ঈমান কাকে বলে - ঈমান কত প্রকার ও কি কি
আমরা মুসলিম। আমাদের ধর্মের নাম ইসলাম। ইসলামের মূল কথাই হল ঈমান। ঈমান অর্থ বিশ্বাস, ইসলামের মূল বিষয়গুলোকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করাকে ঈমান বলা হয়। ইসলামের মূল বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা মুখে স্বীকার করা এবং সেই অনুসারে আমল করাই হলো প্রকৃত ঈমান। যার ঈমান আছে তাকেই মূলত মুমিন বলে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ঈমান কাকে বলে ও ঈমান কত প্রকার কি কি, ঈমানের প্রকারভেদ, ঈমানের উপকারিতা অপকারিতা এবং ঈমানের ওপর অটল থাকলে যেসব পুরস্কার পাওয়া যাবে সে সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
আমরা মানুষ, আমরা নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়নি, আমাদের সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ। আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি তাও নিজে নিজে সৃষ্টি হয়নি এই সুন্দর পৃথিবীও সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তা'আলা। আমাদের জন্য যা যা প্রয়োজন সে সবই তিনি সৃষ্টি করেছেন। কত বিশাল এই পৃথিবী। এতে আছে পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খাল বিল, গাছপালা, নানা রকম ফলফলাদি, ফুল ফসল আরো কত কি যা সবকিছুই আল্লাহ আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।
আপনার অবশ্যই পড়া উচিৎঃ কিয়ামতের আলামত এবং লক্ষণ – এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন
আর সেই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা অন্তর দিয়ে মেনে নেওয়া হচ্ছে ঈমান। আসুন জেনে নিই ঈমান আসলে কি, ঈমান কত প্রকার কি কি সে সম্পর্কে অজানা সকল বিষয় গুলো এক নজরে।
ঈমান কাকে বলে? ঈমান কত প্রকার ও কি কি?
ইসলামের মূল বিষয়গুলোকে অন্তরে বিশ্বাস করা মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুসারে আমল করাকে ঈমান বলে। ঈমান প্রথমত দুই প্রকার ০১। ঈমান মুজমাল ও.০২। ঈমান মুফাসসাল। আবার এই ঈমান মুফাসসাল হচ্ছে সাত প্রকার যথাঃ
- আল্লাহ তাআলার উপর বিশ্বাস
- মালাইকা বা ফেরেশতাগণে বিশ্বাস
- আসমানী কিতাবে বিশ্বাস
- নবী রাসূলে বিশ্বাস
- শেষ দিনের বা শেষ দিবসের উপর বিশ্বাস
- তাকদিরের ওপর বিশ্বাস
- মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস
আসুন এই ঈমানের প্রকারভেদ গুলো সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করি।
ঈমান মুজমাল। ইমানের প্রকারভেদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
امَنْتُ بِاللهِ كَمَا هُوَ بِاَسْمَائِه وَصِفَاتِه وَقَبِلْتُ جَمِيْعَ اَحْكَامِه وَاَرْكَانِه
উচ্চারণঃ আ-মানতু বিল্লা-হি কামা-হুয়া বিআসমা-ইহী ওয়া সিফা-তিহী ওয়া ক্বাবিলতু জামী-আ আহকা-মিহী ওয়া আরকা-নিহী।
অর্থঃ আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর ওপর ঠিক তেমনি যেমন আছেন তিনি, তার সব নাম ও গুণাবলীসহ। আর মেনে নিলাম তার সব হুকুম আহকাম ও বিধি-বিধান।
ঈমান অর্থ বিশ্বাস আর মুজমাল অর্থ সংক্ষিপ্ত অতএব ঈমান মুজমাল অর্থ হচ্ছে সংক্ষিপ্ত বিশ্বাস। ইসলামের মূল বিষয়গুলোকে সংক্ষেপে বিশ্বাস ও স্বীকার করাকে বলে ঈমানে মুজমাল। একজন মুমিন মুসলিমকে আল্লাহ তায়ালার একক সত্যায় বিশ্বাস রাখতে হয়। তার গুণাবলীতে বিশ্বাস রাখতে হয়। তারপর আল্লাহর আহকাম ও আরকান বা বিধি-বিধানগুলোকে মেনে চলতে হয়।
তার আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হয়। আমাদের জন্য যা কল্যাণকার যা ভালো তিনি তা গ্রহণ করতে বলেছেন আর যা আমাদের জন্য অকল্যাণকর এবং খারাপ তিনি তা বর্জন করতে বলেছেন এই গ্রহণ ও বর্জন মিলেই হল ঈমান। ঈমান মুজমাল খুব সংক্ষিপ্ত কিন্তু এর বিষয়বস্তু ব্যাপক।
আপনার অবশ্যই পড়া উচিৎঃ জান্নাতি ২০ সাহাবীর নাম - জান্নাতের সুসংবাদ পেলেন যারা
ঈমান মুফাসসাল। ইমানের প্রকারভেদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
امَنْتُ بِاللهِ وَمَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرَسُوْلِه وَالْيَوْمِ الْاخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالى وَالْبَعْثِ بَعْدَالْمَوْتِ
উচ্চারণঃ আ-মানতু বিল্লা-হি ওয়া মালা-ইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুসূলিহী ওয়াল ইয়াউমিল আ-খিরী, ওয়াল ক্বাদরি খায়রিহী-ওয়া শাররিহী মিনাল্লা-হি তাআলা ওয়াল বা’সি বা’দাল মাওত।
অর্থঃ আমি ঈমান আনলাম আল্লাহ, তার ফেরেশতা, তার কিতাব ও তাঁর রাসূলগণের উপর। আরো ঈমান আনলাম শেষ দিবসে ও তাকদীরের ভালো মন্দে যা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে।
ঈমান অর্থ বিশ্বাস, আর মুফাসসাল অর্থ বিস্তারিত, অর্থাৎ ঈমান মুফাসসাল অর্থ হচ্ছে বিস্তারিত বিশ্বাস। ইসলামে কতগুলো মূল বিষয়ের উপর আমাদের ঈমান আনতে হয় আমরা এর আগে যে বিষয়গুলোকে সংক্ষিপ্ত কথাই স্বীকার করেছি এখন সেই বিষয়গুলোকে বিস্তারিত ভাবে জানবো বিস্তারিতভাবে স্বীকার করব সেজন্য একে বলা হয় ঈমান মুফাসসাল।
ঈমানের প্রথম বিষয়ঃ আল্লাহ তাআলার উপর বিশ্বাস
ঈমানের প্রথম কথাই হল আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস করা। আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তার সত্তায় এক ও অদ্বিতীয়, তার কোন শরীক নেই, তিনি তার গুনাবলীতেও অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। তিনি অনাদি অনন্ত। তিনি প্রথম তিনিই শেষ। যখন কোন কিছুই ছিল না তখন তিনি ছিলেন আবার একদিন সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে তখন তিনিই থাকবেন। মহান আল্লাহ সবকিছু জানেন সবকিছু শোনেন ও দেখেন। ভালো মন্দ সবকিছু তারই হাতে। এই সবকিছুকে মন থেকে অন্তর থেকে বিশ্বাস করাই হচ্ছে ঈমান।
ঈমানের দ্বিতীয় বিষয়ঃ মালাইকা বা ফেরেশতাগণে বিশ্বাস
ফেরেশতাগণ আল্লাহতালার বিশেষ সৃষ্টি। তারা নুরের তৈরি নুর মানে হচ্ছে আলো। তারা আল্লাহর আদেশে বিভিন্ন কাজে নিয়েজিত। তারা কখনো আল্লাহর হুকুম অমান্য করে না, তাদের কখনো কোনো কিছু খাবার প্রয়োজন হয় না, ঘুমের প্রয়োজন হয় না, তারা সবসময় জিকির করতে থাকে এবং আল্লাহর আদেশ পালনে ব্যস্ত থাকে। তাদের মধ্যে চারজন প্রসিদ্ধ ফেরেশতা রয়েছে যথাঃ
- হরযত জিবরাইল (আঃ)ঃ তিনি নবী-রাসূলগণের কাছে আল্লাহর ওহী নিয়ে আসতেন
- হরযত মিকাইল (আঃ)ঃ তিনি জীবের জীবিকা বন্টন ও মেঘ বৃষ্টির দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
- হযরত আজরাইল (আঃ)ঃ তিনি আল্লাহর হুকুমে মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন
- হযরত ইসরাফিল (আঃ)ঃ তিনি শিঙ্গাতে আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি প্রথম ফু দিলে পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয় ফু দিলে সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে। আল্লাহর এসব ফেরেশতাগণ এর উপর বিশ্বাস করাও হচ্ছে ঈমান।
ঈমানের তৃতীয় বিষয়ঃ আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস
- তাওরাত ঃ- হযরত মুসা (আঃ)ঃ এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে
- যাবুর ঃ- হযরত দাউদ (আঃ)ঃ এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল
- ইঞ্জিল ঃ- হযরত ঈসা (আঃ)ঃ এর ওপর অবস্থিত হয়েছিল
- কুরআন মজিদ ঃ- হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।
ঈমানের চতুর্থ বিষয়ঃ নবী-রাসূলে বিশ্বাস
ঈমানের পঞ্চম বিষয়ঃ শেষ দিবসে বিশ্বাস স্থাপন করা
ঈমানের ষষ্ঠ বিষয় হচ্ছেঃ তাকদীরের উপর বিশ্বাস
ঈমানের সপ্তম ও সর্বশেষ বিষয় হচ্ছেঃ মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস স্থাপন
ঈমানের মূল বিষয় কয়টি
- তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস
- রিসালাত বা নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস
- আখিরাত বা পরকাল অর্থাৎ মৃত্যুর পর পুনরুত্থান উপর বিশ্বাস
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url