আকিকার নিয়ম ও দোয়া শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জানুন
নামহীন
২৫ আগ, ২০২৩
ইসলামি শরিয়তে সকল কাজ করা হয় একমাত্র আল্লাহ কে রাজি-খুশি করানোর উদ্দেশে। আকিকা হচ্ছে ঠিক তেমনই একটি ইবাদত যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালাকে সন্তষ্ট করা। তাই আকিকার নিয়ম ও দোয়া শরিয়তের বিধান অনুযায়ী পালন করা একান্ত জরুরী।
ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী সকল কাজ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আল্লাহর প্রতি কর্তব্য। আপনার জন্য আকিকার মতো ইবাদত করা সুন্নাত তাই আকিকার নিয়ম ও দোয়া না জানলে তা সঠিক ভাবে সম্পুর্ন করতে পারবেন না।
আমরা ভালো কাজ করি আল্লাহর কাছ থেকে রহমত পাওয়ার আশায়। আকিকা একটি গুরুত্বপূর্ন ইবাদত, তাই আজ আমরা আপনাদের আকিকার নিয়ম ও দোয়া এর পাশাপাশি আকিকা সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের জবাব দিওয়ার চেষ্টা করব।
সূচিপত্রঃ আকিকার নিয়ম ও দোয়া শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জানুন
আকিকা ইসলামিক শরিয়তের এমন একটি সামাজিক বিধান যা পালন করার মাধ্যমে আপনি আল্লাহ তায়ালার তরফ হতে আপনার নবজাতক সন্তানের জন্য নিরাপত্তা পেতে পারেন। আকিকার নিয়ম ও দোয়া মতাবেক আকিকা দিতে হয় কারন, এটি একটি ইলামের সুন্নতি বিধান।
শরিয়তে যদিও আকিকা করা বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি একটি অত্যন্ত বাঞ্ছনীয় সুন্নত যা আমাদের রাসূল (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীগণ পালন করতেন। আকিকার নিয়ম ও দোয়া মেনে রাসুল (সাঃ) প্রথমে নিজের আকিকা করেছিলেন এবং তাঁর নাতি আল-হাসান এবং আল-হুসাইনের জন্মের জন্য আকীকা করেছিলেন।
সালমান বিন আমির আদ-দাব্বি (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন;''আকিকা প্রত্যেক শিশুর জন্য নির্ধারিত। সুতরাং, এর পক্ষ থেকে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং আপনার সন্তানের ক্ষতি দূর করুন।" [তিরমিযী, আন-নাসায়ী]
আকিকা কেন করা হয় ?
আকিকা করা সন্তান জন্মের নেয়ামতের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। এটি আপনার সন্তানকে শয়তান থেকে রক্ষা করার এবং অসুস্থতা থেকে রক্ষা করার একটি উপায়ও বটে।
আলেমগন আরও উল্লেখ করেছেন যে আকিকার নিয়ম ও দোয়া মেনে করলে একজন শিশুকে আল্লাহর নিরাপত্তার কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং পিতামাতার কাছে একটি অধিকার হিসাবে কাজ করে যে, ইসলামে তাদের উপর তাদের সন্তানদের অধিকার রয়েছে।
আমাদের রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ''প্রতিটি শিশুকে তার আকিকা পর্যন্ত বন্ধক রাখা হয়। তাই সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবাই করতে হবে,বাচ্চার মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করতে হবে এবং তার নাম রাখতে হবে। [আবু দাউদ]
আকিকা কখন করতে হয় ?
ছেলে অথবা মেয়ে নবজাতক জন্মানোর পর সব থেকে উত্তম কাজ এই যে, বাচ্চার জন্মের সপ্তম দিনে তার নাম রাখা এবং আকিকা করা। যার ফলে সেই বাচ্চার বালা-মুসিবত দূর হয় এবং যাবতীয় আপদ হতে সে নিরাপদ থাকে।
আকিকা কখন করতে হয় তার সব থেকে উত্তম সময় হচ্ছে জম্নের সপ্তন দিন। সন্তান জন্মের ৭ দিনে আকিকা করা মুস্তাহাব। যদি আপনার সন্তান এর আকিকা ৭ দিনের দিন করতে না পারেন,আকিকার নিয়ম ও দোয়া শরিয়তের বিধান অনুযায়ী তবে যখনই করুন না কেন, যে বারে সন্তান জন্ম নিবে তার আগের দিন আকিকা করতে হবে। যেমন; শুক্রবার সন্তান জন্ম নিলে বৃহস্পতিবার ৭ম দিন হয়। আর বৃহস্পতিবার জন্ম নিলে বুধবার আকিকা করতে হবে। [বেহেশতি জেওর,পৃষ্ঠাঃ ৩০০-৩০১]
আকিকার দোয়া আরবী
আকিকা দেওয়ার সময় আকিকার নিয়ম ও দোয়া অনুযায়ী জবাইকারীকে শিশু এবং পিতামাতার পক্ষ থেকে আকিকার নিয়ত করতে হবে এবং নিম্নলিখিত দোয়া পাঠ করতে হবে-
আকিকার দোয়া আরবী (ছেলে)
بسمي الله وبالله. اللهمّ هاديه عقيقتون عن (اسم الصبي) ابن (اسم الأب) لحمو-هابي-لحمي-هي و-دمو-هابي-دمي-هي و-عزمو-هابي-عزمي-هي وشعروها بشعري-هي وجلدو-هابي-جلدي-ح. اللَّهُمَّ الْحَا وَقَعَ لِعَلِي مُحَمَّدِينَ عَلَيْهِ وَآلِيهِ السَّلَامُ.
একটি ছেলের জন্য আকিকার দোয়া
আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর মাধ্যমে, এটি হল আকিকা। (ছেলের নাম) ছেলের... (পিতার নাম) তার গোশত (অর্থাৎ আকিকার কুরবানীর গোশত) তার মাংসের রক্তের জন্য, তার হাড় তার হাড়ের জন্য, তার চুল তার চুলের জন্য, তার চামড়া তার চামড়ার জন্য। হে আল্লাহ, এটির মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর পরিবারের সুরক্ষা হোক।
আল্লাহ্র নামে এবং আল্লাহ্র মাধ্যমে, এটা হল (মেয়ের নাম), মেয়ের আকীকা। (পিতার নাম) তার মাংস তার মাংসের জন্য, তার রক্ত তার রক্তের জন্য,তার হাড় তার হাড়ের জন্য, তার চুল তার চুলের জন্য, তার চামড়া তার চামড়ার জন্য। হে আল্লাহ, এটি মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরিবারের সুরক্ষা হোক, তাঁর এবং তাঁর পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
আকিকার দোয়া বাংলা উচ্চারণ
আরবীতে আকিকার দোয়া মুখুস্থ্য করা অনেকটা কঠিন মনে হলে আপনি নিম্নের আকিকার দোয়া বাংলা উচ্চারন শিখে নিতে পারেন।
শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে বা সপ্তম দিন না হলে পরবর্তী সপ্তম দিনে ১৪, ২১ তারিখ এর মধ্যে আকীকা করা সুন্নত।আলেমদের মতে, শিশু পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত আকিকা করা যায়। কিছু আলেম ফতোয়া দিয়েছেন যে মৃত্যু পর্যন্ত আকিকা বৈধ এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নিজের জন্য আকিকার নিয়ম ও দোয়া মেনে আকিকা করতে পারে যদি তা শিশু অবস্থায় না করা হয়।
আকিকা করার সময় আকিকার করার নিয়ম, কুরবানীর মতো একই নিয়ম প্রযোজ্য। প্রাণীদের অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট বয়স এবং যোগ্যতা হতে হবে। ভেড়ার জন্য, এটি সর্বনিম্ন ৬ মাস এবং ছাগলের জন্য, ১২ মাস বয়স হতে হবে।
আকিকার জন্য নির্বাচন করা পশুদেরকেও সুস্থ থাকতে হবে যাতে শিং বা দাঁতের মতো কোনো অংশে ত্রুটি না থাকে। " রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম কুরবানী হলো সেই কুরবানী যার দাম অনেক বেশি এবং আকারে মোটা। (আহমদ)
ছেলে বাচ্চার আকিকার করার নিয়ম
ছেলে বাচ্চার আকিকার করার নিয়ম হচ্ছে, যদি আকিকার পশু বড় যেমন; উট/গর বা মহিষ হয় তবে সেই পশুর ২ ভাগ আকিকা করতে হবে। আর আপনার যদি টাকা-পয়সা বেশি থাকে তবে আপনি বড় পশু ১টি আকিকা করতে পারেন।
আকিকার নিয়ম ও দোয়া মতাবেক ছোট পশু; বকরী/ছাগল/ভেরা বা দুম্বা ছেলে বাচ্চার জন্য ২ টি দিতে হবে আর যদি আপনি সনার্থবান না হন তবে ১টি দিলেও আকিকা হয়ে যাবে।
মেয়ে বাচ্চার আকিকার করার নিয়ম
আকিকার নিয়ম ও দোয়া মতে মেয়ে বাচ্চার হ্মেত্রে আকিকার করার নিয়ম হচ্ছে- যদি আকিকার পশু বড় যেমন; উট/গর বা মহিষ হয় তবে সেই পশুর ১ ভাগ আকিকা করতে হবে। আর আপনার যদি টাকা-পয়সা বেশি থাকে তবে আপনি বড় পশু ২ ভাগ আকিকা করতে পারেন।
ছোট পশু জন্য মেয়ে বাচ্চার আকিকার করার নিয়ম ; বকরী/ছাগল/ভেরা বা দুম্বা ছেলে বাচ্চার জন্য ১ টি দিতে হবে।
আকিকা জন্য কি পশু নিতে হয়?। আকিকা জন্য পশুর সংখ্যা কত হবে?
একটি ছেলের জন্মের জন্য দুটি বকরী বা দুটি ভেরা এবং মেয়ের জন্য একটি কবকরী বা ভেরা জবাই বা কোরবানি করতে হবে। কিংবা কোরবানীর গরুর মধ্যে ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে। আকিকা একটি নবজাত সন্তানের পরিবারের জন্য একটি দায়িত্ব। আকিকার জন্য পশুদের শর্ত কুরবানীর পশুদের শর্তের মতই।
জবাই করা প্রাণীগুলো অবশ্যই একটি ভেড়া, ছাগল, গরু বা উট হতে হবে অর্থাৎ হালাল পশু। উটের ক্ষেত্রে অবশ্যই ৬ বছরের বেশি বয়সী হতে হবে, গরুর জন্য বয়স ৩ বছরের বেশি এবং ছাগলের জন্য ২ বছরের বেশি হতে হবে। তাছারা,আপনি আপমার সমার্থ্য অনুযায়ী আকিকার নিয়ম ও দোয়া মেনে যতগুলো পশু আকিকা করতে পারেন তার কোন সীমা নেই।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ''একটি ছেলের জন্য দুটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ভেড়া এবং একটি মেয়ের জন্য শুধু একটি জবাই কর। ভেড়াটি পুরুষ বা মহিলা কিনা তা বিবেচ্য না।" [আহমদ]
আকিকা করা মাংস বন্টনের নিয়ম কি?
কুরবানীর মতোই আকিকার গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নত- এক ভাগ আপনার পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য এবং এক ভাগ গরীবদের মধ্যে বিতরণ করার নিয়ম রয়েছে।
আকিকার গোশত কাচা ভাগ করে দেওয়া, কিংবা রান্না করে ভাগ করে দেওয়া বা দাওয়াত করে খাওয়ান সবই যায়েজ আছে। সেজন্য একটি ওয়ালিমা রাখা এবং সন্তানের জন্ম উদযাপনের জন্য মাংস থেকে পরিবার এবং বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানানোরও প্রথা।
আকিকার গুরুত্ব ও উপকারিতা
ইসলামে আকিকার গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম এবং তা পালন করা সকল মুসলিম পিতা-মাতা বা সন্তানের অভিভাবকদের কর্তব্য কেননা আকিকা আপনার সন্তানকে আল্লাহর নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে।
আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণ যখন কোন শিশুর জন্ম হলে সাধারণত জন্মের সাত দিনের মধ্যে তখন আকিকার নিয়ম ও দোয়া মেনে আকিকা করতেন। আকিকার উপকারিতা ও ইসলামে আকীকা করার অনেক সুবিধা রয়েছে।
প্রথম সুবিধা আকিকা কুরা মাধ্যমে শিশুর জন্মের ঘোষণা হয়।
দ্বিতীয়ত, আকিকা করে সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানামো হয়।
আকিকার আরেকটি উদ্দেশ্য হল সন্তানের জন্ম উদযাপন করার জন্য পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানানো। এই উপলক্ষ্যে গরীবদেরকে খাবার এবং মাংস দিয়ে উদযাপনে অন্তর্ভুক্ত করতে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
আকিকার নিয়ম ও দোয়া শরিয়তের বিধান নিয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
মৃত সন্তান হলে কি আকিকা করতে হয়?
না! যেহেতু সন্তানটি মারা গেছে তাই তার উপর শরিয়তের কোন বিধান প্রযোয্য না।
আকিকা দিতে অক্ষম হলে কি করব ?
আকিকার দিতে অহ্মম হলে বা তওফিক না হলে ছেলে সন্তানের পহ্ম হতে একটি বকরী আকিকা দেওয়া যায়েজ আছে। আকিকা না দিলে কোন গুনাহ নেই, এটি একটি ঐচ্ছিক ইবাদত।
আকিকার কুসংস্কার কি ?
নবজাতকের মাথার চুল কাটার জন্য মাথায় খুর রাখার সাথে সাথে আকিকার পশু জবাই করতে হবে এটি আকিকার কুসংস্কার।
গরু দিয়ে আকিকা করা যাবে কি?
হ্যা! গরু দিয়ে আকিকা করা যাবে। আপনি যদি সমার্থবান না হন তবে ছেলে সন্তানের জন্য গরুর ২ টি ভাগ এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ভাগ আকিকা দিতে পারেন।
আকিকার গোশত খাওয়ার নিয়ম ?
আকিকার গোশত খাওয়ার নিয়ম ঠিক কুরবানীর গোসত খাওয়ার নিয়ম এর মতো।
আকিকা পশুর চামড়া কি করতে হয়?
কুরবানীর পশুর চামরা যেমন মাদ্রাসা বা এতিমখানাতে দান করে দিতে হয়, ঠিক আকিকা পশুর চামড়া জন্য এই একই নিয়ম রয়েছে।
কুরবানীর অংশে আকিকা দেওয়া যাবে কি?
কুরবানীর অংশে আকিকা দেওয়া যাবে, কুরবানীর শরীক ৩ হলে ২ ভাব আকিকা করা যায়। কুরবানীর অংশে আকিকা দেওয়া সর্ত হচ্ছে কুরবানীর পশু গরু,মহিষ বা উটের মতো বড় পশু হতে হবে।
লেখকের মন্তব্যঃ আকিকার নিয়ম ও দোয়া শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জানুন
আকিকা নবজাত শিশুর পিতামাতা বা অভিভাবক দ্বারা সম্পাদিত করা একটি সুন্নাত ইবাদত। অধিকাংশ আলেমদের মতে, প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান যারা যাকাত প্রদানের যোগ্য বা আকিকা করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ আছে তাদের আকিকার নিয়ম ও দোয়া মেনে সন্তানের আকিকা করা উচিত।
আকিকা একটি নিজস্ব ইবাদত হলেও আকিকার দোয়া ও নিয়ম অনুযায়ী পালন করা আপনার সন্তানের জন্য কল্যাণকর। আকিকার করার মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তাকে আল্লাহর নিরাপত্তার অধিন করতে পারবেন। আশা করি আপনি আজ আমাদের আর্টিকেল পড়ে আকিকা বিষয়ে আপনার যা যা প্রশ্ন ছিল তার উত্তর পাতে সহ্মম হতে পেরেছেন। 🥰
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url