পুষ্টিকর ০৯টি শীতকালীন সবজির নামের তালিকা ২০২4
আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব অনুসারে বাংলাদেশ হলো ৬ ঋতুর দেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত এবং বসন্ত। শীত হলো পঞ্চম ঋতু। অন্য সব ঋতুর তুলনায় শীতের প্রভাব একটু ভিন্ন। কনকনে হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে শীতের আগমন হয়। এই ঋতুতে শুরু হয় নানা রকম আয়োজন। বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব, খেজুর রস, খেজুর গুড়, নতুন শাকসবজি তাদের সমাহার। শীতকালে বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যায়। এই সময়ে জানা প্রয়োজন সবজির নামের তালিকা।
বাজারে শীতকালে সবজি হিসেবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, শিম, মটরশুঁটি, শালগম, মূলা, পালং শাক, পেঁয়াজকলি, লাউ, গাজর, টমেটো ইত্যাদি পাওয়া যায়। এসব শাক সবজির প্রচুর স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টিগুনো অনেক বেশি। তাই আমাদের পুষ্টি বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়া উচিত। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আলোচনা করবো শীতকালীন সবজির তালিকা সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক শীতকালীন সবজির নামের তালিকা।
পেজ সূচিপত্রঃ শীতকালীন সবজির নামের তালিকা ২০২৩
শীতকালীন সবজির নামের তালিকা ও গুনাগুন
শীতকালীন সময়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যায়। বছরের প্রায় সবসময়ই কমবেশি কমবেশি শাক-সবজি ও ফলমূল ফলমূল পাওয়া যায়। তবে শীতকালে শাক-সবজি বেশি পাওয়া যায় এবং এসময় দাম কম থাকে।শীতকালে চাষ করা এসব মৌসুমি শাক সবজি বা ফল গ্রহনের ফলে সহজেই শরীরের চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরন করা সম্ভব।তাহলে কথা না বাড়িয়ে দেখে নেয়া যাক
১) ফুলকপিঃ
শীতের সুস্বাদু সবজির মধ্যে ফুলকপি অন্যতম। ফুলকপিতে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ভিটামিন কে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এছাড়া অনন্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে আয়রন ফসফরাস, সালফার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার। ফুলকপি তে উচ্চমাত্রায় আয়রন রয়েছে যা রক্ত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফুলকপিতে বিদ্যমান সালফারযুক্ত সালফোরাফেন উপাদান ক্যান্সার ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ কমায়।
ফাইবার ও সালফার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গর্ভবতী মা, শিশু এবং পরিশ্রম করা মানুষের জন্য ফুলকপি অনেক উপকারী। ফুলকপিতে কোন প্রকার চর্বি নেই। ফুলকপি কোলেস্টেরলমুক্ত ( cholesterol free) তাই বৃদ্ধি ও বর্ধনের জন্য অনেক উপযোগী। এছাড়াও। মূত্রথলী ও প্রস্টেস ( Prostate) স্থন ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধেও ফুলকপির ভূমিকা অন্যতম।
এছাড়াও ফুলকপিতে বিদ্যমান ভিটামিন এ ও সি শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশি ও টনসিল প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ফুলকপিতে বিদ্যমান ভিটামিন 'এ' চোখের জন্য প্রয়োজনীয়।
২) বাঁধাকপিঃ
শীতকালীন টাটকা সবজি হলো বাঁধাকপি। শীতকালীন এই সবজিটি বেশ উপকারী এবং সুস্বাদু। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন - সি, ভিটামিন ই, এবং ফাইবার রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সালফারের মতো খনিজ উপাদান। এছাড়া রান্না করা বাঁধাকপি খাদ্যদ্রব্য হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী।
বাঁধাকপি ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি বেশ ভূমিকা রাখে। শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুত রাখে এবং ওজন কমাতে উপযোগী। এটি মানব দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও মানবদেহের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, আলসার প্রতিরোধ করে, এবং দেহের রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি সাধন করে।
৩) ব্রোকলীঃ
ব্রোকলি হলো একটি কপিজাতীয় সবজি। এটি আমাদের দেশের শীতকালীন নতুন একটি সজবি, যা দেখতে অনেকটা ফুলকপির মত। এটির রং সবুজ হওয়ায় একে সবুজ ফুলকপি ও বলা হয়। আমাদের দেশের শীতকালীন সবজি হিসেবে ব্রোকলি চাষ করা হচ্ছে।
ব্রোকলিতে আয়রন ও ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। ব্রোকলি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি সবজি। এই সবজিটি চোখের রোগ, রাতকানা ও অস্থি বিকৃতি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্যান্য রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪) শিমঃ
শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও আমিষ উপাদানের সমৃদ্ধ একটি সবজি হিসেবে খাওয়া যায় আবার শুকনো বিজ হিসেবেও খাওয়া যায়। শিমের পরিপক্ক বিজে আমিষ ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে । এটি খাবার পরিপাকে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়।
এতে বিদ্যমান রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টিঅক্সিজেন ও পানি যা কোলেস্টেরল কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। শিম শিশুদের অপুষ্টি দূর করে।
৫) পালংশাকঃ
শীতকালীন শাকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পালং শাক। এটা প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড আয়রন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। এছাড়াও উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর। এছাড়াও হৃদরোগ ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। পালংশাকের ক্যারোটিনয়েডস ও শক্তিশালী আন্টিঅক্সিডেন্ট প্রোস্টেট ক্যান্সার ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৬) গাজরঃ
গাজর হলো অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও খাদআশ সমৃদ্ধ একটি শীতকালীন সবজি। গাজর এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি বা সালাত হিসেবেও খাওয়া যায়। গাজরের বিদ্যমান রয়েছে বিটা ক্যারোটিন (Beta Carotene) যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। আরো অন্যান্য উপাদান রয়েছে যেমন, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
গাজার উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গাজর বেশি খেলে পেট ভরলেও ক্যালরি যোগ হবে না। এজন্য ওজন কমাতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে বেশি বেশি গাজর খান।
৭) টমেটোঃ
শীতকালের একটি জনপ্রিয় সবজি হলো টমেটো। টমেটোতে রয়েছে ভরপুর ক্যালরি এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। টমেটো কাঁচা ও পাকা এ দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। টমেটোতে উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বক ও চুলের রুক্ষ ভাব দূর করে এবং ঠান্ডা জনিত রোগ ভালো করে।
টমেটোতে বিদ্যমান রয়েছে এন্টিঅক্সিজেন যা প্রকৃতির আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে। বর্তমানে টমেটো সব ঋতুতে পাওয়া যায়। শীতকালে টমেটো চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং দামও কম থাকে। অনেক সময় চাটনি তৈরিতেও টমেটো ব্যবহার করা হয়।
৮)মূলাঃ
শীতকালের একটি পরিচিত সবজি হল মূলা। মুলা কাঁচা খাওয়া যায় আবার রান্না করেও খাওয়া যায়। মুলা হলো ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ উৎস। মুলার পাতায় বিদ্যমান ভিটামিনের পরিমাণ ছয় গুন বেশি। এর বিটা ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকিহ্রাস করতে সহায়ক। মুলা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। কিডনি পিত্ত থলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারো কারো ক্ষেত্রে এসিডিটিও করতে পারে।
৯)ধনেপাতাঃ
বর্তমানে ধনেপাতা সারা বছর পাওয়া গেলেও মূলত এটি একটি শীতকালীন সবজি। ধনিয়া পাতা সরাসরি সালাদ এবং রান্না করেও খাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং ফলিক এসিড বিদ্যমান রয়েছে, যা ত্বকের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। ধনেপাতায় বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো ত্বকের পুষ্টি যোগায়, চুলের ক্ষয় রোধ করে, হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে এবং মুখের ভেতরের নরম অংশ গুলোও রক্ষা করে থাকে।
ধনেপাতাতে উপস্থিত আয়রন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখে। ধনে পাতা রান্না করে খাওয়ার থেকে কাঁচা খাওয়া বেশি উপকারী। শীকালীন ঠোঁট ফাটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দুর করতেও এটি যথেষ্ট অবদান৷ রাখে। ধনে পাতাতে রয়েছে ভিটামিন 'সি ', তে ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ঔষধি ভূমিকা পালন করে।
শীতকালীন সবজির নামের তালিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ শীতকালীন শাক সবজির উপকারিতা কী কী?
উত্তরঃ আমাদের খাদ্য উপাদানের মধ্যে ভিটামিন সি ও মিনারেলসের৷ অন্যতম উৎস হলো শাকসবজি এবং ফলমূল। মূলত ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে খাদ্যের শর্করা আমিষ ও চর্বির ব্যবহারে সাহায্য করে।
প্রশ্নঃ শীতকালীন সময়ে কি কি সবজি পাওয়া যায়?
উত্তরঃ শীতকালীন সময়ের শাক-সবজি গুলো হলোঃ বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, টমেটো, মূলা, লাউ, শালগম, ধনেপাতা, পালংশাক ব্রোকলি, মটরশুঁটি, এবং পেয়াজ পাতা ইত্যাদি। শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা- ক্যারোটিন, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ফলিক এসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট, আশ ও ভিটামিন।
প্রশ্নঃ শাক-সবজি চাষের উপযুক্ত উপযুক্ত সময় কোনটি?
উত্তরঃ আবহাওয়া বিচারে বাংলাদেশ হলো ৬ ঋতুর দেশ। আর ৬ টি ঋতুর মধ্যে ৫ম তম ঋতু হলো শীতকাল। বছরের প্রায় সবসময়ই কমবেশি শাক-সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে ষড়ঋতুর আবর্তনে শীতকালই শাকসবজি ও ফলমূল চাষের উপযুক্ত সময়।
শেষকথাঃ পুষ্টিকর ০৯টি শীতকালীন সবজির নামের তালিকা ২০২৩
শীতকালে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলমূল চাষ করা হয়ে থাকে। এসব শাক-সবজি অত্যন্ত সুস্বাদু ও আমিষে ভরপুর। এসব খাদ্য গ্রহনের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃষ্টি পায়। তাই৷ সুস্থভাবে বাচতে হলে অধিক পরিমাণে শীতকালীন সবজি গ্রহন করতে হবে।
প্রায় সব শাকসবজিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যামান থাকে যা ত্বক উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে। এছাড়াও প্রায় সব শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা আমাদের ঘাটতি পূরণে সক্ষম। শাক-সবজিতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং আমাদেরকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে।
শাকসবজির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও অস্থিরক্ষয় রোধে ও শরীরে রক্তকনিকা বা প্লাটিলেট গঠনে শীতকালীন সবজির ভূমিকা অপরিসীম।আশা করছি এই আর্টিকেল টি পরে শীতকালীন সবজির তালিকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। ধন্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url