ইস্তেখারা দোয়া - ইস্তেখারা নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ
নামহীন
২১ অক্টো, ২০২৩
আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় যেখানে আমাদেরকে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এস্তেখারা নামাজ এমন একটি ইবাদত যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো জানেন না ইস্তেখারা নামাজ কি? আর যারা এই নামাজ সম্পর্কে জানেন এবং পড়তে চান কিন্তু এই নামাজের নিয়ম ও ইস্তেখারা নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ জানেন না, আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র তাদের জন্যই। আশা করবো শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবেন এবং সুষ্ঠুভাবে ইস্তেখারা নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানবেন।
সূচিপত্রঃ ইস্তেখারা দোয়া বাংলা উচ্চারণ- ভালো কাজের শুরুতে ইস্তেখারা নামাজ আদায় করুন
ইস্তিখারা মানে যে কোন কাজ বা কাজের ব্যাপারে আল্লাহকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য অনুরোধ করা।ইস্তেখারা নামাজ হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যেখানে আপনি সরাসরি আল্লাহ তালার কাছ থেকে আপনার আপনার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা তা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার পরামর্শ লাভ করতে পারেন।
এটা কি চমৎকার একটি মাধ্যম তাই না ! আসলে আমাদের সকলের উচিত আমাদের প্রয়োজনের সময় যখন আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি তখন অবশ্যই ইস্তেখারার নামাজ আদায় করে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করা।
যদিও আল্লাহ তাআলা আমাদের সবকিছু সম্পর্কে অবগত, তারপরেও আমাদের তার কাছেই সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য আশ্রয় চাওয়া। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী, তাই তিনি কখনোই আমাদের এমন কোনো পরামর্শ দিবেন না যা আমাদের জন্য অকল্যাণকর হয়।
ইস্তেখারা নামাজ কেন পড়তে হয়?
যখন আমাদের কোন কাজ করার ইচ্ছা করবে তখন আগে আল্লাহ তায়ালার দরবারে খায়ের বরকতের জন্য দোয়া করতে হবে,তারপর সে কাজে হাত দিতে হবে। আর ইসলামে এই মঙ্গল প্রার্থনা কে বলা হয় "ইস্তেখারা নামাজ"।
হাদিস শরীফে সব কাজের পূর্বে ইস্তেখারা নামাজ আদায় করার বিশেষ উৎসাহ দেওয়া হয়েছে; "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন আল্লাহ তাআলার নিকট মঙল ও বরকতের জন্য দোয়া না করা বদবখতির আলামত(ফজর,ওয়াজিব এবং নাজায়েয কাজের জন্য ইস্তেখারা নাই)।"
এখন আপনাদের মধ্যে অনেকইর প্রশ্ন জাগতে পারে যে আসলে কোন সময়টা ইস্তেখারা নামাজ আদায় করার জন্য সর্বোত্তম? আপনার এই সাধারণ প্রশ্নটি জবাব হচ্ছে; ইস্তেখারা নামাজ বিশেষত সেই সকল প্রয়োজনীয় ও অনন্ত গুরুতবপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহন করার জন্য আদায় করা হয়, যা আমাদের সারাজীবনের একটি বড় সিদ্ধান্ত হতে চলেছে।
যেমন বিবাহ, বিদেশ সফর বা বাড়ি নির্মাণ যাবতীয় সকল বড় বড় কাজ যা আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে। এ সকল কাজের আগে ইস্তেখারা নামাজ আদায় করার পর ইনশাল্লাহ আল্লাহতালা ভালো ফল দিবে এবং পরে হতাশা হাত থেকে রক্ষা করবে।
ইস্তেখারা নামাজের দোয়া
ইস্তেখারা নামাজের দোয়া টা আরবিতে নিচে দেওয়া হলো। অনেকেই হয়তো আরবী ভালো করে জানেন যারা জানেন তাদের জন্য আরো সহজ করার জন্য আমরা নিচে সম্পূর্ণ ইস্তেখারা দোয়া আরবি উচ্চারন লিখে দিলাম।
হাদীসের বর্ণনায় ইস্তিখারা বর্ণনা করা হয়েছে,"জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইস্তিখারা নামাজ আদায় করার পদ্ধতি শেখাতেন, যে সমস্ত বিষয়ে তিনি আমাদের শিক্ষা দিতেন তা কুরআনের সূরাগুলো। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যদি কোন কাজ করার কথা মনে করে, সে যেন ফরজ ছাড়া অন্য দুই রাকাত নামাজ পড়ে এবং নামাজের পর এই দোয়াটি পাঠ করে"-
''হে আল্লাহ্! তুমি জান, আমি জানি না, তুমি ক্ষমতাবান, আমি অক্ষম অর্থাৎ, ভবিষ্যতের এবং পরিণামের খবর অন্য কেই জানে না, একমাত্র তুমিই জান; এবং তুমি সর্বশক্তিমান। মন্দকেও ভাল করে দিতে পার; কাজের শক্তিও তুমিই দান কর, চেষ্টাকে ফলবতীও তুমিই কর, কাজেই আমি তোমার নিকট মঙ্গল চাইছি এবং কাজের শক্তি প্রার্থনা করছি।
হে আল্লাহ্! যদি এই কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীনের জন্য, আমার দুনিয়ার জন্য এবং আমার পরিণাম ও আকেবতের জন্য তুমি ভাল মনে কর, তবে এই কাজটি আমার জন্য তুমি নির্ধারিত করে দাও এবং তা আমার জন্য সহজলভ্য করে দাও এবং এতে আমার জন্য খায়ের বরকত দান কর।
পক্ষান্তরে যদি এই কাজটি আমার পক্ষে, আমার দ্বীনের পক্ষে বা দুনিয়ার পক্ষে বা পরিণামের হিসাবে আমার জন্য মন্দ হয়, তবে এই কাজকে আমার হতে দূরে রাখ, আর যেখানে মঙ্গল আছে তা আমার জন্য নির্ধারিত করে দাও এবং তাতেই আমি যেন সন্তুষ্ট থাকি।''
বিঃদ্রিঃ
যখন ('হাযাল আমরি') শব্দটি মুখে উচ্চারণ করবেন, তখন যে কাজ করার ধারণা করা আছে মনে মনে তা স্মরণ করবেন। তারপর পাক বিছানায় ওজুর সহিত পশ্চিম দিকে মুখ করিয়া শয়ন করিবে। ভোরে উঠিয়া মন যেদিকে ঝুঁকে বলিয়া মনে হয়। তা করবেন, তাতেই ইনশাআল্লাহ্ ভাল হবে। অনেকে মনে করে, "ইস্তেখারা" দ্বারা গায়েবের রহস্য জানা যায় বা স্বপ্নে কেউ বলে দেয় তা জরূরী না। তবে স্বপ্নে কিছু জানতেও পারে আবার নাও জানতে পারে।
ইস্তেখারা দোয়া বাংলা উচ্চারণ
আমরা বাংলাভাষীদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আরবি ভাষা ভালো করে বা শুদ্ধভাবে উচ্চারণ না করতে পারা। আপনার খুব ইচ্ছা ইস্তেখারার নামাজ আদায় করার কিন্তু আপনি আরবি পড়তে পারেন না ! এই সমস্যার সমাধান আমাদের কাছে আছে।
আমরা এখানে আপনার জন্য শুদ্ধভাবে ইস্তেখারা দোয়া বাংলা উচ্চারণটি ব্যাখ্যা করছি। আমাদের আর্টিকেল থেকে ইস্তেখারা দোয়া বাংলা উচ্চারণ টি আপনি খুব সহজেই মুখস্ত করতে পারবেন এবং ইনশাআল্লাহ সহী সুদ্ধভাবে আপনি ইস্তেখারা নামাজ আদায় করতে পারবেন।
অর্থঃ"হে আল্লাহ! আমি কাবা ঘরের দিকে মুখ করে একমাত্র আপনার সনতুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাতুল ইস্তেখারার দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়িতেছি।"
ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম কি ?
ইস্তেখারা নামাজ হচ্ছে একটি নফল নামাজ যা অন্যান্য নামাজের নিয়মে পড়া হয়। এরপরও যদি কারো মনে তাহলে সেজন্য আমরা বিস্তারিত একটি তালিকা দিলাম এই নফল নামাজটা আদায় করার জন্য। ইস্তেখারা নামাজ দুই রাকাত নফল নামাজ এবং এই নামাজ আদায় করার পর ইস্তেখারা দোয়া পাঠ করতে হবে।
ইস্তেখারা নামাজের প্রথম রাকাত
প্রথমে নিয়ত- "আমি দুই রাকাত সালাতুল ইস্তেখারা করার নিয়ত করছি" পাঠ করে নিয়ত করুন।
আপনি তাকবীর "আল্লাহু আকবার" বলুন এতে নামাজ শুরু হয়।
সানা "সুবহানাকা" পাঠ শুরু করুন।
আপনি তারপর "আউদু বিল্লাহি মিন-আশ-শাইতা-নির-রাজিম বিসমিল্লাহ-ইর-রহমান-ইর-রহীম" বলে সূরা আল ফাতিহা পাঠ করুন।
এর পর সূরা আল-কাফিরুন তেলাওয়াত করে সূরা মিলান।
রুকুতে যান এবং "সুবাহানা রাব্বিয়াল আজীম" পাঠ করুন ৩ বার।
১ম সেজদায় যান এবং "সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা" পাঠ করুন ৩ বার।
এবার প্রথম সেজদা থেকে জলসা অবস্থায় বসুন (দুই সাজদার মাঝখানে বসার অবস্থান)
এখন ২য় সেজদায় যান এবং "সুবাহানা রব্বিয়াল আ'লা" পাঠ করুন ৩ বার।
ইস্তেখারা নামাজের দ্বিতীয় রাকাত
পরবর্তী রাকাআতে যাওয়ার জন্য উঠুন,
আপনি বলুন "বিসমিল্লাহ-ইর-রহমান-ইর-রহীম"
সূরা আল ফাতিহা পাঠ করে সূরা আল-ইখলাস তেলাওয়াত করুন।
রুকুতে যান এবং "সুবাহানা রাব্বিয়াল আজীম"পাঠ করুন ৩ বার।
১ম সেজদায় যান এবং "সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা"পাঠ করুন ৩ বার।
এবার প্রথম সেজদার পর জলসা অবস্থায় বসুন যা দুই সাজদার মাঝখানে বসার অবস্থান।
এখন ২য় সেজদায় যান এবং "সুবাহানা রব্বিয়াল আ'লা"পাঠ করুন ৩ বার।
এর পরে, আপনি তাশশাহুদে বসবেন; আপনি আত-তাহিয়্যাত, দরুদ শরীফ, আল্লাহুউম্মা বারিক এবং রব্বানা আতিনা পাঠ করবেন।
তারপর ডানদিকে মুখ ফিরিয়ে "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ" বলে তারপর বাম দিকে এবং একইভাবে করবেন।
এরপর ইস্তেখারা দোয়া বাংলা উচ্চারণ এর সাথে পড়তে হবে ও আল্লাওর কাছে দোয়া করতে হবে।
লেখকের মন্তব্যঃইস্তেখারা দোয়া বাংলা উচ্চারণ- ভালো কাজের শুরুতে ইস্তেখারা নামাজ আদায় করুন
আল্লাহ তায়ালার কাছে মঙ্গল ও বরকত কামনা করে দোয়া করা হচ্ছে ইস্তেখারা নামাজের আসল উদ্দেশ্য। অর্থাৎ মন যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোন দিকেই না ঝুকে এরপরও ইস্তেখারা আদায় করে কাজ বা সিদ্ধান্ত নিলে আল্লাহর রহমতে অবশ্যই কাজটি মঙ্গল হবে। কিন্তু আপনার মনে রাখা উচিত যে ফরজ কাজের ক্ষেত্রে ইস্তেখারা নেয়।
অর্থাৎ যে কাজটি ফরজ তা অবশ্যই করতে হবে এতে আপনার মন কাজটি করতে ঝুকুক অথবা না ঝুকুক। আর এ কথাটি অবশ্যই মনে রাখবেন আপনি কোন কারণে ইস্তেখারা নামাজ আদায় না করতে পারলে ইস্তেখারার দোয়াটি পড়ে নিবেন তাও এই সুন্নাহ ছাড়বেন না।
আশা করি আমাদের আর্টিকেল পড়ে আপনি ইস্তেখারা সম্পর্কে খুঁটিনাটি সকল তথ্য জেনে ফেলেছেন। আমাদের এই প্রতিবেদনটি কার্যকরী মনে হল অবশ্যই আপনার আশেপাশের সকলের সাথে শেয়ার করবেন।
ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম কি তা নিয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর । FAQs
ইস্তেখারা নামাজের সময় কখন?
বেশির ভাগ ইসলামবিদ ও আলেমদের মতে যে সময় গুলোতে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ, সেই সময় বাদে যেকোনো সময় ইস্তেখারা নামাজ আদায় করা যায়। নামাজ এর নিষিদ্ধ সময় বলা হচ্ছে; ফজরের পর হতে যোহরের আগ পর্যন্ত এবং আসরের নামাজের পর হাতে মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত।
ইস্তিখারা কি সুন্নত নাকি নফল?
ইস্তেখারা নামাজ নফল নাকি সুন্নাত নামাজ তা নিয়ে অনেকেই অজানা। আসলে ইস্তেখারা হচ্ছে একটি নফল নামাজ যা আমাদের রসুল (সাঃ) তার জীবনে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এবং বিশেষ কাজ করার পূর্বে ইস্তেখারা আদায় করতেন।
ইস্তেখারা কতদিন করতে হয়?
যদি আপনার মন ঠিক না হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য, সেই হ্মেত্রে আপনি পরপর সাতদিন ইস্তেখারা নামাজ পড়তে পারবেন। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি আপনি আপনার সিদ্ধান্ত ঠিক করার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রস্তুত হয়ে যাবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url