শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে বাবা মা বহু পরিকল্পনা অবলম্বন করে থাকে। নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় একজন মাকে। তাই তীব্র শীতে যেন মা অসুস্থ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে একজন মায়ের ভূমিকা অপরিসীম।
তাই আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় বিষয়গুলি সম্পর্কে। আপনারা মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র: শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
ভূমিকা
শীতকালে শিশুর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শীতকালে অসুস্থতার হার শুধু শিশুদেরই বৃদ্ধি পায় না সাথে একজন নবজাতক শিশুর মা ও জড়িত থাকে। কারণ শুধু জন্মের আগেই নয় জন্মের পরও একজন মা ও শিশু একে অপরের সাথে জড়িত থাকে। শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় গুলোর মধ্যে প্রথমে রয়েছে একজন মায়ের নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া। কারণ অনেক সময় এমন হয় যে একজন মা নিজের সুস্থতার প্রতি খেয়াল রাখে না।
ফলে তার সর্দি কাশি বা জ্বর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মায়ের দুধ পান করার কারণে বাচ্চাও একই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। একজন নবজাতক শিশুর মায়ের খাবারের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা আবশ্যক।শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় গুলোর মধ্যে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। একজন নবজাতক শিশুর মা সব সময় গরম খাবার খাবে।
কারণ শীতকালে ঠান্ডা খাবার খেলে অবশ্যই একজন মায়ের ঠান্ডা লেগে যাবে ফলে তার বাচ্চাও অসুস্থ হবে। শীতে প্রতিদিন গোসল করাও ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই শীতকালে প্রতিদিন গোসল না করে একদিন পরপর গোসল করুন এবং আপনার বাচ্চাকেও একদিন পরপর গোসল করান। শীতে গোসলের ক্ষেত্রে অবশ্যই গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।
শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে শীতে শিশুকে সবসময় গরম পানি ব্যবহার করতে দিন। গোসলের কাজে হাত ধোয়ার কাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে গরম পানি ব্যবহার করলে একজন শিশুর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। এমনকি খাওয়ার সময় পর্যন্ত কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা অনিবার্য। কারণ অনেক সময় দেখা যায় ঠান্ডার কারণেও অনেক বাচ্চার আমাশয় সমস্যা দেখা দেয়। তাই বাচ্চাদের আমশয় হলে কি খাওয়া উচিত এ বিষয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুন: মেয়ে বাচ্চাদের শীতের পোশাক সম্পর্কে জানুন
তাই শীত কালে ঠান্ডা থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারলে আমশয়ের সমস্যা থেকেও সুরক্ষা পেতে পারেন। আবার অনেক সময় এমন হয় শীতকালে আমাদের পানি পিপাসা অনেক কম লাগে। তাই শিশুরা পানি খাওয়ার প্রতি হালকা অনীহা দেখায়। আর সেজন্য পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার কারণে অনেক সময় পায়খানা কষা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ফলে বাচ্চারা কান্নাকাটি করে।
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঔষধ হিসেবে পানি সবচেয়ে কার্যকরী।শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় হলো শিশুকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তীব্র শীতে বাচ্চাকে ঠান্ডা পানি না দিয়ে হালকা কুসুম গরম পানি দিন। কুসুম গরম পানি খাওয়ালে পায়খানায় কোন সমস্যা হবে না বরং শরীর সুস্থ থাকবে।
এক মাসের শিশুর যত্ন
এক মাসের শিশুর যত্ন ও সুরক্ষার প্রথম ধাপ হলো শিশুকে ঘন ঘন খাওয়ানো উচিত। নবজাতক শিশুকে কমপক্ষে দিনে ১২ বার পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর জন্য খুবই উপযোগী। বুকের দুধ সহজে হজম হয়। তাই আপনার নবজাতক শিশুকে ঘন ঘন দুধ পান করান। শিশুর জন্মানোর কয়েক সপ্তাহের ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো আপনার দুধ উৎপাদনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করবে।
সারাদিনে একাধিক বার দুধপান করার কারণে শিশুর জিহ্বায় যে ময়লা পড়ে যায় তা নিয়মিত পরিষ্কার করাতে হবে। এক মাসের শিশুর যত্ন ও সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে অনেক সময় আমরা অনেক ভুলও করে ফেলি। যেমন শিশুকে অতিরিক্ত সোয়েটার পরিয়ে রাখা ঠিক না। এতে ঘাম জমে সেই ঘাম শীতকালীন ঠান্ডা বাতাসে শুকিয়ে শিশুর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে শিশুকে রাতের বেলায় ডাইপার পরিয়ে শোয়ান। শিশুর নাক বা মুখের উপর কাপড়, লেপ, কম্বল ইত্যাদি যেন না উঠে যায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। আপনার শিশুকে প্রয়োজন অনুযায়ী উষ্ণতায় রাখুন ঠান্ডা পরিবেশে রাখা যাবে না। সকালের রোদ বাচ্চার জন্য খুবই উপকারী। তাই সকালবেলা বাচ্চাকে রৌদ্রে নিয়ে কিছুক্ষণ রোদ পোহান।
দুই মাসের শিশুর যত্ন
একটি দুই মাসের শিশুর যত্নে শিশুকে দিনে অন্তত আটবার স্তন্যপান করানো সাধারণ ব্যাপার। তবে যত্ন নেওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো তাদের খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা আপডেট করা। একটি সঠিক খাদ্য বজায় রাখার পাশাপাশি তাদের ভালোভাবে হাইড্রোটেড রাখতে হবে। দুই মাসের শিশুর যত্ন নেওয়ার পর্যায় গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশু পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় কিনা তা নিশ্চিত করা। দুই মাসের মধ্যে আপনার শিশু তার আঙ্গুল এবং হাত আবিষ্কার করবে।
শিশু তার হাত সব সময় খোলা রাখার চেষ্টা করবে। দুই মাস বয়সী শিশুরা তাদের নড়াচড়ার সমন্বয় করতে শিখতে শুরু করবে। তাই দুই মাসের শিশুর যত্ন নেওয়াতে কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হয়।শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় হিসেবে আপনার শিশুকে আপনার বুক এবং কাঁধে বিশ্রাম দিন। আপনার হাত দিয়ে তার মাথা ও ঘাড়কে সমর্থন করুন। মাঝে মাঝে বিকেলে বাচ্চাকে নিয়ে একটু বাইরে ঘোরাঘুরি করুন।
বাচ্চাদের আমশয় হলে কি খাওয়া উচিত
শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে জানতে গেলে বাচ্চাদের আমশয় হলে কি খাওয়া উচিত এ বিষয়ে ধারণা থাকা আবশ্যক। কারণ বড় মানুষের থেকে বাচ্চাদের আমশয় হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি থাকে। আমাশয় হচ্ছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াল ডিজিস। অর্থাৎ কোনো বাজে ব্যাকটেরিয়া যখন ঢুকে যায় শরীরে তখন একটি শিশুর আমশয় রোগ হয়। আমশয় হলে বাচ্চারা মলত্যাগের সময় প্রচন্ড কান্নাকাটি করে।
আরো পড়ুন: শীতে যেভাবে আপনার শিশুর ত্বকের যত্ন নেবেন
এমনকি আমশয়ের সমস্যা হলে মলত্যাগ অল্প অল্প করে হয় সম্পূর্ণভাবে হয় না এবং একটু ব্যথা অনুভূতি হয়। এটা বয়স্ক ও শিশু উভয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে। এমন অবস্থায় অনেক মায়েরায় প্রশ্ন করেন বাচ্চাদের আমশয় হলে কি খাওয়া উচিত সে সম্বন্ধে। বাচ্চার আমশয়ের সমস্যা দেখা দিলে বাচ্চাকে স্যালাইন খাওয়ানো উচিত। তাছাড়াও ভাতের মাড় বাচ্চাদের আমশয়ের সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
এছাড়াও ডালের পানি, ডাবের পানি খুবই কার্যকারী আমশয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য। আবার আপনার শিশুকে বাসায় স্যালাইন তৈরি করেও খাওয়াতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানির সাথে একটু গুড় ও পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে স্যালাইন তৈরি করতে পারেন। আর এই স্যালাইন বাচ্চাকে পায়খানা করার পর চামচ দিয়ে একটু একটু করে খাওয়াতে থাকেন। এই লিকুইট খাবারগুলো বাচ্চাকে নিয়মিত পরিমান মত খাওয়াতে পারলে বাচ্চা অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবে।
এর পরবর্তী পর্যায়ে বাচ্চা একদম সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত বাচ্চাকে জাউভাত খাওয়ানো ভালো হবে। ম্যাস্ট পটেটো, আপেল, কলা, ডিমের সাদা অংশ ইত্যাদি খাবার গুলো খাওয়াতে পারেন। এবার আসি সবজির মধ্যে বাচ্চাদের আমশয় হলে কি খাওয়া উচিত এ বিষয়ে সবজির মধ্যে রয়েছে লাউ, পটল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ইত্যাদি ধরনের খাবার গুলো আমশয়ে আক্রান্ত শিশু অথবা বড় মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঔষধ
একজন মায়ের সারা দিনের করনীয় কাজগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় বিষয়গুলি মাথায় রেখে তার বাচ্চার সঠিক যত্ন নেওয়া। আর সে সকল স্বাস্থ্য সুরক্ষার করণীয় গুলোর মধ্যে রয়েছে বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঔষধ হিসেবে একজন মা কি বেছে নেবে। আপনার বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঔষধ খাওয়াতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অথবা ফার্মেসি থেকে আপনি ওষুধ কিনতে পারেন।
আরো পড়ুন: রাতে ঘুমানোর আগে মুখের যত্ন
যাতে আপনার বাচ্চার পায়খানা করতে কোন কষ্ট না হয়। তবে আপনি জানেন কি? বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঔষধী হিসেবে বাসায় কিছু টিপস অবলম্বন করা যায়। যে পদ্ধতিতে বাচ্চার স্বাস্থ্যেরও কোন ক্ষতি করে না। বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঔষধ না খাইয়ে কিছু ঘরোয়া টিপস নিচে আলোচনা করা হলো:
- একটি কাঁচা পানের বোটা নিবেন। পানের বোটায় সামান্য পরিমাণ মধু লাগাবেন। তারপর বাচ্চার মলদ্বারে হাফ ইঞ্চি পরিমাণ প্রবেশ করাতে হবে। এভাবে দুই থেকে তিন বার মলদ্বারে প্রবেশ করালে বাচ্চা অবশ্যই পায়খানা করবে।
- বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঔষধ হিসেবে মুক্তঝুরি পাতা খুব উপকারী। মুক্তঝুরি পাতা একটু ঘি দিয়ে বেটে পানের বোটার সাথে লাগিয়ে মলদ্বারে প্রবেশ করাবেন। এভাবে দুই থেকে তিনবার প্রবেশ করালেই আপনার বাচ্চা অবশ্যই পায়খানা করবে।
- বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঔষধ হিসেবে অ্যালোভেরা ও গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালোভেরার শাসের রস মধুর সাথে মিশিয়ে আপনার বাচ্চার জিহ্বায় লাগিয়ে দিবেন। তারপর দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার বাচ্চা পায়খানা করবে।
শেষ কথা
শীতে শিশুর যত্ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় সম্বন্ধে উপরিউক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আরো আলোচনা করেছি এক মাসের শিশুর যত্ন, দুই মাসের শিশুর যত্ন, বাচ্চাদের আমশয় হলে কি খাওয়া উচিত, বাচ্চাদের পায়খানা না হলে ঔষধ ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা কতটুকু উপকৃত হয়েছেন কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url