গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। কারণ একজন গর্ভবতী খুবই সতর্কতার সাথে এবং সঠিক খাদ্য তালিকা মেনে চলতে হয়। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে জানা থাকলে খুব সহজেই আমরা সঠিক পুষ্টিকর খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি। আজকেরে আর্টিকেলে গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আপনি যদি গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। তাহলে চলুন দেরি না করে গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি
- গর্ভবতী মায়েদের কি খেতে হবে
- গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি
- গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকা
- গর্ভাবস্থায় শাক-সবজি খাওয়ার উপকারিতা
- শেষ কথা
গর্ভবতী মায়েদের কি খেতে হবে
গর্ভাবস্থা প্রতিটি মেয়ের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এ সময় মেয়েদের অন্যান্য সময়ের চাইতে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হয়। প্রতিদিন কাজ করার ক্ষেত্রে এবং খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। যেহেতু আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে আলোচনা করব তাই গর্ভবতী মায়েদের কি খেতে হবে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের জেনে নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী সময় সহবাসের নিয়ম
প্রথমে গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের তালিকা করতে হবে। যে সকল খাবারের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি সেই খাবারগুলো খাদ্য তালিকার মধ্যে সংযুক্ত করতে হবে। যে সকল খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিশেষ করে গর্ভবতী মা এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকর সেই খাবারগুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের কি খেতে হবে তা জেনে নেওয়া যাক।
ফলমূলঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো ফলমূল। আপনি যদি চান গর্ভবতী মা এবং তার সন্তান সুস্থ থাকুক তাহলে গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ফলমূল রাখুন। বিশেষ করে যে সকল ফলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমূহ।
শাকসবজি রাখুনঃ যেমন ফলমূল গর্ভবতী মায়েদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ খাবার ঠিক তেমন শাকসবজি গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার। বিশেষ করে টাটকা শাকসবজি গুলো প্রতিদিন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। যেই শাকসবজি গুলো সবুজ সাধারণত সেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান এইগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
আমিষ জাতীয় খাবারঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য আমিষ জাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমরা গর্ভবতী মা এবং তার সন্তানের ভালো চাই তাই আমাদেরকে খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার রাখতে হবে। গর্ভবতী মা এবং তার সন্তানের জন্য এই খাবারগুলো খুবই প্রয়োজনীয়।
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য সব ধরনের ভিটামিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে সাধারণত সেই খাবার গুলো গর্ভবতী মাকে খাওয়াতে হবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ইত্যাদি।
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি
প্রতিটি সন্তান মায়ের গর্ভে থাকার পরে পৃথিবীর আলো দেখতে পাই। কিন্তু এই সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য গর্ভবতী মাকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয় এবং গর্ভের মধ্যে থাকা সন্তানকে ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে হয়। তাই প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। কারণ গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ না করলে এটি গর্ভবতী মা এবং তার সন্তানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে।
আমিষঃ আমিষ আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তবে আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় যে পরিমাণ আমিষ খেয়ে থাকি গর্ভ ধারণ করলে এর থেকে বেশি আমিষ জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। বিশেষ করে ভ্রুণের সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমিষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একজন গর্ভবতী নারীকে প্রতিদিন ৯০ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম আমিষ খেতে হয়।
ক্যালসিয়ামঃ গর্ভবতী নারীদের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য উপাদান। কারণ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে এটি গর্ভে থাকা সন্তানের হাড় এবং দাঁত গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে গর্ভধারণের শেষ তিন মাস প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য খেতে হয়। সন্তানের সুরক্ষার জন্য একজন গর্ভবতী নারীকে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খেতে হয়।
যে সকল খাবারের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম সাধারণত সেই খাবার গুলো বেশি করে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। খাবারের মধ্যে সহযোগী দুধ এবং দই ক্যালসিয়াম এর ভালো উৎস। এছাড়া শাকসবজি এর মধ্যে রয়েছে বাধাকপি, ডাল, বাদাম, মাছ এবং বিভিন্ন ধরনের ফল।
লৌহঃ পূর্ণবয়স্ক নারী এবং পুরুষের একটি অপরিহার্য উপাদান হলো লৌহ। সাধারণত এমনি সময় একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর দৈনিক ৩০ গ্রাম লৌহ প্রয়োজন হয় কিন্তু গর্ভবতী নারীদের স্বাভাবিকের চাইতে একটু বেশি প্রয়োজন। সাধারণত যে সকল খাবারের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লৌহ সে খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাক এবং মাছ।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ
ফলিক এসিডঃ যদি আমাদের শরীরে ফলিক এসিড এর অভাব দেখা দেয় তাহলে রক্তস্বল্পতা এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের যেন কখনো রক্তস্বল্পতা না হয় সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে ফলিক এসিড জাতীয় উপাদান গুলো বেশি করে খেতে হবে। স্বাভাবিকের চাইতে গর্ভধারণ করলে একটু বেশি পরিমাণে ফলিক এসিড জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকা
গর্ভে থাকা সন্তানদের জন্য প্রতিটি নারীর গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। কারণ এই উপাদান গুলো গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সন্তানের বৃদ্ধি এবং গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের প্রথম তিন মাস এবং শেষে তিন মাস খুবই সতর্কতা অবলম্বন করে চলাফেরা এবং খাদ্য তালিকা নির্বাচন করতে হয়।
গর্ভবতী মায়ের যে খাবার গুলো খাওয়া যাবেঃ
- শর্করা জাতীয় খাবার খেতে হবে।
- প্রতিদিন ভাত অথবা রুটি খেতে হবে।
- খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে।
- দুধ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
- ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
- বিশেষ করে রঙিন ফল এবং সবজি রাখতে হবে।
- ডিম খেতে হবে নিয়মিত।
- নিয়মিত মাছ এবং মাংস এর পাশাপাশি ডাল খেতে হবে।
যে খাবারগুলো গর্ভবতী মায়ের খাওয়া যাবেনাঃ
- মাখন খাওয়া যাবেনা।
- ক্রিম জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
- অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়া যাবেনা।
- চকলেট জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
- বিস্কুট খাওয়া যাবেনা
- আইসক্রিম খাওয়া যাবেনা।
- পুডিং খাওয়া যাবেনা
- কোমল পানি খাওয়া যাবেনা।
- বার্গার খাওয়া যাবেনা।
গর্ভবস্থায় শাক-সবজি খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের সুস্থ থাকার জন্য শাকসবজি এর কোন বিকল্প নেই। একজন সাধারণ মানুষের প্রতিদিন শাক সবজি খেতে হয়। তাহলে এখান থেকে আমরা ধারণা নিতে পারি যে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর কি পরিমান শাকসবজি খেতে হবে। শাকসবজি এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান সাধারণত এগুলো গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী।
একজন গর্ভবতী নারীকে প্রতিদিন তাদের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখতে হবে। কারণ গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের তাজা ফল এবং তাজা শাকসবজি গর্ভকালীন বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজের চাহিদা পূরণ করে থাকে। সবুজ শাকসবজির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটাকার রুটিন যা গর্ভবতী মায়ের এবং তার শিশুকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
তাই আপনি যদি চান আপনার শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠুক তাহলে আপনাকে খাদ্য তালিকায় সবুজ শাক-সবজি এবং আঁশ জাতীয় খাবার রাখতে হবে। কারণ এই খাবারগুলো আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে রাখবে। বাজারে যে সকল শাক সবজি পাওয়া যায় যেমন গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, মটরশুঁটি, টমেটো ইত্যাদি।
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টিঃ শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলে গর্ভবতী মায়েদের কি খেতে হবে? গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি, গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকা, গর্ভবস্থায় শাক-সবজি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু গর্ভকালীন অবস্থা একজন গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় তাই আমাদের সকলকেই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে রাখতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কানে কম শোনা সমস্যা প্রতিরোধে ১০টি টিপস
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের তথ্যমূলক এবং স্বাস্থ্যমূলক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url