ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় - মনের রোগের চিকিৎসা
মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। এর মধ্যে কিছু কিছু রোগ শারীরিক এবং কিছু রোগ মানসিক। ওসিডি (Obsessive compulsive disorder) তেমনি একটা মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি। আজকে আমরা জানবো ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয়। সেই সাথে আরো জানবো এ রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে।
শারীরিক রোগকে আমরা যেমন গুরুত্ব দিয়ে তেমনি মানসিক রোগটাকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। যদিও শারীরিক রোগের মতো মানসিক রোগটা ভাসমান নয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এটাকে অবহেলায় রেখে দেই। ওসিডি এক ধরনের মানসিক রোগ।
তবে ওসিডি রোগ কি নিরাময় যোগ্য? নাকি এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই? যদি চিকিৎসা থাকেই তাহলে সুস্থ হওয়ার জন্য ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয়? এ সকল বিষয় নিয়ে আজ আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক ওসিডি রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
ওসিডি মানে কি?
obsessive compulsive disorder বা সংক্ষেপে (ওসিডি) হচ্ছে এক ধরনের মানসিক ব্যাধি। এটি শুচিবাই রোগ নামেও পরিচিত। এই রোগ হলে মানুষের আচরণগত অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার অনর্থক চিন্তায় মগ্ন থাকে ।একই চিন্তার বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এবং সেই চিন্তা অনুযায়ী কাজ করার তীব্র ইচ্ছা জাগে । পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে ওসিডি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি একটি চক্রের মধ্যে আটকে পরে।
ওসিডি রোগ কাদের হতে পারে
ওসিডি রোগ নারী-পুরুষ কিংবা শিশু যেকোনো ব্যক্তির হতে পারে। তবে এই রোগটি প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে এবং বয়সন্ধিকালে বেশি দেখা যায়। এছাড়াও ছয় বছর বয়স থেকে এই রোগ মানুষের মধ্যে বাসা তৈরি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি । আপনার পুরুষত্বকে বাড়ান এই ১১ উপায়ে
ওসিডি রোগ যে কারনে হয়ে থাকে
ওসিডি রোগ মূলত কি কারনে হয় তা নিয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন কারণে এই রোগটি হতে পারে। নিচে তার কিছু উদাহরণ দেয়া হলো:-
- মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে।
- ডোপামিন হরমোনের তারতম্যের কারণেও ওসিডি রোগ লক্ষণীয় হয়।
- মাদকদ্রব্য কিংবা উত্তেজনাকর পদার্থ গ্রহণ করার মাধ্যমে ও এ রোগের আবির্ভাব ঘটতে পারে।
- এ রোগের প্রজননগত বৈশিষ্ট্য আবিষ্কৃত না হলেও রোগ হওয়ার পেছনে এটি দায়ী থাকতে পারে।
- জিনগত সমস্যার কারণেও ওডিসি রোগ হতে পারে।
- মস্তিষ্কে স্বাভাবিক বিকাশ না হওয়াও ওসিডি রোগের অন্যতম কারণ বলে বিবেচনা করা হয়।
- প্রতিকূল পরিবেশে শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠার কারণেও ওসিডি রোগ হতে পারে।
- পরিবারের কেউ ওসিডি রোগে আক্রান্ত থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। অনেক সময় বংশগত কারণেও ওসিডি রোগ হতে পারে।
- সিজোফ্রেনিয়া নামক রোগের শুরুতে ওসিডি রোগ দেখা দিতে পারে।
- মারাত্মক কোন দুর্ঘটনা জনিত ঘটনা বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পর থেকেও ওসিডি হতে পারে।
ওডিসি রোগের লক্ষণ সমূহ
ওসিডি রোগের লক্ষণসমূহ খুবই সূক্ষ্ম হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময় এই রোগ নির্ণয় করা সহজ হয় না। বয়সন্ধিকালে কিশোর কিশোরীরা তাদের সমস্যাগুলো সহজে বলতে চায় না বা গোপন রাখতে চায়। তবুও কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে এই রোগটি ধারণা করা যায়। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:-
- বারবার একই চিন্তার ভাবনার ভেতরে আটকে থাকা এবং সেই ভাবনা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা।
- যৌনতার বিষয়গুলো এবং ধর্মীয় কাজে নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা বা ভাবনা পোষণ করা।
- যেকোনো সাধারণ ঘটনাতেও মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়া এবং অতিরিক্ত রাগ দেখানো।
- ছোটখাটো কাজের জন্য অকারণে ভীত থাকা। যেমন: দরজা জানালা বন্ধ আছে কিনা বারবার পরীক্ষা করা, একই হাতকে বারবার অকারনে ধোঁয়ার মতো অভ্যাস থাকা, সকল কাজে দ্বিধাগ্রস্ত থাকা।
- যেকোনো কাজে স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত সময় নেওয়াও ওসিডি রোগের লক্ষণ হতে পারে।
- ঘুম না হওয়া ও হঠাৎ পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করার পেছনেও ওসিডি রোগের দায়বদ্ধতা থাকতে পারে।
এগুলো মূলত ওসিডি রোগের স্বাভাবিক লক্ষণসমূহের মধ্যে পড়ে। এ লক্ষণ গুলো দেখা দিলে ওসিডি রোগ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অভিজ্ঞ মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে ওসিডি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
ওসিডি রোগের প্রতিকার
ওসিডি রোগের লক্ষণসমূহ খুবই সূক্ষ্ম হওয়ায় তা নির্ণয় করতেই সমস্যা দেখা দেয়। এ রোগে যারা আক্রান্ত হয় ভয়াবহ মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে হয়। তাই প্রাথমিকভাবে এ রোগ ধরা পড়লে এবং তার চিকিৎসা গ্রহণ করলে কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।
ওসিডি রোগ কে কখনোই কৈশোর ের স্বাভাবিক পরিবর্তন বলে ধারণা করা যাবে না। ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেক আক্রান্তের বিপদজনক পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে। নিচে ওডিসি রোগের সাধারণ প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
সাইকোলজিকাল চিকিৎসা এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। সাইকোলজিকাল চিকিৎসার মধ্যে' কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি' ওসিডি রোগের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর। এখানে রোগীর ভুল চিন্তা ভাবনা থেকে স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা করা হয়।
আরো পড়ুনঃ যোনি চুলকানি দূর করার ক্রিম ১০০% কার্যকারী মাধ্যম ২০২৩
প্রফেশনাল থেরাপিস্টদের দ্বারা ইআরপি বা এক্সপোজার এন্ড রেস্পন্স প্রিভেনশন পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগীর আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা হয়। রোগীকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার পর বিভিন্ন সমস্যার সাথে মোকাবিলা করতে দেয়া হয়।
যেকোনো মানসিক রোগের জন্য মেডিটেশন অত্যন্ত কার্যকর প্রক্রিয়া। থেরাপি দেয়ার পরেও ওসিডি সম্পূর্ণ সুস্থ না হলে রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য মেডিটেশনের পরামর্শ দেওয়া হয়। মেডিটেশন এর ফলে রোগীর স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
কিছু আন্টি ডিপ্রেসেন্ট ঔষধ আছে যেগুলো ওসিডি রোগীদের জন্য তুলনামূলক ভালো কাজে আসে।মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে কাউন্সিলিং করলে ওসিডি রোগের বিরুদ্ধে সবচাইতে বেশি কার্যকর ফল পাওয়া যায়।
ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয়
ওসিডি মূলত একটি মানসিক রোগ। সাধারণত কোন ব্যক্তি যদি মনের অজান্তেই অনেক কিছু ভেবে মানসিকভাবে কষ্ট পায় তাহলে তাকে ওসিডি বলা হয়ে থাকে। আর মানসিক যে কোন রোগের প্রভাব আমাদের শরীরেও পড়ে। কারন আমাদের মানসিক অবস্থা যদি সুস্থ না থাকে তবে আমাদের খাওয়া-দাওয়া ঘুম কোনটাই ঠিক মতো হয় না।
ওসিডি রোগীর মূল চিকিৎসা হলো নিজেকে মানসিকভাবে শান্ত রাখা। এক্ষেত্রে প্রতিদিন যোগাসন এমনকি প্রচুর পরিমাণে শারীরিক ব্যায়াম বেশ কাজে আসতে পারে। কিন্তু অবশ্যই এর ডাক্তারি চিকিৎসা রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একজন মানসিক ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা।
ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় তা আসলে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ মানসিক রোগ নির্ণয় করার পর ডাক্তাররা ধাপে ধাপে এর চিকিৎসা করে থাকে। তাই ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয় তা একমাত্র ডাক্তার তার রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেই বলতে পারবে। তাই অবশ্যই যে কোন মানসিক রোগ অবহেলা করা উচিত নয়। একজন ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।
ওসিডি রোগীদের জন্য বিশেষ পরামর্শ
দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার মাধ্যমে ওসিডি রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব। তবে এই রোগ বারবার ফিরে আসতে পারে। বহুদিন পর ও এই রোগের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তাই দীর্ঘদিন চিকিৎসা করার মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে (বিস্তারিত দেখুন)
নিয়মিত শরীর চর্চা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতি করা সম্ভব। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য কিংবা অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে। মাদকদ্রব্য মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম কে বাধাগ্রস্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
নিয়মিত মেডিটেশন কিংবা রিলাক্সেশন টেকনিক অবলম্বন করে মানসিক চাপ কমানোর জন্য কার্যকর উপায় অভ্যাসে রাখতে হবে।
পরিশেষেঃ ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় - মনের রোগের চিকিৎসা
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে আমাদের উচিত ওসিডি রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া। প্রথম থেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই রোগ খুব একটা বেশি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে না। সেই সাথে আমরা এই আর্টিকেল থেকে জানলাম কি কি কারনে মূলত ওসিডি রোগ হয়, ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয়। এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।
এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হলেই আশা করা যায় এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে আর্টিকেল পড়ার জন্য। আশা করছি আপনার উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।
ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ ওসিডি রোগ হলে কি ভয়ের কোন কারণ আছে?
উত্তরঃ এটি যদিও প্রাণঘাতী কোন রোগ নয়। তবে এ রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই যদি এ রোগের প্রথম দিকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয় তাহলে অতিসত্বর চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
প্রশ্নঃ ওসিডি রোগের চিকিৎসা কোথায় করলে ভালো হয়?
উত্তরঃ যেহেতু ওসিডি একটি মানসিক রোগ সেহেতু অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। সার্টিফাইড চিকিৎসক ছাড়া এ ধরনের জটিল রোগ চিকিৎসা করতে সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্নঃ ওসিডি রোগ হলে ধৈর্য ধারণ করা উচিত কিনা?
উত্তরঃ অবশ্যই এই রোগে ধৈর্য ধারণ করা অতীব জরুরী। কারণ এর চিকিৎসা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ। ধৈর্য ধরে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব নয়।তাই রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত চিকিৎসা করতে হবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url