নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ - যে ৩ শ্রেণির ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না

নামাজ হচ্ছে ইসলামের প্রথম ইবাদত যা শবে মেরাজ এর পবিত্র রাতে ফরজ করা হয়। মুসলমান ও কাফেরদের মধ্যে পার্থক্যকারী ইবাদিত হচ্ছে নামাজ আদায় করা। আর যদি আপনার এই নামাজ কবুল না হয়? কিভাবে জানতে পারবেন নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ ? এটি বেশ চিন্তার বিষয় যে আপনি নামাজ আদায় করছেন ঠিকই কিন্তু আপনার নামাজ গ্রহনযোগ্য হচ্ছে না।

নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ

নামজ এমন একটি মাধ্যম যার সাহাজ্যে আমরা আল্লাহর তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে সহ্মম হতে পারি। নামাজ যদি কবুল না হয় বা আল্লাহর কাজে গ্রনহযোগ্য না হয়, তবে আমরা কিয়ামতের দিন আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবো। আসুন দেখে নিন বিস্তারি নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ গুলো কি এবং আল্লাহ কোন ৩ শ্রেণির ব্যক্তির নামাজ কবুল করে না। 

সূচিপত্রঃ নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ - যে ৩ শ্রেণির ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না

যে ৩ শ্রেণির ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না । নামাজ কবুল হওয়ার লক্ষণ

নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত; "রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "তিনজন লোকের দোয়া কবুল হয় নাঃ একজন ব্যক্তি যে মানুষকে পথ দেখায় অথচ তারা তাকে পছন্দ করে না যেমন; একজন ইমাম। 

যে ব্যক্তি নামাজের শেষ অবধি নামাজ আদায় করতে আসে না অর্থাৎ নামজের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যায় এবং যে একজন মুক্ত ব্যক্তিকে দাসত্ব করে।" [সুনানে ইবনে মাজাহ ৯৭০]


ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "তিনজন ব্যক্তি যাদের নামাজ তাদের মাথার উপর এক হাতও উঠবে না; একজন ইমাম যে লোকদের নামায পড়ায় যারা তাকে ঘৃণা করে, একজন স্ত্রী যে রাতে তার স্বামী অসন্তুষ্ট নিয়ে সারারাত ব্যয় করে দেয় এবং দুই ভাই যারা তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করে। [ সুনান ইবনে মাজাহ৯৭১]

যে ৩ শ্রেণির ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না

  • স্বামীকে অসন্তুষ্ট করা স্ত্রী।
  • লোকের পছন্দ নয় এমন ইমান। 
  • সম্পর্ক ছিন্নকারী দুইভাই।

নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ । ইবাদত কবুল না হওয়ার কারণ

নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ সম্পর্কে রসুল (সাঃ) বলেছেনঃ এমন অনেক লোক আছে যারা নামাজ আদায় করে কিন্তু তাদের নামাজ পুরপুরি কবুল হয় না,এই জন্য তারা নামাজের পরিপূর্ণ নেকি পায় না। বরং তাদের কেউ ১০ ভাগের ১ ভাগ, ৯ ভাগের ১ ভাগ, ৮ ভাগের ১ ভাগ, ৭ ভাগের ১ ভাগ, ৬ ভাগের ১ ভাগ, ৫ ভাগের ১ ভাগ, ৪ ভাগের ১ ভাগ বা তিন ভাগের ১ অংশ অথবা অর্ধেক নেকি পায়। (আবু দাউদ/৭৯০ আ,ই, ইয়াসির রাঃ)

যে ব্যক্তি নামাজের হক আদায় করে না । ঘরে নামাজ পড়লে কি নামাজ হবে

০১ নামাজ কবুল না হওয়ার কারণঃ- 
আবু মাসউদ হতে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ" রুকু ও সিজদা করার সময় এমন কোন নামাজ কবুল হয় না যেখানে মানুষ তার মেরুদণ্ড সজা করে না।" [সহিহ (দারুসসালাম)]

০২ নামাজ কবুল না হওয়ার কারণঃ-
আয়েশা বর্ণনা করেছেন যেঃ "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঋতুস্রাবের বয়সে উপনীত নারীর নামাজ খিমার ছাড়া কবুল হয় না।"[জামে তিরজিমি ৩৭৭]

০৩ নামাজ কবুল না হওয়ার কারণঃ-
ইবনে উমর বর্ণনা করেছেন যে;"রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ পবিত্রতা ব্যতীত নামাজ কবুল হবে না এবং ঘুলুল থেকে সদকাও হবে না।"  হান্নাদ তার বর্ণনায় বলেছেন, "পবিত্রতা বা শুদ্ধিকরণ ছাড়া" নামাজ কবুল হয় না' [আবু ঈসা বলেন: এই হাদীসটি এই বিষয়ে সবচেয়ে সঠিক এবং সর্বোত্তম। [জামে-তিরজিমি ১]

০৪ নামাজ কবুল না হওয়ার কারণঃ-
আনাস তার দুই দাদাকে উদ্ধৃত করে বলেছেন; আমরা আবূ মূসা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "আল্লাহ এমন ব্যক্তির নামায কবুল করেন না যার শরীরে জাফরানের সুগন্ধি থাকে।"[সুনানে আবি দাউদ ৪১৭৮]০৪

মাদক পানকারী ব্যক্তি । সিগারেট খেলে ৪০ দিন ইবাদত কবুল হয় না

নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ মাদক দ্রব্য গ্রহন করা। এই নিয়ে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত; রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "প্রত্যেক নেশা দ্রব্যই খামর (মদ) এবং প্রতিটি নেশা দ্রব্য হারাম। 

কেউ মদ পান করলে আল্লাহ তার চল্লিশ দিন নামাজ কবুল করবেন না, তবে সে তওবা করলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। যদি সে এটি চতুর্থবার পুনরাবৃত্তি করে তবে এটি আল্লাহর উপর বাধ্যতামূলক যে তিনি তাকে তিনাতুল খাবাল পান করাবেন।


তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনাতুল খাবাল কি, আল্লাহর রাসূল? তিনি উত্তর দিলেনঃ ক্ষত স্রাব, জাহান্নামীদের থেকে প্রবাহিত। যদি কেউ হালাল ও হারামের মধ্যে পার্থক্য না করে এমন নাবালকের কাছে এটি পরিবেশন করে, তবে এটি আল্লাহর উপর বাধ্যতামূলক যে তিনি তাকে জাহান্নামের বাসিন্দাদের থেকে প্রবাহিত ক্ষতের স্রাব পান করাবেন।" [সুনান আবি দাউদ ৩৬৮০]

আজান শুনে জামাআতে অবহেলাকারী। আমাদের প্রার্থনা কবুল না হওয়ার কারণ কি

নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ হচ্ছে যে ব্যক্তি আজান শুনে জামাআতে অবহেলা করে, এবং সেই নামাজ পরে পড়লে তাদের নামাজ কবুল হয় নয়া।
রসুল (সাঃ) বলেনঃ "যে ব্যক্তি নামাজের শেষ অবধি নামাজ আদায় করতে আসে না অর্থাৎ নামজের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যায় তাদের নামাজ গ্রহনযোগ্য নয়।" [সুনানে ইবনে মাজাহ ৯৭০]

মা-বাবার অবাধ্য সন্তান

সালিম ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত যে, তার পিতা বলেছেন; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 'তিনজন ব্যক্তি যাদের দিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকাবেন নাঃ যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার অবাধ্য, যে নারী তার বাহ্যিক চেহারায় পুরুষদের অনুকরণ করে এবং বাকরুদ্ধ। 

আর তিনজন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না; যে তার পিতা-মাতার অবাধ্য, মাতাল এবং যে মানুষকে সে যা দিয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দেয়।"[সুনান আন-নাসায়ী ২৫৬২]

পুরুষ টাখনুর নিচে জামা পড়লে

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন; রসূলুল্লাহ (সাঃ) এক ব্যক্তিকে বললেন, যে নামাজ আদায় করছিল এবং তার পিছের জামা নিচে ছিল,"যাও এবং আবার ওযু কর"। লোকটি গেল এবং তা সম্পাদন করে ফিরে এল।  রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যাও এবং ওজু কর। উপস্থিত কেউ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! 

আপনি তাকে উযূ করতে বললেন, তারপর আপনি (এর কারণ না বলে) চুপ থাকলেন।  তিনি (সাঃ) বললেন; সে নামাজ আদায় করল যখন তার নিচের জামা টাখনুর নিচে ছিল। আল্লাহ এমন লোকের নামাজ কবুল করেন না যে তার নিচের জামা টাখনুর নিচে রাখে। [আবু দাউদ]/(রিয়াদ আস-সালিহিন ৭৯৬)

ওজু না করা

উবাই ইবনে কাব থেকে বর্ণিত যে; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার পানি চেয়ে ওযু করলেন।  তিনি বললেনঃ "এটি হল ওযুর সর্বনিম্ন আবশ্যকতা" অথবা তিনি বলেছেনঃ 'যে ব্যক্তি এই অযু না করে, আল্লাহ তার নামাজ কবুল করবেন না।

' অতঃপর তিনি প্রত্যেক অঙ্গকে দুবার করে ওযু করলেন এবং বললেনঃ এটা সেই ব্যক্তির অযু যে, যদি সে এটা করে তবে আল্লাহ তাকে দুই ভাগ সওয়াব দেবেন। 'এটি আমার ওযু এবং আমার পূর্বে প্রেরিত রাসূলগণের ওযু'। [সুনানে ইবনে মাজাহ ৪২০]

যে ব্যক্তি ধোকা দেয় 

অন্যতম নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ হচ্ছে "যে ব্যক্তি মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বা মুমিনদের ধোকা দেয়, এমন ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না।" (বুখারি-মুসলিম)

কি করলে নামাজ কবুল হয়? কি কি করলে নামাজ কবুল হয় না?

ইসলামি শরয়তে নামাজ কবুল হওয়ার কিছু শর্ত আছে, এই শর্তগুলো পরিপুর্ণভাবে পালন না করা আপনার নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ হতে পারে। আযান দেওয়ার সাথে সাথে নামাজের জন্য প্রস্তুত হতে হবে আপনাকে। আপনি যদি চান আপনার নামাজ কবুল হোক, তবে আপনি নিচে দেওয়া শর্তগুলো অবশ্যই পালন করুন।  

পবিত্র হওয়া

সিমাক ইবনে হারব থেকে বর্ণিত, মুসআব ইবনে সা'দ বলেছেন; আবদুল্লাহ ইবনে উমর অসুস্থ অবস্থায় ইবনে আমিরকে দেখতে আসেন এবং বললেনঃ 'হে ইবনে ওমর, তুমি কি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবে না?'  তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ওযু (শুদ্ধি) ব্যতীত কোন নামাজ কবুল হয় না এবং গালুল থেকে আসা কোন সদকা (কবুল হয় না)। [ শাহী মুসলিম ২২৪ ক]

নাপাকী দূর করা

আপনার দেহে বা দেহের কাপর যদি কোন নাপাকি লেগে থাকে, তবে সেই কাপর অবশ্যই তিনবার ভালো পানি ধুয়ে ফেলতে হবে। আর আপনার দেহ ভালো ভাবে পরিষ্কার করে পবিত্র করলে আপনার নামাজ কবুল হবে। 

নামাজের স্থান পাক হওয়া

যে স্থানে আপনি নামাজ আদায় করবেন সেই জায়গা অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। তাই নামাজের স্থান ভালো করে পবিত্র করুন।  

দেহ ঢাকা/ সতর ঢাকা 

দেহ ঢাকা ( পুরুষের ফরজ সতর নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত;কিন্তু কাপর থাকলে পায়জামা,লুঙ্গী বা জুব্বা ইত্যাদি পরে নামাজ পড়া সুন্নাত)। নারীদের হ্মেত্রে সতর হাতের কব্জি এবং পায়ের পাতা বাদে মাথা হতে পা পর্যন্ত সমস্ত দেহ ঢাকা থাকবে। অন্যথাই নামাজ হবে না।

কেবলার দিক মুখ করা

আপনি যখন নামাজ পরবেন,তখন আপনি মনে মনে চিন্তা করে খেয়াল করে নিবেন যে,আপনি নামাজের নিয়তে কেবলামুখি হয়ে নামাজের কথাটি উল্লেখ্য করবেন। এবং পশ্চিম দিক দেখে নামাজ পড়তে হবে।

নামাজের সময়

নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সাথা সাথে নামাজ আদায় করা উত্তম। কিন্ত ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামাজ পড়লে নামাজ কবুল হবে না। আযাজের সাথে সাথে নামাজ পড়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।  

লেখকের মন্তব্যঃ নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ - যে ৩ শ্রেণির ব্যক্তির নামাজ কবুল হয় না

নারীদের হ্মেত্রে নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ বেশির ভাব তাদের সতর ঢাকা শর্ত পুরন না করার কারনে হয়। যে পাতলা কাপরে শরীর দেখা যায়, সেই ধরনের পাতলা কাপর পড়ে নামাজ আদায় করলে আপনার নামাজ কবুল হবে না। 

তাছারা, নামাজ শুরু করার সময় যদি সতরের মধ্যে যে অংশগুলো আছে, তার কোন এক অঙ্গের এক চতুর্থাংশ দেখা যায় বা খোলা থাকে, তাহলে আপনার নামাজ কবুল হবে না। আশা করি আমাদের নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ আর্টিকেল পড়ে আপনি আপনাদের সকল তথ্য পেতে সহ্মম হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।    

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url