মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম - ওমরা পালনের নিয়ম ও দোয়াসুমহ
নামহীন
১১ মার্চ, ২০২৪
ইসলামী শরীয়তে নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম জারি করা হয়েছে। মহিলাদের নামাজের নিয়ম যেমন আলাদা ঠিক তেমনিমহিলাদের ওমরা পালনের নিয়মগুলোও আলাদা। আমরা যেমন নামাজ আদায়ের আগে সঠিক নিয়মে অজু করে নামাজের জন্য প্রস্তুত, একইভাবে আমাদের হজ বা ওমরা নিয়ম ও দোয়া সমূহ মুখস্ত করে আমাদের প্রস্তুত হওয়া উচিত।
আমরা আমাদের পূর্ববর্তী আর্টিকেল গুলোতে হজ্জ কেন করতে হয় এই সম্পর্কে পুরো বিস্তারিত একটি তথ্য প্রদান করেছি। আজ আপনারা জানবেন মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম এবং ওমরা করার জন্য আপনাদের যে ওমরা পালনের নিয়ম ও দোয়া গুলো জানা দরকার তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আসুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
হজ কি? তা আমরা আগেও জেনেছি হজ এবং ওমর এর মধ্যে একটি প্রধান পার্থক্য হচ্ছে; হজ শুধুমাত্র জিলহজ মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে সম্পন্ন হয় এবং ওমরা বছরের যে কোন সময় পালন করা যায়। হজ করার নিয়ম এবং ওমরা করার নিয়ম প্রায় একই। বরঞ্চ হজের তুলনায় ওমরা পালনের নিয়ম কম। মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম ঠিক হজ্জের নিয়মের মধ্যেই পরে।
হজ্জ যেমন সকলের জন্য ফরজ নয় শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিদের জন্য ফরজ ঠিক তেমনি যে সকল ব্যক্তির উপরে হজ্জ ফরজ সে সকল ব্যক্তির উপরে ওমরা করা নকল। ওমরা হচ্ছে নফল ইবাদত, যেমন আপনি নফল নামাজ যে কোন সময় পড়তে পারেন। ঠিক একইভাবে আপনি বছরের যে কোন দিনে শুধুমাত্র হজের দিন ব্যতীত ওমরা পালন করতে পারেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা হাজ্জ সমাপনের পর ওমরা এবং ওমরাহর পর হাজ্জ করবে, কেননা তা অভাব- অনটন ও পাপকে দূর করে দেয়, যেমন হাপর লোহার মরিচা দূর করে থাকে। [নাসাঈ /২৬৩২-আ, ই, দীনার (রঃ), ইবন মাজাহ /২৮৮৭
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং ঊনিশটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। আর হিজরাতের পর তিনি কেবল একবার হাজ্জ পালন করেন এবং তা হলো বিদায় হাজ্জ। এরপর তিনি আর কোনো হাজ্জ্ব পালন করেননি। আবূ ইসহাক বলেনঃ মাক্কায় অবস্থানকালীন তিনি ওমরা আদায় করেন। [ বুখারী/ ৪০৪৮- যা, ই, আরকাম (রাঃ)]
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞেস করা হলো; হজ্জ কি প্রতি বছর, না মাত্র একবার? তিনি বলেনঃ একবার মাত্র। অতঃপর এর অধিক করার কারো সামর্থ্য থাকলে তা নফল বা ওমরা। [ইবন মাজাহ/২৮৮৬- ইবন আব্বাস (রাঃ)]
ওমরা পালনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার প্রয়োজন হয় ইসলামে এই কাজগুলোকে দুভাগ ভাগ করেছে। এই কাজগুলো না করলে আপনার ওমরা কোনভাবে পালন হবে না। তাই আপনাকে অবশ্যই ওমরা পালনের জন্য এই নির্দিষ্ট কাজগুলো করতে হবে।
ওমরা পালনের নিয়ম মোতাবেক ওমরার আচার গুলো কে সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করা অবশ্য। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ওমরা পালনের সে নির্দিষ্ট জরুরী কাজ গুলো-
ওমরার ফরজ কি?
আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে স্টিমারে ওমরার জন্য জেদ্দা বন্দর থেকে ৩০ মাইল দক্ষিণে 'ইয়ালমলম' পাহাড়ের সোজা পৌঁছান তখন আপনাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। আর যারা বিমানে যাবেন তাঁরা ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার আগে ইহরাম বেঁধে নেবেন।
হজ্জে বা ওমরার আগে মদিনা শরীফ যাওয়ার চিন্তা থাকলে মক্কা শরীফ আসার সময় মদিনা মুনাওয়ারা থেকে ৬ মাইল দূরবর্তী 'জুল হোলায়ফা'নামক স্থানে ইহরাম বাঁধতে হবে। মনে রাখবেন, যে কোন উদ্দেশ্যেই হোক, বিনা ইহরামে মক্কা শরীফ যাওয়া জায়েয নয় । এটা আল্লাহ্র ঘরের তাজীম।
ইহরাম
ইহরাম বাধার আগে ভাল করে ক্ষৌরকর্ম করে নিন। তারপর সম্ভব হলে গোসল অথবা শুধু ওজু করে নিন। সেলাই আছে এরূপ সব পরিধেয় কাপড় ছেড়ে দিয়ে ৫ হাত লম্বা দু'খানা সাদা পাক কাপড় নিন এবং একখান পরতে হবে, অপরখানা শরীরে জড়িয়ে নিন (মহিলাদের ক্ষেত্রে বরখা পড়তে হবে)। এরপর ইহরামের দু'রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়ে নিন। নামাজ শেষে আপনি যে হজ্জ বা ওমরা করবেন তার নিয়ত করুন।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ
সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় ব্যবহার
মস্তক ও মুখমণ্ডল ঢাকা
পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা
চুল কাটা, ছেঁড়া
নখ কাটা
ঘ্রাণযুক্ত তেল বা আতর লাগানো
স্ত্রী সংগম করা
যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা
শিকার করা
ঝগড়া-বিবাদ বা যুদ্ধ করা
চুল-দাড়িতে চিরুনী বা অঙ্গুলী চালনা করা যাতে ছিঁড়ার আশংকা থাকে,
শরীরে সাবান লাগানো
উকুন, ছারপোকা ও মশা-মাছি মারা
কোন গোনাহের কাজ করা ইত্যাদি
তাওয়াফ
ওমরা পালনের নিয়ম এ সর্বপ্রথম কাজই হলো তাওয়াফ করা নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে রেখে পাক-পবিত্র হয়ে মোটেই দেরী না করে বাইতুল্লাহ শরীফে হাজিরা দিন। সারা জীবনের প্রত্যাশিত আল্লাহ রাব্বুল আলা'মীনের পবিত্র কাবা দর্শন করা মাত্র পড়ুন-
নিয়ত করে হাজারে আসওয়াদের সামনে আসুন এবং সুযোগ পেলে তাকে চুম্বন করুন। কিন্তু বেশী ভীড় অথবা মহিলাদের শরীরে ঘেঁষাঘেঁষি হতে পারে মনে করলে দূরে দাঁড়িয়েই কান পর্যন্ত দুহাত উঁচু করে বলুনঃ
بسم اللهِ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
"বিস্ মিল্লাহি আল্লাহু আকবার, ওয়া-লিল্লাহিল হামদু।" এবার দুই হাতে চুমু খেয়ে হাত নামিয়ে তাওয়াফ করুন।
ওমরার ওয়াজিব কি?
সাফা মারওয়ায় দৌড়ানো
মাথা কামানো
ওমরা পালনের নিয়ত
ওমরা পালনের নিয়ত ভালো করে মুখস্ত করে নিতে হবে। কেননা কোন নেক কাজের জন্য নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ-
মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম সম্পর্কে আলী ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমরা হাজ্জের উদ্দেশে (মাদীনা থেকে) বের হলাম। 'সাফির নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার হায়েয (মাসিক) হলো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং বললেনঃ কি হলো তোমার? তোমার হায়েয এসেছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ তো আল্লাহ্ তাআলাই আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন । সুতরাং তুমি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া হাজ্জের বাকি সব করে যাও। [ বুখারী/২৯০]
উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনাদের সাথে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশগ্রহণ করবনা ? তিনি বললেনঃ তোমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দর জিহাদ হলো মাকবুল হাজ্জ। আয়িশা (রাঃ) বললেন; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শুনার পর আর কখনো হাজ্জ ছাড়বনা বলে আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম। [বুখারী/১৭৩৪]
কোনো মুসলিম মহিলার জন্য সাথে তার কোনো মাহরিম (যাদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ) পুরুষ ব্যতীত এক রাতের পথও সফর করা বৈধ নয়। [মুসলিম/৩১৩২ -আবূ হুরাইরা (রাঃ)]
সাথে মাহরিম পুরুষ না থাকা অবস্থায় কোনো পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাত না করে। কোনো মহিলা যেন সাথে কোনো মাহরিম পুরুষ ছাড়া একাকী সফর না করে । এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার স্ত্রী হাজ্জের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে এবং আমাকে অমুক সৈন্যবাহিনীতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যা অমুক স্থানে যুদ্ধে যাবে। তিনি বললেন; তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হাজ্জ কর । [(মুসলিম/৩১৩৮- ইবন আব্বাস (রাঃ)]
মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম
হায়েয (মাসিক) অবস্থায় মহিলাদের বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা যাবে না।
বিবাহিত মহিলাদের তার অনুমতি নিয়ে ওমরা পালন করতে হবে।
মহিলাদের অবশ্যই সাথে একজন মাহারিম পুরুষ সাথে থাকা প্রয়োজন।
ইহরামে মহিলাদের মুখ ঢাকার সময় মুখে কাপড় লাগান দুরুস্ত নাই। আজকাল এই কাজের জন্য একপ্রকার জালিদার পাখা পাওয়া যায়,তা চেহারার উপর বাধে নিবেন। চোখ বরাবর জালি থাকবে,তার উপর বোরকা পরবেন এটি দুরুস্ত আছে।
যদি কারও কোন পাওনা-দেনা থাকে তা পরিশোধ করবেন।
যাদের সাথে কাজ কারেন তাদের নিকট হতে মাফ চায়ে নিবেন।
যদি কাজা নামায, রোযা, যাকাত, কোরবানী, ফেরা, মান্নত, কাফ্ফারা ইত্যাদি কোনকিছু যিম্মায় বাকী থাকে তা ওমরা পালনের আগে আদায় করে নিবেন।
হজ্জের খরচ হালাল মালের দ্বারা সংগ্রহ করবেন। কেননা, হারাম মালের দ্বারা কোন ইবাদত কবুল হয় না।
পরিশেষে হাদিসের আলোয় এক ওমরার পর আর এক ওমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (পাপের) কাফ্ফারা স্বরূপ। আর একমাত্র জান্নাতই কবুল হাজ্জের পুরস্কার [বুখারী/ ১৬৫১-আবূ হুরাইরা (রাঃ), মুসলিম/ ৩১৫৫, তিরমিযী / ৯৩৫, নাসাঈ / ২৬৩১]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রামজান এলে তখন ওমরাহ করে নিও। কেননা রামজান মাসের একটি ওমরাহ একটি হাজ্জের সমতুল্য। [বুখারী/ ১৬৬০- ইবন আব্বাস (রাঃ), মুসলিম/২৯০৪, ইবন মাজাহ / ২৯৯৪]
আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার ওমরা করেছেন। আশা করি আপনারা মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম গুলো খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন। ওমরা পালনের নিয়ম ও দোয়াসুমহ গুলো আপনার ডাইরীতে নোট করে রাখা উচিত।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url