১। রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস এ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ফরমিয়েছেন,"রোজাদারদের নিদ্রা ইবাদতের সমতুল্য। তার চুপ থাকা তজবি পড়ার সমতুল্য সে সামান্য ইবাদাতে অন্য সময় অপেক্ষায় রমজানের অনেক সোয়াবের অধিকারী হয়। তাছাড়া তার দোয়া কবুল হয় এবং গুনাহ মাফ হয়। আর এর একমাত্র কারণ রোজার বরকত রোজার বরকতের কারণে এই সকল ফজিলত পাওয়া যায়। -বায়হাকী
قال النبي صلى الله عليه وسلم: «الصيام مثل الدرع والسور المتين الذي يقي من النار، أي كما يوجد الدرع والسور المبني يقيه من هجوم العدو، وكذلك يصوم الإنسان وفق أحكام الشرع ليتقي نفسه من نار جهنم. -الطائرات
২। মহানবি (সাঃ) বলেছেন," দোজখের আগুন হতে বাদ যাবার জন্য রোজার ঢাল এবং সুদৃঢ় প্রস্তর প্রাচীর স্বরূপ।অর্থাৎ ঢাল ও শুদীয় প্রস্তুত প্রাচীরের আশ্রয়ী যেমন শত্রুর আক্রমণ হতে রক্ষা করার পাওয়া যায় ,ঠিক সেরকমই মানুষ শরীয়তের নিয়ম মত রোজা রাখলে দোযখের আগুন হতে আত্মরক্ষা করতে পারে।" -বায়হাকী
এর ফলে মানুষের গোনার প্রাবল্য হ্রাস পায় এবং নেকীর উচ্চবৃদ্ধি পায় কাজেই নেব অনুযায়ী রোজা রাখলে এবং সূক্ষ্মভাবে রোজার আদব রক্ষা করলে গুনাহ হ্রাস পায় এবং দোজখ হতে নাজাত পাওয়া যায়।
«الصوم جنة للصائم حتى يفسده الصائم بالكذب والغيبة».
৩। রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে আরও এসেছে,"রোজা রোজাদারদের জন্য ঢালস রূপ যে পর্যন্ত রোজাদাররা মিথ্যা এবং গীবত দ্বারা তা নষ্ট করে না ফেলে।"
এর মানে হচ্ছে রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা, গীবত করা, কটু বাক্য বলা,ঝগড়া-কোলাহল করা, গালিগালাজ করা এবং অন্যান্য সকল প্রকার পাপ হতে বিরত না থাকলে নিয়ম অনুযায়ী রোজা হবে না। রোজা তো হবেই না বরং বড় গুনাহ হবে এবং রোজার বরকত থেকে বঞ্চিত থাকবে সে ব্যক্তি। -তাবরাণী
"الصوم رأس جهنم" معناه أن الصائم لا ينبغي له أن يرفث ولا يتكلم كالجاهلين. ومن جاهله فلا ينبغي له أن يعامله بنفس الطريقة في كل رد، بل يقول: إني صائم في سبيل الله.
৪। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে যে,"রোজার জাহান্নামের ঢাল শুরু।"অর্থাৎ যে রোজা রাখবে জাহেলদের ন্যায় অশ্লীল কোন কাজ করা বা কথা বলা তার উচিত না। যদি অন্য কেউ তার সাথে জাহেলদের ন্যায় অসভ্য ব্যবহার করে তবে,প্রতি উত্তরে তার অনুরূপ ব্যবহার করা সে ব্যক্তির উচিত হবে না বরং বলা উচিত হবে "আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে রোজা রেখেছি।"
وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «والذي نفسي بيده لأعلمن أن لريح فم الصائم أحب إلى الله وأحب إليه». الله من مش." - النسائي
৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আরো বলেছেন,"আমি সেই মহান আল্লাহর কসম করে বলছি,যার হাতে আমার প্রাণ,নিশ্চয়ই জানিও আল্লাহর নিকট রোজাদারদের মুখের গন্ধ মেশক অপেক্ষা অধিক প্রিয় ও মূল্যবান।''- নাসায়ী
"ينبغي للصائم أن يدعو بمثل هذا الدعاء كل يوم عند الإفطار، فإن الله قد تعهد بقبول دعاء ذلك الشخص." - الحاكم
৬। রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে আছে;" রোজাদার ব্যক্তি প্রত্যেকদিন ইফতারের সময় এমন একটি দোয়া যেন চেয়ে নেয়,কারণ আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির দোয়া কবুল করার বিশেষ ওয়াদা করেছেন।"-হাকিম
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم لرجلين: "تصوم أما تدري؟ الصوم جنة من النار وجنة من البلاء".
৭। রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে আরও বলা হয়েছে,একবার রসুল্লুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম দুজন লোককে বলেছেন; "তোমরা রোজা রাখো। তোমরা কি জানো না? রোজা জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ করা এবং বালা মুসিবত হাতে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ।"
অর্থাৎ রোজার বরকতে আখেরাতে জাহান্নামের আজাব হতে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং দুনিয়াতে বালা-মুসিবতে রক্ষা পাওয়া যাবে।-ইননোন্নাজ্জার
৮। রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন;কিয়ামতের দিন তিন জন লোকের খাওয়া দাওয়ার হিসাব দিতে হবে না।অবশ্য হালাল খাদ্য হওয়া চাই-সে তিনজন ব্যক্তি হচ্ছে:
১.রোজার সময় রোজার ইফতার করে।
২.যে ব্যক্তি রোজার সেহেরী খায়।
৩.যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলামী রাজ্যের সীমান্তে পাহারা দেয়।
এই তিন প্রকার লোকের যে খাবার হিসাব মাফ করে দেয়া হয়েছে তা আল্লাহর তাআলার অতি বড় অনুগ্রহ ও দয়া। তাই অনুগ্রহের পেয়ে আল্লাহ তায়ালা কে ভুলে যাওয়া সঠিক নয় বরং আল্লাহ তায়ালার অধিক অনুগত্য প্রকাশ করতে হবে।
মাহে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব হচ্ছে এই হাদিসে উক্ত তিন প্রকার লোকের প্রতি আল্লাহর বড় অনুগ্রহ ও রহমত প্রমাণ হয় যে,তাদের খাবার হিসাব মাফ করে দেয়া হলো। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে এই অনুগ্রহের কারণে অধিক মাত্রায় সুস্বাদু খাদ্য খাওয়াতে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়।
কিন্ত অতিরিক্ত আয়েশ আরামে লিপ্ত থাকলে মানুষ আল্লাহ কথা ভুলে যায় এবং গুনাহর শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই আল্লাহর এই নিয়ামতের আমাদের কদর করা উচিত এবং বেশি বেশি এবাদত করে আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করা একান্ত প্রয়োজনীয়।
"من أفطر كان له مثل أجر الصائم ولا ينقص من أجر الصائم" ولو كان الصيام على قليل من الطعام كالماء مثلا. فإنه سيظل يحصل على نفس الأجر كاملا. - أحمد
৯। সিয়াম সম্পর্কে হাদিস শরীফে আরো বলা হয়েছে," যে রোজাদারকে ইফতার করাবে,সে ওই রোজাদারের সওয়াবের সমান সওয়াব পাবে। অথচ ওই রোজাদারদের সওয়াব কম হবে না।"ইফতার সামান্য খাদ্য দ্বারা করা হোক না কেন, যেমন পানি দ্বারা তবুও ওই প্রকার পূর্ণ সওয়াব পাবে।-আহমদ
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url