সফরের দোয়া ভ্রমণে নিরাপদ থাকার জন্য যে দোয়া পড়বেন
নামহীন
৩ সেপ, ২০২৩
ইসলামে সফরে যাওয়া বা ভ্রমন করা একটি নেকীর কাজ হতে পারে, যদি আপনার ভ্রমনের উদ্দেশ্য নেক/ভালো হয়। ইসলামে দ্বিনের দাওয়াত দিতে আগে সফর করা হতো,যার কারনে আজ বিশ্বের সকল স্থানে ইসলাম পৌছিয়ে গেছে। সফরের দোয়া পড়ে দোয়া চাওয়া একটি উত্তম উপায় আপনার দোয়া আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য করার জন্য।
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে সফর করাও ইবাদতের অংশ। ইসলামে সকল কাজের জন্য শরিয়ত মোতাবেক কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। ঠিক তেমনি সফরে বা ভ্রমনের জন্য কিছু সফরের দোয়া ও নিয়ম আছে, যা আজ আমি আপনাদের এই আর্টিকেলে জানাতে এসেছি। আপনারা আজ সফরের দোয়া এর পাশাপাশি সফরের যাবতীয় সকল কিছুর তথ্য পাবেন।
সূচিপত্রঃ সফরের দোয়া ভ্রমণে নিরাপদ থাকার জন্য যে দোয়া পড়বেন
ইসলামে ভ্রমন বা সফরে যাওয়ার আগে ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করার এবং সফরের দোয়া পাঠ করার কথা বলা হয়েছে । বাড়ী থেকে বের হওয়ার আগে সফরে যাওয়ার নিয়ত করে ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করা নবী (সাঃ) এর সুন্নাত। আমাদের নবী (সাঃ) এরশাদ করেন যে,
" যখন তোমরা বাড়ী থেকে বের হও,তার আগে ২ রাকাত নামাজ আদায় করবে যা তোমাদেরকে শয়তান হতে রহ্মা করবে। আবার যখন তোমরা বাড়ীতে প্রবেশ করবে, তখনও ২ রাকাত নামাজ আদায় কর যা তোমাদেরকে শয়তান হতে রহ্মা করবে।" (মুসনাদ আল-বাযযার)
সফরে যাওয়ার আগে ২ রাকাত সুন্নাত নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর,প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পাঠ করতে হয়।
সফরের জন্য বাড়ী ত্যাগ করার দোয়া
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তবে বর্ণিত,হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সফরের জন্য বাড়ী ত্যাগ করার সময় নিচের দোয়াটি পাঠ করতে বলেছেন-
بِسمِ اللَّهِ، توَكَّلتُ على اللَّهِ، لا حَولَ ولا قوَّةَ إلَّا باللَّهِ، يقالُ لَهُ
অর্থঃ "যে ব্যক্তি তার নিজ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে: "আল্লাহর নামে, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করি, আল্লাহ ছাড়া করো হ্মমতা বা শক্তি নেই",তাকে আল্লাহ বলবেন; 'তুমি যথেষ্ট এবং সুরক্ষিত এবং শয়তান তার থেকে অনেক দূরে চলে যাবে"। (সুনানে তিরমিযী)
বর্তমান সময়ে পায়ে হেটে সফর করে এমন মানুষ খুজে পাওয়া খুব কঠিন। বর্তমান সময়ে সবাই কোন না কোন যানবহনে করে সফর বা ভ্রমন করেন। কিন্ত আপনারা কি জানেন সফরের দোয়া করার আগে আমাদের যানবহনে উঠার জন্যও একটি দোয়া করতে হয়। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সফরের জন্য যানবহনে উঠার দোয়া দোয়াটি পড়তে বলেছেন-
سُبْحَانَ الذي سَخَّرَ لَنَا هذا، وَما كُنَّا له مُقْرِنِينَ، وإنَّا إلى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ
অর্থঃ "আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি কত নিখুঁত, যিনি এই (পরিবহন/গাড়ী) আমাদের সেবায় রেখেছেন অথচ আমরা এর উপর হ্মমতাবান ছিলাম না এবং নিশ্চিয় আমাদের রবের কাছেই আমাদের শেষ ভাগ্য।" (সহীহ মুসলিম)
সফরের দোয়া
বাড়ি ত্যাগ করার আগে ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করার পর অথবা সফর শুরু করার সময় আপনার অবশ্যই সফরের দোয়া পাঠ করা উচিত। আসুন জেনে নিন সাপনি যখন ভ্রমনে জাবেন তখন নিচে দেওয়া সফরের দোয়া টি পাঠ করবেন-
اللَّهُمَّ إنَّا نَسْأَلُكَ في سَفَرِنَا هذا البِرَّ وَالتَّقْوَى، وَمِنَ العَمَلِ ما تَرْضَى، اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَوَنَ عُدَهُ، اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَوَنَاْ هذا البِرَ وَالتَّقْوَى، اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا هُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ في السَّفَرِ، وَالْخَلِيفَةُ في الأهْلِ، اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بكَ مِن وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَاءِ السَّفَرِ، في السَّفَرِ، وَكَآبَاءِ السَّفَرِ، في السَّفَرِ، وَالْخَلِيفَةُ ف َالِ وَالأهْلِ
অর্থঃ "হে আল্লাহ! আমরা আমাদের সফরে আপনার কাছে ন্যায়পরায়ণতা, তাকওয়া এবং ভালো কাজ করতে চাই যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। হে আল্লাহ আমাদের সফরকে সহজ করে দিন এবং আমাদের জন্য গন্তবের দূরত্ব কমিয়ে দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সফরের সঙ্গী এবং (আমাদের অনুপস্থিতিতে) আমাদের পরিবারের অভিভাবক। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি সফরের কষ্ট, শোকের দৃশ্য এবং সম্পদ ও পরিবারে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা থেকে।" (সহীহ মুসলিম)
সফরের দোয়াঃ সফরকালে কোন জায়গায় যাত্রাবিরতি করলে
খাওলা বিনতুল হাকীম আস-সুলামিয়াহ (রাঃ) হইতে বর্ণীত,রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেন; কোন ব্যক্তি যদি কোন জায়গায় যাত্রাবিরতি নেয় তবে সে যেন বলে,
কখনও কখনও আমাদের ভ্রমণে বা সফরকালে আমরা বিভিন্ন ধরনের মানুষের মুখোমুখি হতে পারি, যেমন; কেউ অসুস্থতা বা অক্ষমতায় আক্রান্ত। তাদের জন্য সহানুভূতি, সমর্থন এবং দোয়া করা প্রশংসনীয় হলেও, এই ধরনের বিপদ হতে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত দোয়াটি পাঠ করার জন্য বলা হয়। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন;
যে ব্যক্তি এমন কোনো ব্যক্তিকে কষ্ট পেতে দেখে এবং বলেঃ "আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাকে যে কষ্ট দিয়েছিলেন তা থেকে রক্ষা করেছেন এবং তার অনেক সৃষ্টির উপর আমাকে সম্মানিত করেছেন",সে কখনও এতে কষ্ট পাবে না।" (সুনানে ইবনে মাজাহ)
সফরের দোয়াঃ গন্তব্যে পৌছানোর পর দোয়া / গ্রাম বা শহরে প্রবেশ করলে
গন্তব্যে পৌছানোর পর আপনাকে যে সফরের দোয়া পাঠ করতে হবে তা নিচে উচ্চারন ও অর্থসহ দেওয়া হলো-
উচ্চারণঃ "আল্লাহুম্মা রব্বাস সামাওয়াতিস সাব’ই ওয়া মা আজলালনা, ওয়া রাব্বাল আরদিনাস সাবি’ই ওয়া মা আকলালনা, ওয়া রাব্বাশ-শায়তিনি ওয়া মা আদলালনা, ওয়া রাব্বার রিয়াহি ওয়া মা জারাইনা, আস’আলুকা খাইরা হাদযহিল ক্বারাইয়াহ খাইরাহ খাইরাহা। ওয়া আউদযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি আহলিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা।"
অর্থঃ "হে আল্লাহ, সাত আসমান এবং যা কিছু তারা আবৃত করে তার মালিক,সাত যমীন এবং যা কিছু তারা বহন করে তার মালিক,শয়তানদের প্রভু এবং তারা যাদেরকে পথভ্রষ্ট করে, বাতাসের মালিক এবং যাকে তারা দূরে সরিয়ে দেয়। আমি আপনার কাছে এই গ্রামের মঙ্গল, এর বাসিন্দাদের কল্যাণ এবং এর মধ্যে থাকা সমস্ত কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করছি এবং আমি এই গ্রামের অনিষ্ঠ, এর বাসিন্দাদের অনিষ্ঠ এবং এর মধ্যে থাকা সমস্ত অনিষ্ঠ থেকে আপনার কাছে আশ্রয় নিচ্ছি।" (মুসতাদরাক আল-হাকিম)
সফরের দোয়াঃ সফরে বিপদের দোয়া
অনেক সময় আমরা যখন সফর বা ভ্রমন করি তখন সফরের দোয়া পাঠ করার পরও বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হয়। সফরে বিপদ হতে বাচার সবচেয়ে উত্তম কাজ হচ্ছে বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা ও ইস্তেগফার পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্নিত, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন-
"যে ব্যক্তি ক্ষমা প্রার্থনার জন্য (অর্থাৎ আস্তাগফিরুল্লাহ) বেশি করে পড়ে, আল্লাহ তাকে সমস্ত চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, প্রতিটি কষ্ট থেকে মুক্তির পথ দান করবেন এবং তাকে এমনভাবে রিযিক দেবেন যা সে কখনো আশা করে না।" (মুসনাদে আহমাদ)
رَبِّ انْزِلْنِي مُنزَلاً مُّبَارَكًا وَأَنْتَ خَيْرٌ مُنْزِلِينَ
উচ্চারণঃ" বিসমিল্লা-হি মাজরেহা ওয়া মুরসাহা ইন্না রাব্বিলা গাফরুর রাহীম।
অর্থঃ “এ চলা ও থামা আল্লাহরই নামে। নিশ্চয়ই আমার প্রভু ক্ষমাশীল ও দয়ালু "
সফর হতে বাড়ীতে ফেরার পর দোয়া
وَبِسْمِ اللهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبّنَا تَوَكَّلْنَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَلكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرِجَ بِسْمِ اللهِ وَلَجْن
অর্থঃ “হে আল্লাহ! ভাল প্রত্যাগমন ও ভাল গমন আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। আল্লাহর নামেই আমাদের গমন ও প্রত্যাগমন। আমাদের রব আল্লাহর উপরই আমাদের ভরসা।"
লেখকের মন্তব্যঃ সফরের দোয়া ভ্রমণে নিরাপদ থাকার জন্য যে দোয়া পড়বেন
আশা করি আজের আর্টিকেল পড়ে আপনি দোয়াগুলো শিহ্মতে পেরেছেন, সফরের দোয়া সকল মুসলমানদের মুখস্ত করে রাখা দরকার। কারন আধ্যাত্মিক সফরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য মুসলমানদের অনুসরণ করার জন্য কুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। তবে বেশ কিছু জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা শারীরিক ভ্রমণের বা সফরের তাৎপর্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
কুরআনে "সাইর" শব্দটি একজন ভ্রমণকারীকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। সাইর শব্দের আভিধানিক অর্থ ভ্রমণ করা বা চলাফেরা করা। পবিত্র কুরআনে সাইর শব্দটি ২৭ বার এসেছে। বেশিরভাগ জায়গায়, এটি "তাদেরকে ভ্রমণ করতে বলুন," বা "তারা কি ভ্রমণ করে না" বা "ভ্রমণ করো" এই ভাবে ব্যবহৃত হয়।
ইসলামে ভ্রমণের তাৎপর্য সম্পর্কে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,"তিনটি দোয়া আল্লাহর কাছে প্রত্যাখ্যাত হবে না; তার সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং ভ্রমনকারী বা মুসাফিরের দোয়া।" (আল-বায়হাকী, আত-তিরমিযী-সহীহ)
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url