আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে আপনারা অনেকেই সহহী দলীল বা আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিস এর তথ্য জানতে ইন্টারনেটে প্রায় অনুসন্ধান চালান। আমরা আশুরার রোজা প্রায় অনেকেই পালন করে থাকি, কিন্ত অনেকেই আশুরার রোজা কেন পালন করা হয় বা আশুরার রোজার হাদিস ইত্যাদি সম্পর্কে খুব একটা ধারনা নেই।
আমরা অনেক তথ্য ও হাদিস অনুসন্ধান করে আজকে আপনাদের জন্য আশুরার রোজার ফজিলত এবং কিভাবে আশুরার রোজা পালন করতে হয় বা আশুরার রোজার নিয়ত কিভাবে করতে তা বিস্তারিত এই আর্টিকেলে জানাবো। আশুরার রোজার ফজিলত ও আশুরার রোজার নিয়ত ও হাদিস জানতে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ুন।
সূচিপত্রঃ আশুরার রোজার ফজিলত - আশুরার রোজার নিয়ত ও হাদিস
আশুরা কি? আশুরার রোজার নিয়ত
আশুরা অর্থ হচ্ছে দশম,মহরম মাসের দশম দিন অনেক মর্যাদাপূর্ন হওয়ায় এই দিনকে আশুরা বলে উল্লেখ করা হয়। তাছারা, আশুরার রোজার ফজিলত রয়েছে অনেক। ইসলামে যে চারটি সম্মানিত বা মর্যাদা পূর্ণ মাস রয়েছে তার মধ্যে হচ্ছে মহরম মাস অন্যতম। যেহেতু মহরম মাস হিজরী সনের প্রথম মাস তাই ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মহরম মাসের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য অপরিসীম।
হিজরী সনে মহরম মাস গুরুত্বপূর্ণ বা তাৎপর্য বহন করার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আশুরা। আশুরা মহরম মাসের ১০ তারিখে পালন করা হয়ে থাকে। আশুরার রোজার ফজিলত জানার আগে জানুন মহরম মাসের ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরার দিনে সংঘটিত হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা।
আশুরার দিনে হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক ঘটনা হচ্ছে,হযরত মুসা আলাই সাল্লাম ফেরাউনের অত্যাচার থেকে এই দিনেই নিষ্কৃতি লাভ করেন। আশুরার দিনেই মহান আল্লাহ তা'আলা সর্বকালের জন্য লোহিত সাগরকে ডুবিয়ে দিয়ে নিজেকে খোদা দাবিদার কারী ফেরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে শিক্ষা দিয়েছিলেন।
আশুরার রোজা কেন রাখা হয়? আশুরার রোজা কবে?
আসুন জেনে নিয়া যাক আশুরার রোজা কেন রাখা হয়? মহরমের দশম দিন অর্থাৎ আশুরার দিন রোজা রাখার কারণ হচ্ছে,যখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মদিনায় হিজরত হলেন তখন তিনি দেখলেন ইহুদী গোত্রে সবাই আসরের দিন রোজা রাখছেন। এবং তখন তিনি ইহুদিদের উদ্দেশ্য করে বললেন: তোমরা এই দিনে রোজা কেন রাখছ? এর উত্তরে ইহুদীরা বললেন এই দিন বনী ইসরাইলকে শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন আল্লাহ তায়ালা।
আশুরার রোজা রাখার কারন, আসলে এই পবিত্র দিনে আল্লাহ তা'আলা মূসা (আঃ) ও বনী ইসরাইলকে ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে লোহিত সাগরে ডুবে শাস্তি দিয়েছিলেন। সেজন্য আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে হযরত মুসা আলাই সাল্লাম প্রতি বছর আশুরার দিনে রোজা রাখা শুরু করেন। এবং হযরত মুসা আলাই সাল্লাম এর অনুকরণ করে ইহুদীরা এদিনের রোজা রাখা শুরু করেন।
এই ঘটনা শোনার পর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করলেন যে,"যেহেতু মূসা আলাইহিস সালামের কৃতজ্ঞতা অনুসরণে আমরা ইহুদিদের চেয়ে বেশি অধিকারী। তাই এরপর থেকে হযরত মুহাম্মদ আসলে রোজা রাখেন এবং উম্মতদের তা পালন করার নির্দেশ প্রদান করেন। ( বুখারি ৩৩৯৭,মুসলিম ১১৩৯)
আশুরার রোজা ২০২৩ কবে?
১০ মহরম অর্থাৎ মহরম মাসের দশ তারিখে আশুরার রোজা রাখা হয়। যেহেতু আরবী মাসের সাথে ইংরেজী মাসের তারিখের অনেক ব্যবধান আছে এবং আমরা ইংরেজী মাস অনুসরন করি তাই ২০২২ সালে ১০ মহরম ছিল ১১ ই আগস্ট। তাই আশুরার রোজা ২০২৩ হবে ২৯ জুলাই রোজ শনিবার।
আশা করি যারা গুগলে আশুরার রোজা ২০২৩ কবে? অনুসন্ধান করেন তারা জেনে গেছেন যে আশুরার রোজা ২০২৩ কবে হবে।
আশুরার রোজা কয়টি?- আশুরার রোজার নিয়ত কি?
আশুরার রোজা কয়টি নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের মন্তব্য করে থাকেন। মুলত আশুরার রোজা ১টি, তবে আশুরার রোজার সাথে আরো একটি রোজা মিলিয়ে রাখার ব্যাপারে হাদিসে গুরুত্বরোপ করা হয়েছে।
কেননা ইহুদীরা সবসময় একটি রোজা পালন করে সেজন্য ইহুদিদের বিরোধিতা করার জন্য আশুরা রোজা রাখার একদিন আগে একটি নফল রোজা রাখা বা আশুরা রোজার পরে একটি রোজা মিলিয়ে রাখার জন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন।
আশুরার রোজার হাদিস প্রসঙ্গে নবীজি (সাঃ) এরশাদ করেন,"তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং তাতে ইহুদীদের বিরোধিতা কর, আশুরার আগে একদিন বা পরে একদিন রোজা রাখ।"
তাই বলা যায় যে আশুরার রোজা আসলে মহরমে ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ এই দুই দিন রাখা উত্তম। অবশ্য কেউ যদি শুধু ১০ মহররম রোজা রাখে তবে সেটিও আশুরার রোজা হিসাবেই গণ্য থাকবে। তবে হাদীস অনুযায়ী আমল না করার কারণে আশুরার রোজা মাকরূহ বা অনুত্তম হবে। আশুরার রোজার নিয়ত জানতে ড্রিম আইটিসি পেজের সাথেই থকুন, নিচে আশুরার রোজার নিয়ত বর্ণনা করা হবে।
আশুরার রোজার নিয়ত কি? আশুরার রোজার নিয়ম
আশুরার রোজার নিয়ত ঠিক অন্যন্য সুন্নাত রোজার নিয়তের ন্যায়। তারপরেও অনেকেই আরবীতে আশুরার রোজার নিয়ত করতে পারেন না। তার জন্য আজ আশুরার রোজার নিয়ত আমরা আপনাকে বাংলায় অনুবাদ করে দিব।
আশুরার রোজার নিয়তঃ "হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের লহ্ম্যে আশুররা নফল/সুন্নাত রোজার রাখার ইচ্ছা পোষন করছি,তুমি আমার পহ্ম থেকে কবুল করো। অবশ্যই তুমি সর্বস্রোতা সর্বজ্ঞানী"
উপরের নিয়তটি মন থেকে করে আপনি আশুরার রোজা শুরু করবেন। ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ মহান তিনি আপনার এই নেক আমল কবুল করবেন।
আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিস- আশুরার রোজার হাদিস
আশুরার রোজার হাদিস গুলো বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থ হতে সংগ্রহ করা হয়েছে। হাদিস গুলোর মধ্যমে আপনি আশুরার রোজার ফজিলত আরো ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন।
আশুরার রোজার হাদিস সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,"আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।" (সহিহ বুখারি : ১/২১৮)
আশুরার রোজার হাদিস; রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, "তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো,কিন্ত এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য দশ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরো একটি নফল রোজা রেখে নিয়ো।"(সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২০৯৫)
আশুরার রোজার হাদিস; মহানবী (সা.) অন্য এক হাদিসে বলেন,"আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।" (সহিহ মুসলিম : ১/৩৬৭; জামে তিরমিজি : ১/১৫৮)
আশুরার রোজার হাদিস; আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি, হাদিস : ১/১)
আশুরার রোজার হাদিস; ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণীত,তিনি বলেন হে আল্লাহর নবী! এ দিনটিকে ইহুদিরা সমীহ পূর্বক রোজা রাখে। যার কারনে আমাদের রোজাও তাদের সদৃশ হয়ে যায়। রাসূল (সা.) বললেন, যদি আমি আগামী বছর জীবিত থাকি, তবে ৯ মহরম তারিখটিকেও দশমের সঙ্গে মিলিয়ে রোজা রাখব, ইনশাআল্লাহ’!
আশুরার রোজার ফজিলত। আশুরার রোজার হাদিস
আশুরার রোজা হলো বিশেষ ফজিলতপূর্ণ রোজা যা মহররম মাসে রাখা অন্যতম রোজা,যার কারনে আশুরার রোজার ফজিলত অনেক। আশুরার রোজা রাখার মাধ্যমে শুধু সগিরা গুনাহ মাফ হবে। কবিরা গুনাহ বিশেষ তওবা ছাড়া মাফ হয় না।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহ মাফ করে। হাদিসের বার্ণনা হচ্ছে,"কবিরা গুনাহ ছাড়া সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এরপর তিনি আরও বলেন;" আরাফার রোজা দুই বছরের গুনাহ মাফ করে। আর আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মাফ করে। মুক্তাদির আমীন বলা যদি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তাহলে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
আশুরার দিনের আমল-
- বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা।
- সব সময় ইসতেগফার পড়া।
- সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া।
উপরের আমলগুলোর মাধ্যমে পাপ হ্মমা হয়। যদি বান্দার সগিরা গুনাহ থাকে তাহলে সগিরা গুনাহ মাফ করে। যদি সগিরা বা কবিরা কোন গুনাহ না থাকে তাহলে তার আমলনামায় নেকি লেখা হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। আর যদি কবিরা গুনাহ থাকে, সগিরা গুনাহ না থাকে তাহলে কবিরা গুনাহকে কিছুটা হালকা করার আশা করতে পারি।[আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খণ্ড-৬]
আশুরার রোজার ফজিলত এর উদ্দেশ্যে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন," পবিত্রতা অর্জন, নামায আদায়, রমজানের রোজা রাখা, আরাফার দিন রোজা রাখা, আশুরার দিন রোজা রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে শুধু সগিরা গুনাহ মাফ হয়।[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, খণ্ড-৫]
শেষকথাঃ আশুরার রোজার ফজিলত - আশুরার রোজার নিয়ত ও হাদিস
আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি আশুরা রোজার সকল তথ্য সম্পর্কে আপনাদের সঠিক তথি দিতে সহ্মম হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের ও নবীর সকল উম্মাতকে আশুরার রোজা রাখার ও অধিক পরিমানে নেক আমল করার তাওফিক দান কুরন "আমিন"। আশুরার রোজার ফজিলত - আশুরার রোজার নিয়ত ও হাদিস শেয়ার করতে ভুলবেন না। 😊
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url