রোজা ভঙ্গের কারণ - রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহের হাদিস ও কাফফারা

     রমজান মাসে রোজা রাখা সকল মুসলমানের জন্য একটি ফরজ ইবাদত যা অবশ্যই করনীয়। আপনারা রোজা রাখেন ঠিকই,কিন্তু আপনার রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো না জানায় আপনি রোজা রেখেও আপনার রোজা কবুল হচ্ছে না। আপনার অজানায় এই ফরজ ইবাদতে আপনি ভুল করছেন নাতো ?

রোজা ভঙ্গের কারণ, রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহের হাদিস ও কাফফারা

রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে রোজা রেখে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেব না। যেকোন ইবাদত করার আগে সেটি সম্পর্কে সকল তথ্য বিস্তারিত জেনে ও শিখে তারপর ইবাদত করতে পারলে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা যেতে পারে। আজ আপনাদেরকে রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো কি এবং রোজা ভঙ্গের কারণ জেনে করণীয় কাজ গুলো বিস্তারিত জানাবো এই আর্টিকেলে।  

সূচিপত্রঃ রোজা ভঙ্গের কারণ - রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহের হাদিস ও কাফফারা

রোজা মানে কি?

রোজা মানে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশে ফজর হওয়ার শেষ মুহুর্ত হতে মাগরিব এর আগে পর্যন্ত কোন কিছু না খেয়ে-পান করে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া। হাদিস শরীফে রোজা রাখার অনেক সাওয়াব রয়েছে। আল্লাহর কাছে রোজা রাখার গুরুত্ব অনেক বড়। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এরশাদ করেন-

"যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা ইমানের সাথে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতে সাওয়াব লাভের আশায় রাখবে, তার আগের সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।"

আপনি যদি সঠিকভাবে রোজা রাখতে চান এবং রমজানে রোজা রেখে আল্লাহর কাছে  থেকে  আখেরাতে সাওয়াব লাভ করতে চান তবেঁ আপনাকে অবশ্যই রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। 

রোজা ভঙ্গের কারণ কি ?

আপনি যদি রমাজেনের ফরজ রোজা রাখেন তবে আপনাকে অবশ্যই রোজায় করনীয় কি এবং রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো ভালোভাবে জেনে তারপর রোজা শুরু করতে হবে। এখন আপনাদের আমি রোজা কি কি কারণে কবুল হয় না বা ভেঙ্গে যায় তা জানাবো। নিচে রোজা ভঙ্গের কারণ কি সেগুলো দেওয়া হলো-
  • রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার খাওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ
  • রোজা রেখে ধূমপান ও আগরবাতির ধোয়া গ্রহন করলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
  • দাতের ফাকে খাবার আটকিয়ে থাকলে তা বের করে গিলে ফেললে রোজা হবে না।
  • রোজা রেখে গলায় হাত ঢুকিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে বমি করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
  • রোজা রেখে দিনের বেলা সহবাস করলে রোজা হয় না।
  • নাকে ড্রপ বা তেল দিয়ে টানলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
  • দাত দিয়ে রক্ত বের হলে তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায়।
  • কুলি করার সময় যদি কেও ইচ্ছা করে কিছু পানি গিলে ফেলে তবে তার রোজা হবে না।

কোন কাজগুলো রোজা ভঙ্গের কারণ না !

আপনাদের সুবিধার জন্য এবং বিনা দিধায় রোজা করতে রোজা ভঙ্গের কারণ এর পাশাপাশি কোন কাজগুলো রোজা ভঙ্গের কারণ না সেগুলো এখন জানাবো, তবে আসুন জেনে নিন আপনি কোন কাজ গুলো করলে আপনার রোজা ভাঙ্গবে না।
  • রোজা রেখে ভুলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
  • রোজা রেখে ভুলে কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয় না।
  • রোজা রেখে দিনে ঘুমালে যদি সপ্নদোষ হয় তবেও রোজা ভঙ্গ হয় না।
  • রোজা রেখে চোখে সুরমা,মাথায় তেল ও আতর মাখলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
  • রোজা অবস্থায় মুখের মধ্যে মাছি, ধুলা ও ধোয়া চলে গেলেও রোজা ভঙ্গ হয় না।
  • মেখের থুথু যত বেশি হোক না কেন তা গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয় না।
  • নাকের শ্লেষ্মা জোরে টানার ফলে যদি তা গলায় চলে যায় তাহলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
  • কোন কারনে বমি হলে বেশি হোক বা কম হোক রোজা ভঙ্গ হয় না।

রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ কি ?

আপনি কি জানেন রোজা মাকরুহও হতে পারে? আসুন আপনি বিস্তারিত জেনে নিন রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ কি ?

রোজা রেখে স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকলে রোজা মাক্রুহ হতে পারে

রোজা রেখে দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে থাকা, শোয়া বা হাত লাগানো সব কিছুই জায়েয আছে। কিন্তু যদি কামভাব প্রবল হয়ে সহবাসের ইচ্ছা জাগে, তবে এটি করা মাক্রুহ হবে। 

রোজা রেখে পান মুখে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলে মাক্রুহ হতে পারে

যদি কেও সেহরী খাওয়ার পর মুখে পান দিয়ে চিবাতে চিবাতে ঘুমিয়ে যায় এবং সকাল হয়ে যায়, তবে সে ব্যক্তির রোজা শুদ্ধ হবে না।

খাবারের স্বাদ নিলে রোজা মাক্রুহ হতে পারে

কোন জিনিস জিহবার আগা দিয়ে শুধু একটু স্বাদ দেখে থুথু ফেলে দিলে রোজা ভাঙ্গে না, তবে প্রয়োজন ব্যতিত এটি করা মাক্রুহ।




রোজা রেখে দিনের বেলায় দাত মাজলে রোজা মাক্রুহ হতে পারে

রোজা রেখে দিনের বেলায় কয়লা, মাজন বা বালু দিয়ে দাত মাজা মাক্রুহ এবং যদি মাজলের কিছু অংশ গলায় চলে যায় তবে তা রোজা ভঙ্গের কারণ হবে। 

মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ কি?

মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে প্রায় সকলের কিছুটা হলেও ধারনা আছে। একজন মেয়ে বালেগ হলে তার উপর নামাজ ও রোজা ফরজ হয়ে যায়। তাই মেয়েদের কি কি কারনে বা কোন কাজ রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে তা জেনে রাখা উত্তম। আসুন আপনিও জেনে নিন শুধুমাত্র মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ কি-
  • মেয়েদের মাসিক হলে রোজা হয় না।
  • মেয়েদের বাচ্চা প্রসবের ৪০ দিনের মধ্যে কোন রোজা হয় না।
  • মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব বের হলে রোজা ভাঙ্গে না তবে হাল্কা হয়ে যায়। 
  • রোজা রেখে দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে।

নফল রোজা ভঙ্গের কারণ কি?

যেকোন ব্যক্তি নফল রোজা ভাঙ্গতে পারে যে কোন কারন ছাড়াই। নফল রোজা হচ্ছে নফল ইবাদত যা নিজের জন্য করা হয়। তাই আপনি যদি কোন কারনে অথবা কারন ছারাই নফল রোজা ভেঙ্গে ফেলেন, তবে এটিতে আপনার কোন পাপ হবে না এবং কোন কাফফারাও দিতে হবে না।

নফল রোজা ভঙ্গের কারণ

  • স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখলে তা ভেঙ্গে যাবে।
  • শুক্রবারে রোজা রাখা নফল রোজা ভঙ্গের কারণ
  • ভুল করে খেয়ে ফেললে নফল রোজা হয় না।
  • সহবাস করলে নফল রোজা ভেঙ্গে যাবে।
  • রোজা অবস্থায় মাসিক হলে রোজা হবে না।
  • দুই ইদের দিন নফল রোজা রাখলে তা হবে না।

রোজা ভঙ্গের কারণ জেনে করণীয় কি?

রমজান মাসের রোজা ভাঙ্গা মোটেও উচিত নয়। যদি কেউ ইচ্ছা করে রমজানে রোজা ভাঙ্গে তবে তাকে একাধারে ২ মাসে ৬০ টি রোজা রাখতে হবে। এটিকে বলা হয় রোজা ভঙ্গের কারণ এর জন্য কাফফারা দেওয়া। ৬০ দিনের কোন একদিন রোজা বাদ পড়লে পুনরায় প্রথম থেকে রোজা শুরু করতে হয়। 

রোজা ভঙ্গের কারণ মাসিক হলে করণীয়

মাসিকের কারনে যদি রোজা ভঙ্গ হয় তবে যে কয়দিন মাসিক ছিল সেই দিন গুলোর জন্য কাজা রোজা করতে হবে। আর যদি নেফাস এর কারনে রোজা কাজা হয় তবে পবিত্র হওয়ার পর আপনাকে ৬০ রোজা করতে হবে।

রোজা ভঙ্গের কারণ রোগ হলে করণীয়

যদি কেও রোগের কারনে মাঝখানে কোন রোজা ভাঙ্গা পারে, তবে রোগ হতে সুস্থ হওয়ার পর নতুন করে ধারাবাহিক ভাবে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। 


কয়েকটি করণীয় এবং বর্জনীয় কাজ সমূহ


রমাদানের মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা। হারাম বর্জন করে যথার্থভাবে সিয়াম ও অন্যান্য ইবাদত করতে পারলে সার্থক রমাদান হিসেবে পরিগণিত হবে ইন-শা-আল্লাহ।

মহান আল্লাহ বলেন,

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

রাসূলুল্লাহ বলেছেন, 

যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ১৯০৩)




কয়েকটি করণীয় কাজ সমূহ

* আল্লাহ তা'আলার ওপর আস্থা রাখুন।
* সালাত সুন্দর করে ধীরস্থিরভাবে আদায় করুন।
* কুরআন পড়ুন। যথাসম্ভব বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন।
* যারা কুরআন পড়তে পারেন না, তারা সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে তিলাওয়াত শ্রবণ করুন।
* প্রত্যেক ভালো কাজ আল্লাহর নামে আরম্ভ করুন।
* আপনার সম্পদের হিসেব করে যাকাত প্রদান করুন।
* গোপনে দান করুন।
* নিকটাত্মীয়দের জন্য ব্যয় করুন।
* অভাবীদের জন্য ব্যয় করুন।
* আপনার সিয়ামকে অর্থবহ করার চেষ্টা করুন।
* চোখের পর্দা করুন।
* অন্যের হক আদায় করুন।  
* অন্যকে সৎকর্মের দিকে উৎসাহিত এবং পরিচালিত করুন।
* দিনমজুর ও সাধারণ শ্রেণীর মানুষদের সালাম দিন।
* অধীনস্থদের প্রতি সদয় থাকুন। তাদের কাজের বোঝা হালকা করে দিন।
* স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার করুন এবং অতিভোজন পরিহার করুন।
* সাহরীতে একটি হলেও খেজুর খান।
* ভোর রাতে আল্লাহর নিকট দু'আ করুন।
* পথে কষ্টদায়ক কিছু দেখলে তা পরিষ্কার করুন।
* রমাদানে তাহাজ্জুদ আদায়ের অভ্যাস করুন।
* অন্যের বিপদে এগিয়ে আসুন।

কয়েকটি বর্জনীয় কাজ সমূহ


* অর্থহীন ও অহেতুক কাজ পরিহার করুন।
* টিভি সিরিয়াল, মুভি, নাটক ও সিনেমা দেখা পরিহার করুন।
* মিউজিক শুনবেন না।
* মিথ্যা পরিহার করুন। মিথ্যাই সকল পাপের মূল।
* গেমস খেলে সময় নষ্ট করবেন না।
* আড্ডা ও দলবেঁধে গল্পগুজব পরিহার করুন।
* টাইম কিলার ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কম দিন।
* হারাম উপার্জন বন্ধ করুন।
* আপনি সঠিক হওয়া সত্ত্বেও পরিবার কিংবা পরিবারের বাইরে কারো সাথে তর্ক পরিহার করুন।
* ঝগড়া পরিহার করুন।

রোজা ভঙ্গের কারণ কি তা নিয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর। FAQs

মুসলিমরা রোজা রাখে না কেন?

আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট ও আখিরাতে নেকি লাভের আশা মুসলিমরা রোজা রাখে।

স্বপ্নদোষ কি রোজা ভঙ্গের কারণ ?

না সপ্নদোষ হলে কোন ভাবেই রোজা ভাঙ্গবে না, তবে গোসল ফরজ হবে।

ইনজেকশন দিলে কি রোজা ভেঙ্গে যায়?

হ্যা, রোজা অবস্থায় শরীরে ভিতরে কোন কিছু বা কোন তরল প্রবেশ করালে, যেমন ইনজেকশন দিলে রোজা ভেঙ্গে যায়।


লেখকের মন্তব্যঃ রোজা ভঙ্গের কারণ - রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহের হাদিস ও কাফফারা

রোজা রাখা প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য ফরজ। রমজান মাসের রোজার পাশাপাশি আপনি নফল রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত অর্জন করতে সহ্মম হতে পারেন। রোজা রাখার আগে আমাদের অবশ্যই রোজার রাখার সকল নিয়ম-কানুন মেনে তারপর রোজা রাখতে হবে।

আশা করি আমাদের আজকের রোজা নিয়ে লিখা আর্টিকেল পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হতে পেরেছেন। এই ধরনের ইসলামিক তথ্য পেতে আমাদের ব্লোগটি আপনার আপনজনদের সাথে শেয়ার করে আমাদের পাশেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url