পাইলসের লক্ষণগুলো কি
আজকের পোস্টে আমি আলোচনা করব পাইলসের লক্ষণগুলো কি সে বিষয়ে। পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি জানতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়তে হবে। পাইলসের লক্ষণগুলো কি জানলে আপনি পাইলস সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
পাইলসের লক্ষণগুলি আমরা অনেকেই জানিনা। আজকের পোস্টে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব পাইলসের লক্ষণগুলো কি এ বিষয়ে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্র: পাইলসের লক্ষণগুলো কি
ভূমিকা
বর্তমান সমাজে অনেক মানুষেরই পাইলস রোগ হচ্ছে। কিন্তু পাইলস সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। এদের মধ্যে অনেকেই আমরা পাইলস আক্রান্ত কিন্তু লক্ষণগুলো সম্পর্কে না জানার কারণে আমরা তা বুঝতে পারিনি। পাইলস যেহেতু একটি কষ্টদায়ক রোগ তাই পাইলস হলে দ্রুত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। বর্তমান সভ্য সমাজে মানুষের খাদ্যাভাস পরিকল্পিত নয়। যার কারণে পাইলস রোগটি বেশি হয়ে থাকে।
আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন পাইলস রোগের জন্য দায়ী। পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি তা জানলে সহজেই আপনি বাড়িতে চিকিৎসা করতে পারবেন। পাইলসের লক্ষণগুলি না জানলে আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না যে আপনার পাইলস হয়েছে। আজকের এই পোস্টে আমরা পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
পাইলস কি
আমরা অনেকেই জানি পাইলস হলো মলদ্বারের একটি জটিল এবং অস্বস্তিকর রোগ। সাধারণত মলদ্বারের আশেপাশে ফুলে গিয়ে এবং মলদ্বার দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলে আমরা তাকে পাইলস হিসেবে চিহ্নিত করি। পাইলস রোগ এতটা যন্ত্রণাদায়ক যে এই রোগটি যার হয় সে বুঝতে পারে। পাইলস রোগ হলে মলদ্বারের আশপাশ দিয়ে অনেক রক্তপাত হতে পারে। টিস্যু ব্যবহার করলে মল থেকে সময় রক্তের ফোটা টিস্যুতে লেগে যায়। পাইলসের লক্ষণগুলোজানা থাকলে সহজেই নিজে নিজেই পাইলসের চিকিৎসা করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
পাইলস দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হল অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং অন্যটি হলো বাহ্যিক পাইলস। পাইলসের লক্ষণগুলো কি তা জানতে হলে সম্পূর্ণ পোস্টটি আপনাকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। এবং পাইলসের লক্ষণগুলি জানতে পারলে সঠিক চিকিৎসা করতে পারবেন। নিচে পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি তা আলোচনা করা হবে। পাইলস হলে দ্রুত ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং জটিল অবস্থা ধারণ করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
পাইলসের লক্ষণগুলো কি
পাইলস বা অর্শ রোগের কারণে মানুষকে অনেক অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে হয়। পাইলস থেকে বাঁচতে হলে জানতে হবে পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি। চলুন তাহলে জেনে নেই পাইলসের লক্ষণগুলো কি।
- মলত্যাগের সময় মলদ্বারের আশেপাশে ব্যথা করা: সাধারণত পাইলস হলে মলত্যাগের সময় মলদ্বারের আশেপাশে ব্যথা করতে পারে। মলত্যাগের সময় বেশি চাপ প্রয়োগ করলে তীব্র ব্যাথা হতে পারে। পাইলসের সমস্যার কারণে মলদ্বারে আশেপাশে ব্যথা করতে পারে। এ লক্ষণটি দেখা দিলে বুঝবেন যে আপনার পাইলস হয়েছে।
- মলের সঙ্গে তাজা রক্ত বেরিয়ে আসা: পাইলস হলে মলের সঙ্গে অনেক সময় তাজা রক্ত বেরিয়ে আসে। মলত্যাগের সময় কমোডে লাল রক্ত লেগে থাকতে পারে। টিস্যু ব্যবহার করলে টিস্যুতে লাল রক্তের ফোঁটা দেখা যায়। তবে কোনো কারণে যদি মলের সাথে খয়রি বা কালচে রঙের রক্ত বেরিয়ে আসে তাহলে সেটা পাইলস নয়। এটা পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য সমস্যার কারণে হতে পারে। যারা জানতে চান পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি। মলের সঙ্গে তাজা রক্ত বেরিয়ে আসা পাইলসের একটি অন্যতম লক্ষণ।
- মলদ্বারের আশেপাশে ফুলে শক্ত হয়ে যাওয়া: পাইলস হলে মলদ্বার এর আশেপাশে ফুলে শক্ত হয়ে যায়। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিনের কারণে মলত্যাগের সময় চাপ প্রয়োগ করতে হয়। এ সময় মলদ্বারের আশেপাশে ফুলে শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা করতে থাকে। এইসব ফুলা অংশে রক্ত জমাট বেঁধে অনেক সময়ই রক্তক্ষরণও হতে পারে। তাই পাইলস হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে মলদ্বারের আশেপাশে ফুলে শক্ত হয়ে যাওয়া অন্যতম।
- মলত্যাগের সময় পায়ুপথ নিচের দিকে নেমে আসা: পাইলস হলে মলত্যাগের সময় পায়ুপথ নিচের দিকে নেমে আসে। পায়ুপথ নিচের দিকে নেমে আসলে হাত দিয়ে তা ভিতরের দিকে ঢুকিয়ে দিতে হয়। অনেক সময় আপনি নিজে থেকেই পায়ুপথ ভিতরে দিকে ঢুকে যায়। খেয়াল রাখতে হবে মলত্যাগের সময় পায়ুপথ নিচে নেমে আসলে তা ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিতে হবে। পাইলসের লক্ষণ গুলোর মধ্যে এটি একটি লক্ষণ।
- পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হওয়া: পাইলস হলে পায়খানার রাস্তায় চুলকানি হতে পারে। পায়খানার রাস্তায় চুলকালে সেখান থেকে আস্তে আস্তে ব্যথা হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই বুঝতে হবে পাইলস রোগ হয়েছে। পাইলস হলে পায়খানার রাস্তায় অতিরিক্ত চুলকানি হতে পারে অনেক সময় পায়ুপথ দিয়ে পিচ্ছিল পদার্থ বের হতে পারে। মলত্যাগ করার পরও অনেক সময় মনে হতে পারে মলত্যাগ করা হয়নি।
- পাইলসের সমস্যা বেশি হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়: পাইলসের সমস্যা যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে পায়খানাতে গেলেই রক্তক্ষরণ হতে পারে। পায়খানার রাস্তা দিয়ে তাজা রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে। অনেক সময় মলের সাথেও তাজা রক্ত বেরিয়ে আসে।
আরো পড়ুন: দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
- মলত্যাগের সময় অস্বস্তি বোধ হয়: পাইলস হলে মলত্যাগ করার সময় অস্বস্তিবোধ হতে পারে। যেহেতু পায়খানার রাস্তা ব্যাথা করে এবং রক্তপাত হয় তাই মলত্যাগের সময় অস্বস্তি বোধ হতে পারে।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে বুঝবেন যে আপনার পাইলস হয়েছে। এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি।
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
যেহেতু আমরা পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি সেগুলো জেনেছি। এখন আমরা পাইলস থেকে চিরতরে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সে উপায় গুলো নিয়ে আলোচনা করব। নিচে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় গুলো আলোচনা করা হলো।
- পাইলস থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন অ্যালোভেরা জেল। কারণ পাইলসের চিকিৎসায় অ্যালোভেরা জেল খুব কার্যকরী।
- পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ক্যাস্টর অয়েল। ক্যাস্টর অয়েল পাইলস থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ব্যবহার করুন।
- পাইলসের চিকিৎসায় ব্যবহার করুন আপেল সিডার ভিনেগার। এর অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণাগুণ পাইলস রোগ উপশম করতে সাহায্য করে।
- পাইলসের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে পারেন অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েল পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিয়মিত ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত জাম খেতে পারেন। জাম খেলে আপনার পাইলসের সমস্যা থাকবে না।
- পাইলসের চিকিৎসায় ব্যবহার করুন নিম। নিয়মিত নিমপাতা পাইলস আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন দ্রুত উপশম হবে।
- পাইলসের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে পারেন লেবুর রস। লেবুর রসের অনেক গুনাগুন রয়েছে যা আপনার পাইলস দূর করতে সহায়তা করবে।
- পাইলস থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করলে আপনার শরীর হাইড্রেট থাকবে।
- শরীরের ওজন কমিয়ে ফেলুন। কারণ অতিরিক্ত ওজন থাকলে শরীরে অনেক রোগ দেখা দিতে পারে।
- নিয়মিত শরীরচর্চা করুন দেখবেন দ্রুত পাইলস সেরে গেছে।
- প্রতিদিন গোসলের সময় পাইলস আক্রান্ত স্থানে গরম পানির ভাপ দিন। তাহলে দ্রুত পাইলস রোগ সেরে যাবে।
- পাইলস আক্রান্ত স্থানে বরফের ব্যাগ দিয়ে রাখলে ব্যথা দ্রুত উপশম হয়।
- টয়লেটে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। পায়খানার বেগ পেলে দ্রুত টয়লেটে চলে যাবেন।
পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধের নাম
পাইলসের চিকিৎসা প্রথমে ঘরোয়া পদ্ধতিতে করা উচিত। তারপর যদি পাইলস জটিল আকার ধারণ করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। পাইলসের চিকিৎসায় সাধারণত পাইলো স্প্রে এবং পাইলো কিট ব্যবহার করা হয়। পাইলো স্প্রে এবং পাইলো কিট এই দুইটি স্প্রে পাইলসের চিকিৎসা অনেক কার্যকরী। আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করলে দ্রুত উপশম হয়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়াও পাইলসের চিকিৎসার জন্য কিছু মলম ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে ডিকটামনি, এরিয়ান অয়েন্টমেন্ট, এনুস্ট্যান্ট, টপি আসকুলাস, হিমালয়া পাইলেক্স ফোর্ট অয়েন্টমেন্ট, এফসি জেল ইত্যাদি মলম উল্লেখযোগ্য। এই মলমগুলো পাইলসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই কোন ঔষধ বা মলম ব্যবহার করবেন না। দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
শেষ কথা: পাইলসের লক্ষণগুলো কি
প্রিয় পাঠক, আজকের পোস্টে আমি আলোচনা করলাম পাইলসের লক্ষণগুলো কি কি এ বিষয়ে। আশা করছি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে পাইলসের লক্ষণগুলো কি সে বিষয়ে আপনাদের ধারণা হয়েছে। পাইলসের লক্ষণ গুলো ভালো করে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন। তাহলেই দ্রুত পাইলস রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবেন।
আজকের পোস্টটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে এবং পোস্টটি পড়ে আপনার উপকার হয় তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনাদের প্রয়োজনীয় মতামত আমাদেরকে কমেন্ট এর মাধ্যমে জানান। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url