গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার কার্যকারী ১০টি উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় যে কোন খাবার খাওয়ার আগে গর্ভবতী নারীরা দুইবার ভেবে থাকেন। কারণ গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত বুঝে শুনে খাবার খেতে হয়। বিশেষ করে ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে তো অবশ্যই ভেবে খাওয়া উচিত। কারন আমরা জানি পেঁপে এমন কে আরো অনেক ফল রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া ক্ষতিকর। অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি। যদিও সেইক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় যে কোন ফলই পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিৎ।
গর্ভাবস্থায়, যে কোন ফলই অতিরিক্ত পরিমানে খেলে তা ক্ষতিকারক প্রমাণিত হতে পারে। ডাক্তাররা সাধারণত গর্ভাবস্থায় নারীদের কে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পেয়ারা যে অত্যন্ত একটি পুষ্টিকর খাবার তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। অসংখ্য পুষ্টিগুণের কারনেই গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার নানা উপকারিতা রয়েছে। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়া কি নিরাপদ
গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট পরিমাণে পেয়ারা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। দিনে ১০০ থেকে ১২৫ গ্রাম ওজনের বেশি পাকা পেয়ারা খাওয়া উচিত হবে না। কারণ অতিরিক্ত যে কোন কিছুই গর্ভবতী স্ত্রী ও গর্ভবতী শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পেয়ারা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে গর্ভবতী নারী যেকোনো রোগের আক্রমণ থেকে সহজে রক্ষা পেতে পারবে। তাই নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া গর্ভবতী নারীর জন্য অত্যন্ত নিরাপদ।
আরো পরুনঃ গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয় | মুড়ি খাওয়ার ৫টি উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভধারণকালে খাওয়া-দাওয়ার মায়ের ওপর যেমন জোর দেওয়া হয়, তেমনই তাকে বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়ার কথাও বলা হয়। তবে গর্ভবতী স্ত্রীদের বেশ কয়েকটি ফল খাওয়া বারণ। তাই তাদের করে যে কোনও ফল বাছ বিচার খাওয়া উচিত। তবে পেয়ারা এমন একটি ফল যা স্বাস্থ্যোপযোগী এবং অনেকেই এটি খেতে ভালোবাসেন।
তবে গর্ভবতী স্ত্রীরা পেয়ারা খেতে পারেন কী না, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রায়ই সংশয় থেকে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মনে প্রশ্ন জাগে এ সময় পেয়ারা খাওয়া উচিত কী না? আমি বলবো হ্যা তবে নির্দিষ্ট পরিমানে খেতে হবে। নিচে গর্ভধারণকালে একজন মায়ের পেয়ারা খাওায়ার উপকারিতা উল্লেখ করা হলো,
উপকারিতা ১ > রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
পেয়ারাতে ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। পেয়ারা মেটাবলিজম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে নানান রোগ ও সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। এই পেয়ারা খাওয়ার ফলে আগত শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে গর্ভে থাকা সন্তান সুস্থ সবল হয়ে জন্ম নিতে পারে।
উপকারিতা ২ > রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
গর্ভাবস্থায় যদি গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে পেয়ারা এ ক্ষেত্রে আপনার সাহায্য করতে পারে। এছাড়া পেয়ারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে গর্ভপাত এবং প্রিম্যাচিওর প্রসবের ঝুঁকি কম করে। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় পেয়ারা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে এবং এটি বাড়তে দেয় না। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে গর্ভবতী মা পেয়ারা খেতে পারে।
উপকারিতা ৩ > রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে
প্রেগনেন্সিতে, বিশেষত ২৪ সপ্তাহের গর্ভাবস্থার পর কোনও স্ত্রীর গর্ভকালীন মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হওয়া সবচেয়ে সাধারণ একটি ঘটনা হয়ে থাকে। তবে পেয়ারায় উপস্থিত জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের প্রাচুর্য রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে আগত সন্তানের সুসাস্থে অনেক সাহায্য হয়ে থাকে। কারণ শর্করা মা এবং সন্তানের উভয়ের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে। পেয়ারা খাওয়ার মাধ্যমে এই শর্করা এর চাহিদা মেটানো সম্ভব।
উপকারিতা ৪ > কোষ্ঠকাঠিন্য ও হেমোরয়েড দূরে রাখে
গরভদারণ অবস্থায় দেহের গর্ভবতী মহিলাদের হরমোনের গতি কম হয়ে পড়ায় গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য ও হেমোরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। ফাইবারে সমৃদ্ধ পেয়ারা এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি খাওয়া যাবে - গর্ভবতী মায়ের কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে গ্যাস, পিঠে ব্যথা, ক্লান্তির মতো আরও অনেক অসুস্থতা দেখা দেয়। এইক্ষেত্রে ফাইবার এবং জল সমৃদ্ধ পেয়ারা এই কোষ্ঠকাঠিন্যে কমাতে পারে। রোজ যদি একটি করে পেয়ারা খান, তবে দ্রুত সুফল পাওয়া যাবে। তাই একজন মায়ের গরভদারণ অবস্থায় পেয়ারা খাওয়া উচিত।
উপকারিতা ৫ > হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে হজমশক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বুকে জ্বালা, গা গোলানো-সহ একাধিক সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের অ্যালকালাইন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটি অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্সের ঝুঁকি কম করে দেয়।
পেয়ারা অ্যালকালাইন প্রকৃতির হওয়ায় এটি পেটের অ্যাসিড উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম। দুটি আহারের মাঝে পেয়ারা খেলে পেটের pH উপাদান নিয়ন্ত্রিত ও ভারসাম্য ঠিক থাকে। এর ফলে গর্ভবতী মহিলাদের হজমশক্তি অনেকটাই বেড়ে যায়। যা আগত শিশুর জন্যও অনেক উপকারী হয়ে থাকে।
উপকারিতা ৬ > ক্যান্সারের ঝুঁকি কম করে
গর্ভবতী মহিলাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম হয়ে থাকে। ১০০০ জনের মধ্যে ১ জন গর্ভবতী মহিলা ক্যান্সারের শিকার হয়ে থাকেন। তবে নিরাময়ের চেয়ে বেশি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অনেক বেশি ভালো। পেয়ারায় এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বর্তমান, যা ক্যান্সার মোকাবিলায় সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন ও ভিটামিন সি থাকে যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।
উপকারিতা ৭ > দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
আমরা জানি ভিটামিন- এ এর অভাবে মানুষ অন্ধ হয়ে থাকে। তবে পেয়ারা ভিটামিন এ-তে সমৃদ্ধ থাকায় এটি অন্ধত্ব প্রতিরোধে সাহায্য করে। পাশাপাশি গর্ভস্থ ভ্রুণ ও মায়ের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। গাজরের পর দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সবচেয়ে সুপরিচিত ফলটি হলো পেয়ারা। পেয়ারাতে বিদ্যমান ভিটামিন-এ কেবল দৃষ্টিশক্তির উন্নতিই ঘটায় না বরং এটি চোখের নানা সমস্যা দূর করে থাকে। তাই আগত শিশুর অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে গর্ভবতী মহিলাদের পেয়ারা খাওয়া উচিত।
উপকারিতা ৮ > শিশুর স্নায়ুতন্ত্র উন্নতি সহায়ক
পেয়ারায় ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি৯ থাকে। যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফলিক অ্যাসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, এটি স্পিনিয়া বিফিডার মতো নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ করতে সহায়্তা করে থাকে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের পুরো পাকা পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
উপকারিতা ৯ > জীবাণু ও সংক্রমণ মোকাবিলা করে
পেয়ারা ভিটামিন সি, ই, ক্যারোটিনয়েডস, আইসোফ্ল্যাভোনয়েডস ও পলিফেনলসের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ হয় থাকে। যা জীবাণু ও সংক্রমণ মোকাবিলা করে অসুস্থ হতে দেয় না। কারণ যদি একটি মা অথবা তার গর্ভস্থ শিশু জীবাণু তে আক্রান্ত হয় তাহলে তাদের দুইজনের সাস্থের উপর অনেক খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই জীবাণু ও সক্রমণ থেকে বাচতে গর্ভবতী মহিলাদের পেয়ারা খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে।
উপকারিতা ১০ > মস্তিষ্ক শান্ত রাখে
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের সবসময় মস্তিস্ক শান্ত রাখতে হয়। কেননা তার মস্তিস্কে যদি চাপ পরে তাহলে তা আগত শিশুর উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের কর্টিসোলের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। যা আপনার পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে যা স্নায়ু ও পেশীকে স্বস্তি প্রদান করতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে অবসাদ মুক্ত থাকা যায় এবং মস্তিষ্ক শান্ত হয়।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন এ উপকারিতা - আচ্ছা ভিটামিন এর অভাবে কি হয়
গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়া – এটি কি নিরাপদ? গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
লেখকের মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার কার্যকারী ১০টি উপকারিতা
আজকের এই আর্টিকেল এ গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় একজন মা সবসময় তার সন্তানের সুসাস্থ কামণা করে থাকে। এক্ষেত্রে একজন গর্ভবতী নারীর বিভিন্ন ধরণের ফল খাওয়া প্রয়োজন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ফল হচ্ছে পেয়ারা। আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি কি তা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১ > পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কী?
উত্তরঃ পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে,তা ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও খুবই কার্যকর হয়। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার ও আছে।
প্রশ্ন ২ > গর্ভাবস্থায় মায়ের কতটুকু পরিমাণ পেয়ারা খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ দিনে একটি বা ১০০ থেকে ১২৫ গ্রাম ওজনের বেশি পাকা পেয়ারা খাওয়া উচিত হবে না।
প্রশ্ন ৩ > পেয়ারা কিভাবে গর্ভবতী মায়ের মাথা ঠাণ্ডা রাখে?
উত্তরঃ পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে যা স্নায়ু ও পেশীকে স্বস্তি প্রদান করতে সাহায্য করে থাকে।
প্রশ্ন ৪ > পেয়ারা কিভাবে গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্র উন্নতি করে?
উত্তরঃ পেয়ারায় ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি৯ থাকে। যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে থাকে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url