কাজা নামাজের নিয়ত - কাজা নামাজের নিয়ম বাংলায় ও আরবিতে
নামহীন
৩০ আগ, ২০২৩
আপনি কি আজকের কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়তে পারেননি অথবা নামাজ পড়তে কি আপনি ভুলে গেছেন? আপনার চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি সেই ওয়াক্ত বা দিনের নামজের জন্য কাজা নামজ পড়ে তা পুরন করে নিতে পারেন। কাজা নামাজের নিয়ত জেনে আপনি সময় মতো নামাজ আদায় করতে পারবেন।
অনেকেই হয়তো দিধায় থাকেন যে কিভাবে কাজা নামাজ পড়বো বা কাজা নামাজের নিয়ম কি? আজ আমি আপনাদেরকে কাজা নামাজ কেন পড়তে হয়? আপনারে কিভাবে কাজা নামাজের নিয়ত করবেন এবং কাজা নামাজ সম্পর্কে সকল তথ্য বিস্তারিত দেওয়ার চেষ্টা করব।
সূচিপত্রঃ কাজা নামাজের নিয়ত - কাজা নামাজের নিয়ম বাংলায় ও আরবিতে
কাজা নামাজ মানে যে নামাজ নির্ধারিত সময়ে পড়া হয় না এবং তা পরে পড়াতে হয়। প্রত্যেক ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ যেটি ছুটে গেছে তার কাজা নামাজ পড়া আবশ্যক,আপনার জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাজ কম হোক বা বেশি হোক।
নামাজ কাজা হলেই অত তারাতারি সম্ভব সেই ওয়াক্তের ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ- কাজা নামাজের নিয়ত দিয়ে আদায় করে নিতে হবে।
কাজা নামাজ হচ্ছে দু'প্রকার-
ফাওয়ায়েতে কালীল- ১ দিনের যেকোন ৫ ওয়াক্ত নামজের কোন একটি বা তার বেশি নামাজ কাজা হলে থাকে "ফাওয়ায়েতে কালীল" কাজা নামাজ বলে।
ফাওয়ায়েতে কাছির- ১ দিনে/ ৫ ওয়াক্ত এর বেশি নামজ কাজা হলে তাকে "ফাওয়ায়েতে কাছির" কাজা নামাজ বলে।
কাজা নামাজ কেন পড়তে হয় ? কাজা নামাজের নিয়ত বাংলায়
কাজা নামাজ কেন পড়তে হয় ? তা জেননা ! আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য ৫ ওয়াক্ত নামজে ফরজ করেছেন। আর এই ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে কিছু নামজ ফরজ,ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামজে বিভিক্ত। সুন্নত ও নফল নামাজের কাজা আদায়ের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
কিন্তু ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজ কোন ভাবেই ছাড়া যাবেনা। যখনি মনে পরবে তখনি এই নামজের অবশ্যই কাজা নামজ নিয়ম মেনে আদায় করতে হবে।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হাদিস ও আমল থেকে তা প্রমাণিত। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; "কেউ যদি কোন নামাজ আদায় করতে ভুলে যায়, সে যেন মনে পড়তেই সেই নামাজ কাজা আদায় করে নেয়। কাজা নামজ আদায় করা ছাড়া কোন কাফফারা নেই।" [বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৫৯৭]
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে; " যখন কেউ নামাজ আদায় করতে ভুলে যায়, সে যেন তা স্মরণ করে, কারণ আল্লাহ বলেছেন;“আর আমার স্মরণের জন্য নামাজ কায়েম কর"। [সহীহ মুসলিম হাদীস নং-১৫৬৯]
এছাড়াও এটি সুনান আল-নাসাইতে উল্লেখ আছে- মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সেই ব্যক্তির সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে নামাজের সময় ঘুমায় বা অলসতার কারণে ভুলে যায়। তিনি বলেছেনঃ "এর কাফ্ফারা হল, যখন মনে পড়ে তখন তা আদায় করবে।" (সুনানে নাসাঈ, খণ্ড ১, পৃঃ ৭১),
এই সমস্ত হাদিসে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন যে কেউ যদি তার ওয়াক্তে নামজ আদায় করতে ভুলে যায় তবে সে যেন তা আদায় করে। এটি স্মরণ করে, যদিও এটি অবহেলা বা ঘুমের কারণে বাদ পরেছিল। খন্দক যুদ্ধের (খন্দক যুদ্ধ) সময় মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)ও তাই করেছেন। খন্দক যুদ্ধের ঘটনাটি সকল হাদিস গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব হাদীসের ভিত্তিতে ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণ ব্যাখ্যা করেছেন যে,কাজা নামাজের নিয়ম মেনে আদায় করা জরুরি।
কাজা নামাজের সময় কখন? ফজরের কাজা নামাজের নিয়ত
আপনাদেরকে আগেই বলে রাখি যে,এমন কিছু সময় আছে যেগুলোতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। সেই সময় গুলো ছাড়া আপনি যেকোন সময় আপনার কাজা নামাজ বা নফল নামাজ আদায় করতে পারেন,নিচে দেখে নিন নামাজের নিষিদ্ধ সময়-
ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত এবং একটি বর্শার উচ্চতায় উদিত হওয়া পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় পনের মিনিট। (আল-শারহ আল-মুমতি',৪/১৬২)
যখন সূর্য আকাশের মাঝখানে তার শীর্ষস্থানে থাকে। এটি যোহরের নামজের সময় শুরু হওয়ার অল্প সময়, প্রায় এক ঘন্টা বা বিশ মিনিটের এক চতুর্থাংশ। (ফাতাওয়া আল-শাইখ ইবনে বায, ১১/২৮৬)
আসরের নামাজের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
এই তিন ওয়াক্তের কথা অনেক হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সময়ে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। এই হাদীছগুলোর মধ্যে একট হচ্ছে-
যে আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) বলেছেন; "রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; '' সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত আসরের নামজের পর কোনো নামাজ নেই এবং সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত ফজরের নামজের পর কোনো নামাজ নেই।" (আল-বুখারী-৫৮৬)/(মুসলিম-৭২৮)
কাজা নামাজের নিয়ত । কাজা নামাজের নিয়ত বাংলায়
কাজা নামাজের নিয়ত আরবীতে দেওয়া হলো। আপনারা যারা আরবী পড়তে পারেন,তারা অবশ্যই কাজা নামাজের নিয়ত আরবীতে মুখুস্থ করার চেষ্টা করবেন।
বাংলা অর্থঃ "আমি এশার ৪ রাকাত ফাঊত/কাজা নামাজের নিয়ত করছি,আল্লাহু আকবর"
কাজা নামাজের নিয়ম । কাজা নামাজের নিয়ত ও নিয়ম
আপনারা যদি কোন কারনে আপনার কোন ওয়াক্ত বাঁ দিনের নামাজ মিস করে থাকেন। তবে এক সময় বা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনাকে আপনার কাজা নামাজ পড়তে হবে। কাজা নামজের নিয়ত অনেকেই জানতেন না আশা করি আপনারা উপরে উল্লেখ করা কাজা নামজের নিয়ত পড়ে ফেলেছেন। নামজ একটি ফরজ কাজ এবং তা বাদ পড়লে ক্ষমা করা হয় না। কিয়ামতের দিন নামাজ সম্পর্কে প্রথম জিজ্ঞাসিত হবে।
যারা অনেক বছর ধরে নামাজ কাজা করেছেন তাদের জন্য আমি বলি,আপনার যত দ্রুত কাজা নামাজ আদায় করার একটি উপায় খুজে নিন। কাজা নামজের নিয়ম চারটি অব্যাহতি আছে এবং সম্পূর্ণ নামাজের জন্য সমস্ত ফরজ ও ওয়াজিব রয়েছে।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার কাজা নামাজে নিয়ম মেনে আদায় করুন। এমনকি আপনার মধ্যে প্রতিদিন একবার করে কাজা নামাজ পড়তে পারেন যা মাত্র ২০ রাকাত (৩ ওয়াজিব বিতর নামজ সহ)।
যাদের অগণিত কাজা নামাজ আছে তাদের কাজা নামাজের নিয়ম হচ্ছে নিম্নলিখিত নিয়ম অনুসারে ২০ রাকাত নামাজ প্রতিদিন আদায় করা-
১। রুকু ও সেজদায় তিনবার "সুবহানা রব্বিয়াল আযীম" এবং "সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা" পড়ার পরিবর্তে একবারই বলতে হবে।
২। ফরজ নামজের তৃতীয় ও চার রাকাতে পুরো সূরা ফাতিহা পড়ার পরিবর্তে তিনবার "সুবহানাল্লাহ" বলে রুকুতে যান। "সুবহানআল্লাহ" তিনবার ঠিকমতো পড়া হয়েছে তা নিশ্চিত করুন, তাড়াহুড়ো করবেন না। বিতরের তৃতীয় রাকাতে পূর্ণ সূরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক এবং তারপরে কুরআনের কমপক্ষে তিনটি আয়াত বা একটি সূরা পাঠ করতে হবে।
৩। শেষ কায়দায় (যখন আমরা আত্তাহিয়্যাতের জন্য বসি) সালামের আগে, আত্তাহিয়্যাতের পরে পূর্ণ দুরূদ ও দুয়ার পরিবর্তে কেবল "আল্লাহ হুম্মা সাল্লে আলা সায়েদেনা মোহাম্মদ ওয়া আলিহি" বলুন, তারপর সালাম দিয়ে নামজ শেষ করুন। এখানে দোয়া করা বাধ্যতামূলক নয়।
৪। বিতর নামজে পূর্ণ দোয়া কুনুত এর পরিবর্তে এক বা তিনবার "রাব্বি ফির লি" বলুন।
লেখকের মন্তব্যঃ কাজা নামাজের নিয়ত । কাজা নামাজের নিয়ম, বাংলায় ও আরবিতে
নামাজ ত্যাগ করলে এর কোন কাফফারা হয়না। আপনি যখনই নামাজ মিস করবেন, সময় পাওয়ার সাথে সাথেই নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবেন। তবে মনে রাখবেন নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে কোন ভাবেই নামাজ আদায় করা যাবেনা।
কাজা নামাজের নিয়ত অনেকেই হইতো জানতেন না। এখুন আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে তো কাজা নামাজের নিয়ত জানতে পাড়লেন, আপনি এখন খুব সহজেই কাজা নামাজ আদায় করতে পারবেন। আশা করি আপনারা আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি পড়ে উপকৃত হতে পেরেছেন, এই ধরেন আরো তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url