারের সাহায্যে ফাঁকা দাঁতের চিকিৎসা করতে পারেন।
  • এই অবস্থায় আপনি শক্ত কোন ধরনের খাবার খেতে পারবেন না। 
  • দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ এর ফলে আপনার বন্ডিং হালকা চোটেই ভেঙে যেতে পারে। 
  • দাঁতের ফাঁকা অত্যাধিক পরিমাণে বড় হয়ে গেলে ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্ট করে ফাঁকা বন্ধ করতে পারেন। 
  • এই অবস্থায় দাঁত ফাঁকা হলে করণীয় হল ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাবেন।

শেষকথা

এই আর্টিকেল থেকে দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ, দাঁত ফাঁকা হলে করণীয়, দাঁত ফাঁকা সমান করার উপায় ও আরো অন্যান্য বিষয় নিয়ে আশা করছি জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করে পাশেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url