শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি
আপনি কি জানেন শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি? আজকে আমি আলোচনা করব শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি। আপনি যদি শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন তাহলে হাঁপানি থেকে রেহাই পাবেন।
শীতকাল হাঁপানি রোগীদের জন্য অনেক কষ্টের হয়ে থাকে। তাই শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি এ বিষয় সম্পর্কে আপনার জানা থাকা প্রয়োজন।
পোস্ট সূচিপত্র: শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি
ভূমিকা
হাঁপানি রোগ ফুসফুসের একটি রোগ। হাঁপানি রোগকে ইংরেজিতে অ্যাজমা বলা হয়। হাঁপানি রোগ সাধারণত ছোটবেলা থেকে শুরু হয় এবং আস্তে আস্তে প্রাপ্তবয়স্ক হলে রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। হাঁপানি রোগটি যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। এই রোগ সম্পূর্ণভাবে নির্মল সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের কাছে এই রোগ সম্পূর্ণ নির্মূলের উপায় এখনো অজানা রয়ে গেছে। তবে কিছু উপায় অবলম্বন করলে হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
শীতকালে এই রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। হাঁপানি রোগীদের শীতকালে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। তাই শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি সে বিষয় সম্পর্কে হাঁপানি রোগীদের ধারণা রাখা উচিত। শীতে হাঁপানি রোগীদের আলাদা কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি এ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
হাঁপানি কেন হয়
হাঁপানি রোগের কারণগুলো অনেকেই জানেন না। সাধারণত ফুসফুসে বাতাস আদান প্রদানের জন্য যে শ্বাসনালী গুলো কাজ করে সেগুলো ফুলে ওঠার জন্য হাঁপানি হয়। এর ফলে শ্বাসনালী গুলো সরু হয়ে যায়। কিছু কিছু কারণ আছে যেগুলো হাঁপানি রোগ বৃদ্ধি করার জন্য দায়ী। নিচে হাঁপানি রোগের কারণগুলো আলোচনা করা হলো।
- অ্যালার্জি সমস্যা থেকে হাঁপানি রোগ হতে পারে। যেমন: ফুলের রেনু, ধুলাবালি, পশুর লোম ইত্যাদির কারণে হাঁপানি রোগটি হতে পারে।
- ঠান্ডা বাতাসের কারণে অনেক সময় হাঁপানি রোগ বা অ্যাজমা হয়ে থাকে।
- সর্দি কাশি এবং ভাইরাস সংক্রমণ থেকে হাঁপানি রোগ হতে পারে।
আরো পড়ুন: শ্বাসকষ্ট থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
- অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়াম করার কারণেও অনেক সময় হাঁপানি রোগ হয়ে থাকে।
- পরিবেশ দূষণ এবং ধোয়ার কারণে হাঁপানি রোগ হতে পারে।
- বংশগত কারণে অনেক সময় হাঁপানি রোগ হতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকেও হাঁপানির মাত্রা বাড়তে পারে। যেমন: গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ ইত্যাদি খাবার খেলে অনেকের হাঁপানি সমস্যা বেড়ে যায়।
- অনেক সময় মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত আবেগ প্রবণতার কারণে হাঁপানি রোগের তীব্রতা বাড়তে পারে।
- ছেলেদের ক্ষেত্রে এই রোগটি শিশু বয়সে হয়ে থাকে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক হলে হয়ে থাকে।
হাঁপানি রোগের লক্ষণ
হাঁপানি যেহেতু শ্বাসনালির একটি রোগ তাই এই রোগ হলে বেশি যে লক্ষণটি দেখা দেয় তা হল শ্বাসকষ্ট। হাঁপানি রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে। এই লক্ষণগুলো থেকে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার হাঁপানি রোগ হয়েছে কিনা। এরপর আমরা শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। নিচে হাঁপানি রোগের লক্ষণগুলো দেয়া হলো।
- দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট।
- বুকে চাপ লাগা।
- শ্বাস প্রশ্বাসের সময় বুকের ভেতর সাঁ সাঁ শব্দ হওয়া।
- কাশি হওয়া।
- ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বৃদ্ধি।
- অনেক সময় ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্ট হওয়া।
- শুকনা কাশি হওয়া।
- নিঃশ্বাস বন্ধ লাগা।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখামাত্র বুঝতে হবে যে হাঁপানি রোগের সমস্যা হয়েছে। তখন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
শীতে হাঁপানি রোগীর প্রস্তুতি
হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের জন্য শীতকাল অনেক কষ্টদায়ক। শীতকালের ঠান্ডা আবহাওয়া, ধুলাবালি, শুষ্ক বাতাস, ফুলের পরাগরেণু ইত্যাদি কারণে মানুষের হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যায়। সর্দি কাশি, ফ্লু শীতকালে বেশি হয়। এ সময় ভাইরাস সংক্রমণও বেড়ে যায়। এসব সংক্রমণ হাঁপানি রোগীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। শীতকাল আসলে হাঁপানি রোগীদের অবশ্যই কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
হাঁপানি রোগীরা যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন-
- শীতে যাদের সকালে হাঁটার অভ্যাস রয়েছে তারা সকালের পরিবর্তে একটু বেলা করে হাঁটতে যাবেন। কারণ সকাল বেলা পরিবেশের তাপমাত্রা ঠান্ডা থাকে এবং শিশির বা কুয়াশা পড়ার কারণে ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই হাটা বা ব্যায়াম করার জন্য সকালের পরিবর্তে একটু বেলা করে বের হন।
- শীতের শুরুতে হাঁপানি রোগীদের ফ্লু এর ভ্যাকসিন দিয়ে নেয়া উচিত।
- শীতের জন্য অবশ্যই গরম কাপড় ব্যবহার করবেন। প্রয়োজনে টুপি, মাফলার এবং মোজা পড়ে বাইরে বের হবেন। অনেকের উলের তৈরি কাপড়ে অ্যাজমা বা হাঁপানি সমস্যা হয়ে থাকে। তারা অবশ্যই মোটা সুতি কাপড় ব্যবহার করবেন। আর একটা কথা বাড়িতে কখনোই খালি পায়ে হাঁটবেন না।
- আপনার বাড়িতে ইনহেলার এবং অন্যান্য ওষুধ আছে কিনা তা ভালো করে দেখে নিন। যারা বাড়িতে নেবুলাইজার গ্যাস ব্যবহার করেন তারা যন্ত্রটি ঠিক আছে কিনা একবার চেক করে নিন। শীতকাল শুরু হওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার হাঁপানি রোগের ইনহেলার এবং ঔষধের ডোজ সম্পর্কে তথ্য জেনে নিন।
- করোনা সমস্যা কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ ঠিক হয়নি। হাঁপানি রোগীদের জন্য করোনার ঝুঁকি রয়েছে। তাই শীতে নিয়মিত মাস্ক পড়ুন এবং যথাসম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলুন। করোনা টিকা অবশ্যই দিয়ে নিবেন।
আরো পড়ুন: শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না
- শীতে পরিবেশে অনেক ধুলাবালি এবং ফুলের রেণু উড়ে বেড়ায়। তাই শীতে বাইরে গেলে মাস্ক পড়ার চেষ্টা করবেন। কারণ মাস্ক পড়লে ধুলাবালি থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।
শীতে হাঁপানি এড়াতে করনীয় কি
হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের জন্য শীতকালের আবহাওয়া অনেক কষ্টদায়ক। কারণ শীতকালে শীতল আবহাওয়ার কারণে ফ্লু, সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি হয়ে থাকে। শীতে শিশুদের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ এবং বড়দের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ হাঁপানি রোগীদের সমস্যা বেড়ে যায়। শীতে হাঁপানি সমস্যা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো ঠান্ডা আবহাওয়া, জ্বর বা ফ্লু বেড়ে যাওয়া, শ্বাসতন্ত্র সংকুচিত হওয়া, কুয়াশা বা শিশির বেশি পড়া, ধুলাবালি এবং পরাগরেণুর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
এসব কারণে শীতে হাঁপানি রোগীদের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই আপনি কি জানেন শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি। এ বিষয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন তাহলে জেনে নেই হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি এ বিষয়ে বিস্তারিত।
- যাদের হাঁপানি সমস্যা রয়েছে তারা শীতে বাইরে কম বের হবেন। অধিকাংশ সময় বের হওয়ার পূর্বে ইনহেলার ব্যবহার করে নিন। সতর্কতার জন্য সাথে নীল রঙের ইনহেলার টি রাখতে পারেন।
- ধূমপান পরিহার করুন। এমনকি পাশের ব্যক্তির ধূমপান আপনার সমস্যা বাড়াতে পারে তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
- ঠান্ডা বা কোমল পানীয় পরিহার করুন। ঠান্ডা খাবার এবং সকল প্রকার ঠান্ডা পানীয় থেকে দূরে থাকবেন।
- শিশুরা অনেক সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নিয়ে থাকে। মুখ দিয়ে নেওয়া শ্বাস আপনার শ্বসনতন্ত্রকে আরও সংকুচিত করে দেয়। আর নাক দিয়ে শ্বাস নিলে উষ্ণ এবং পরিষ্কার বায়ু আপনার ভেতরে প্রবেশ করে। তাই মুখের পরিবর্তে নাক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করুন। শিশুদের নাক বন্ধ হয়ে গেলে পরিষ্কার করে দিন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শীতের সময় হাঁপানি রোগীরা ফ্লু এর ভ্যাকসিন অবশ্যই দিয়ে নিবেন।
- শীতের সময় ব্যায়াম করার জন্য বাইরে না গিয়ে ঘরে ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করার আগে হালকা ওয়ার্ম আপ করে নিতে পারেন। প্রয়োজন হলে নীল রঙের ইনহেলার ব্যায়াম করার আগে বা ব্যায়াম করার সময় ব্যবহার করুন।
- ধোয়ার কারণে হাঁপানি রোগীদের অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই রান্নাঘরে চিমনি ব্যবহার করুন যেন ধোয়ার কারণে সমস্যা না দেখা দেয়। এমনকি ঘরে কয়েল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- বাড়িতে যদি পোষা পাখি, কুকুর বা বিড়াল থাকে তাদের জায়গা আপনার শোবার ঘর থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। এতে করে শীতে হাঁপানি রোগীরা হাঁপানি থেকে ভালো থাকবেন।
- সর্দি কাশি হলে অবশ্যই রুমালের পরিবর্তে টিস্যু পেপার ব্যবহার করবেন। সর্দি কাশি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকবেন। প্রয়োজনে সর্দি কাশির পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। কারণ এসব থেকে দূরে না থাকলে আপনার হাঁপানি সমস্যা বেড়ে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- আপনি যেসব ঔষধ এবং ইনহেলার ব্যবহার করেন সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে কিনা দেখে নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাঁপানি রোগের ঔষধ এবং ইনহেলার ব্যবহারের ডোজ আপডেট করুন।
উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে আপনি বুঝতে পারলেন শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি। শীতকালে হাঁপানি রোগীরা কিভাবে নিজেদের যত্ন নিবেন আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
শেষ কথা: শীতে হাঁপানি এড়াতে করনীয় কি
প্রিয় পাঠক, আজকের এই পোস্ট থেকে আপনারা জানতে পারলেন শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি। আপনারা যদি শীতে হাঁপানি থেকে বাঁচতে উপরের করণীয় কাজগুলো করেন তাহলে শীতে নিরাপদে থাকতে পারবেন। আশা করছি আপনারা আমার পোস্ট পড়ে শীতে হাঁপানি এড়াতে করণীয় কি এ সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন। তাই যাদের হাঁপানি রোগ রয়েছে তারা অবশ্যই শীতে হাঁপানি রোগ থেকে বাঁচতে পূর্ব কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন।
আমার পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার প্রয়োজনীয় মতামত সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url