ঘন ঘন মাসিক হলে কি করনীয় - ঘন ঘন মাসিকের চিকিৎসা
প্রত্যেক নারীর জীবনে মাসিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। প্রতিমাসেই নারীরা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়। মাসিক নিয়মিত হওয়া খুবই প্রয়োজন। তবে ঘন ঘন মাসিক হওয়া খুব একটা ভালো ব্যাপার নয়। তাই অনেকেই জানতে চায় ঘন ঘন মাসিক হলে কি করনীয়। আজ আমাদের আর্টিকেলে ঘন ঘন মাসিক হলে কি করনীয় তা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
মাসিক অনিয়মিত হলে প্রত্যেকটি নারী দুশ্চিন্তা করে থাকে। তবে নিয়মিত মাসিক হওয়া মানে এটি নয় যে ঘন ঘন মাসিক হবে। মাসে একবার মাসিক হয় হল একেবারে সুস্থ প্রক্রিয়া।
মানুষ ভেদে একেকজনের মাসকের সময়ের স্থায়িত্ব ভিন্ন হয়ে থাকে। অনেকের তিনদিন থেকে আবার অনেকে পাঁচ দিন কারো কারো আবার সাত দিনও থাকে। মাসের মধ্যে একবারের বেশি অধিক মাসিক হওয়াটা কোন ভালো লক্ষণ নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘন ঘন মাসিক হলে কি করনীয়:
ঘন ঘন মাসিক কেন হয়
নিয়মিত মাসিক হওয়াটা অনেক বেশি জরুরী। নারীর শরীর কতটা সুস্থ রয়েছে তা উপলব্ধি করা যায় নিয়মিত মাস িক হওয়ার মাধ্যমে। প্রতিটি মাসের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাসিক হওয়ার মানে হল নারীর শরীর সুস্থ রয়েছে এবং তিনি সন্তান ধারণের যোগ্য অবস্থায় আছেন। তবে অনেকেই ঘন ঘন মাসিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন। তারা নিজেও জানেনা কেন ঘনঘন মাসিক হচ্ছে এবং ঘন ঘন মাসিক হলে করণীয় কি। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘন ঘন মাসিক কেন হয়:
উচ্চ মানসিক চাপ:
হাইপোথ্যালামাস নামের একটি বিশেষ অংশ আমাদের মস্তিষ্কে থাকে। আর এই বিশেষ অংশ থেকে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কার্যকরী হরমোন নিঃসরিত হয়। এবং নারীদের মাসিকের সাথে সম্পর্কিত কিছু হরমোন ও এই বিশেষ অংশ থেকেই নিঃসরিত হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামের বিশেষ অংশটি ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মাসিকের নিয়মটা এর কন্ট্রোলে থাকে না। এতে ঘন ঘন মাসিক হতে পারে।
কম ওজন:
শরীরে হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়াটা যেমন সমস্যা তেমনি হঠাৎ ওজন কমে যাওয়াটাও একটি। ২০ বছরের উপরের নারীদের যদি হঠাৎ করেই ওজন কমে যায় এবং বিএমআই রেট ঠিক না থাকে তাহলে মাসিক অনিয়মিত হতে শুরু করে। এবং এতে অল্প অল্প করে ঘন ঘন মাসিক হতে পারে। তাই সুস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য ওজন ঠিক রাখা একান্ত প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ মাসিকের রক্ত কালো হলে করণীয় এবং ঘরোয়া সমাধান ২০২৩
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:
ঘন ঘন মাসিক হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে বেশিরভাগ নারীদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হয়ে থাকে। যা ঘনঘন মাসিক হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
ঘন ঘন মাসিক হলে কি করনীয়
নারীদের মাসিক চক্র সাধারণত ২৮ দিন পর পর হয়ে থাকে। কিন্তু একই মাসে দুইবার বা তিনবার মাসিক হওয়াটা কোন স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘন ঘন মাসিক হলে কি করনীয়-
১. প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন অন্তত চার থেকে পাঁচ লিটার পানি পান করুন। পানি শরীরকে পরিশুদ্ধ করে এবং মাসিক নিয়মিত করে।
২. শরীরে বেশি চাপ দিয়ে ব্যায়াম করবেন না। আপনার শরীরে যতটুকু সহ্য ক্ষমতা আছে ততটুকুই ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত ব্যায়াম মাসিক কি অনিয়মিত করে তুলতে পারে।
৩. মাসিক নিয়মিত করার বেশ কিছু যোগব্যায়াম রয়েছে। ইউটিউবে সার্চ করলে আপনি এমন অনেক যোগব্যায়াম পাবেন যা মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে। সেগুলো করার চেষ্টা করুন।
৪. নিজেকে মানসিক চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ মাসিককে অনিয়মিত করে তোলে। তাই মানসিক অবসাদ দূর করুন।
৫. অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ঘনঘন মাসিক হওয়াটা যে কোন রোগের উপসর্গ হতে পারে। তাই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা করলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।
৬. প্রোটিন জাতীয় খাবার খান। শরীরে পুষ্টির অভাবের কারনেও মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। অল্প অল্প করে বারবার মাসিক হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন প্রোটিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খেতে।
৭. হঠাৎ করে পিল খাওয়ার কারণেও মাসিক অনিয়মিত হতে পারে এবং ঘন ঘন মাসিক হতে পারে। এ থেকে ভয় পাবার কিছু কারণ নেই। এটি সহজেই ঠিক হয়ে যাবে।
ঘন ঘন মাসিক হলে করণীয় কেন হয় সমাধান জানুন
ঘন ঘন মাসিকের চিকিৎসা
প্রত্যেকটি রোগেরই নির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে। তেমনি ঘনঘন মাসিক বন্ধ করারও সু চিকিৎসা রয়েছে। প্রথমে চিকিৎসকরা কেন ঘন ঘন মাসিক হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করে। যদি হরমোনার কোন সমস্যার কারণে ঘন ঘন মাসিক হয়ে থাকে তবে রোগীকে হরমোনাল থেরাপি দিয়ে থাকে।
আর কারো যদি ওজন বেশি হওয়ার কারণে ঘন ঘন মাসিক হয়ে থাকে তবে তাকে ডায়েট ও ব্যায়াম করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এবং যদি ওজন কম হওয়ার কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে তবে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে চিকিৎসকরা।
আরো পড়ুনঃ ৭২ ঘন্টার পিল এর নাম | ইমার্জেন্সি পিল কতটা নিরাপদ ২০২৩
রক্তপাত সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে হওয়ার জন্য আয়রন সাপ্লিমেন্টও দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাওয়াই উচিত নয়। মাসিক ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নারীদের মা হওয়ার সাথে জড়িত। তাই ভুল ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
ঘন ঘন মাসিক প্রতিরোধের উপায়
১. স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন।
২. নিজেকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। কোন কিছু নিয়েই অতিরিক্ত চিন্তা করাটা আপনার শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। তাই নিজেকে চিন্তা ও অবসাদমুক্ত রাখুন।
৩. ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সঠিক ওজন আপনার সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম করুন। তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না। আপনার শরীর যতটুকু সহ্য করতে পারবে ঠিক ততটুকুই আপনি ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
৫. জাঙ্ক ফুড বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান। বিশেষ করে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
সবশেষেঃ ঘন ঘন মাসিক হলে কি করনীয় - ঘন ঘন মাসিকের চিকিৎসা
আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা বুঝতে পেরেছেন ঘনঘন মাসিক হলে কি করনীয়। কোন রোগ হলে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদিও মাসিক অনিয়মিত হওয়াটা চিন্তার বিষয়। তবে দুশ্চিন্তা না করে সুস্থ জীবনযাত্রা অনুসরণ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। আপনাদের সুস্থতাই আমাদের একান্ত কাম্য। সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঘন ঘন মাসিক হলে কি করনীয় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
ঘন ঘন মাসিক হলে কি ভয়ের কোন কারণ আছে?
হঠাৎ করে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘন ঘন মাসিক হতে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা এই সমস্যা সমাধান মিলবে। তবে ঘন ঘন মাসিক হওয়া অন্য রোগের উপসর্গ হতে পারে। সবচেয়ে শ্রেয় হলো ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
ঘন ঘন মাসিক হলে কি ট্যাবলেট খাব?
মাসিকের ব্যাপারটা সম্পূর্ণই নারীর মা হওয়ার সাথে সম্পর্কিত। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই ওষুধ খাওয়া উচিত নয় এতে করে আপনি বন্ধাও হতে পারেন। একেক বয়সে একেক ধরনের ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয়। তাই যে কোন ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন।
ঘন ঘন মাসিক হলে কি করনীয়?
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, পুষ্টিকর খাবার খান এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন। এতে করে সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url