মেডিটেশন কী? মেডিটেশন কিভাবে করে - মেডিটেশন করার উপকারিতা
বর্তমান সময়ে মেডিটেশন সম্পর্কে জানেনা এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। মেডিটেশন,ডিপ্রেশন অ্যাংজাইটি ইত্যাদি শব্দ এখন প্রায়ই সকলের কাছে পরিচিত। ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির মতো মানসিক ব্যাধি মেডিটেশনের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। মেডিটেশনের উপকারিতা অনেক রয়েছে, আজকে আমাদের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন মেডিটেশন কেন করা উচিত, মেডিটেশন কত প্রকার? মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য মেডিটেশনে এর গুরুত্ব কতটা প্রয়োজনীয় এসকল বিষয় নিয়ে।
সূচিপত্রঃমেডিটেশন কী? মেডিটেশন কিভাবে করে - মেডিটেশন করার উপকারিতা
মেডিটেশন কী? মেডিটেশন কি হারাম
মেডিটেশন বাংলা বা মেডিটেশনকে সহজ বাংলায় বলা হয় ধ্যান। মেডিটেশন কী? হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্ম মেডিটেশনকে ধ্যান বলে আখ্যায়িত করে আসছে। মেডিটেশন শব্দটি মেডিটেটাম থেকে এসেছে,এটি একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ 'চিন্তা করা।'
ধ্যান অনুশীলনের মাধ্যমে, আমরা দৈনন্দিন মুহূর্তগুলিতে আমাদের শরীরের সাথে আরও ভাল সংযোগ বা সম্পর্ক খুঁজে পেতে চেষ্টা করতে পারি যা আমরা প্রায়ই আমাদেরকে অতিক্রম করতে দিই এবং কীভাবে আমাদের আবেগগুলি আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করে তার জন্য আরও শক্তিশালী সচেতনতা তৈরি করতে পারি। গৌতম বুদ্ধা ধ্যান সম্পর্কে বলেছেন,
আরো পড়ুনঃ রাগ কমানোর উপায়। রাগ নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, বাণী ও ইসলামিক উক্তি
"বৌদ্ধরা অপবিত্রতা এবং আঁকড়ে থাকা (দুঃশচিন্তা) এবং তৃষ্ণা থেকে মুক্তির পথের অংশ হিসাবে ধ্যান অনুসরণ করে, যাকে জাগরণও বলা হয়, যার ফলে নির্বাণ অর্জন হয়, এবং এতে বিভিন্ন ধরনের ধ্যানের কৌশল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, বিশেষ করে অনাপানসতি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মননশীলতা।"
মেডিটেশন কেন প্রয়োজন ?
মেডিটেশন কী? এবং মেডিটেশন কেন প্রয়োজন ? আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্যদৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ক্রীড়া কৌশল বা ব্যায়াম করে থাকি। শারীরিক ব্যায়াম আমাদেরকে শারীরিকভাবে অসুস্থতা জোগাতে সক্ষম। কিন্তু আমাদের শরীরের সাথে সাথে আমাদের মানসিক অবস্থাটার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে আমি তো প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়াম,করি পুষ্টিকর খাদ্য খায় তাহলে আমার মেডিটেশন কেন প্রয়োজন ? আসলে মেডিটেশনের প্রয়োজন ছোট বড় সকল শ্রেণীর মানুষের রয়েছে। মেডিটেশনের বিভিন্ন উপকারিতা আছে তার মধ্যে সবথেকে বড় উপকারিতা হচ্ছে মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করা এবং মস্তিষ্কের সুস্থতা রক্ষা করা।
মেডিটেশন কিভাবে করে? মেডিটেশন করার সঠিক সময়।মেডিটেশন করার নিয়ম
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যাদের মেডিটেশন সম্পর্কে কোন ধারণা নাই। মেডিসিন কখন করা উচিত এবং মেডিসিনের পদ্ধতি গুলো কি? আমাদের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আগেই জানিয়েছি যে, মিডিটেশন কি? মেডিটেশন কেন প্রয়োজনীয়? এখন আমরা জানবো মেডিটেশন কিভাবে করা উচিত বা মেডিটেশন কিভাবে করতে হয় ? মেডিটেশন করার জন্য কিছু বিষয়বস্তু মেনে চলতে হয়। নিম্নোক্ত বিষয়বস্তু গুলো ভালো করে না মানলে মেডিটেশনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে না। যেসকল নিয়মগুলো মেনে মেডিটেশন করতে হবে তা হচ্ছে-
মেডিটেশনের জন্য সঠিক স্থান নির্বাচনঃ
যেহেতু আমরা জানি মেডিটেশনের অর্থ হচ্ছে ধ্যান।তাই ধ্যান করার জন্য কোন কোলাহল যুক্ত অবস্থান নির্বাচন করা মোটেও সঠিক নয়। সুতরাং মেডিটেশন করার প্রথম নিয়ম হচ্ছে স্থান নির্বাচন। সঠিক স্থান নির্বাচন অর্থাৎ কোলাহলমুক্ত জায়গা যেখানে কোন প্রকার শব্দ যেমন; রাস্তার গাড়ির আওয়াজ, আপনার বাসায় থাকা ফ্যান অথবা ঘড়ির আওয়াজ যা আপনার ধ্যানে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এসকল স্থান নির্বাচন করা সঠিক নয়।
আরো পড়ুনঃ অতিপুষ্টির লক্ষণ ও এই সমস্যায় আপনার যা করা উচিৎ
আপনি আপনার বাসার বাগান অথবা বেলকনি যেখানে হাওয়া বাতাস পূর্ণ অবস্থান বা নির্জন স্থান রয়েছে এসকল স্থান নির্বাচন করে মেডিটেশন করতে পারেন। মেডিটেশনের ক্ষেত্রে সঠিক স্থান নির্বাচন করা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
মেডিটেশনের জন্য সঠিক সময়েই নির্বাচনঃ
মেডিটেশনের দ্বিতীয় নিয়মটি হচ্ছে সঠিক সময় নির্বাচন আমরা অনেকেই ভাবতে পারি দিনের বেলা তো কোলাহলমুক্ত স্থান নির্বাচন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে তাই রাতে মেডিটেশন করার নিয়ম কি হতে পারে। রাতে মেডিটেশন করলে উপকারিতা আছে কিনা।
তাছাড়া মেডিটেশন করার আগে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আপনার মন মানসিকতা কেমন, আছে আপনি বিরক্ত বোধ করছেন কিনা অথবা আপনাকে ক্ষুদার্থ কিনা। করার আগে নিজের মনকে শান্ত রাখতে হবে যাতে করে আপনি মেডিটেশনের মনোযোগ দিতে পারেন।
যদি বলি মেডিটেশনের সঠিক সময় কখন তাহলে বলব সবচেয়ে সঠিক সময় হচ্ছে ভোর বেলা এবং সন্ধ্যার পর। এই দুটি সময়ই কোলাহলমুক্ত এবং নির্জন পরিবেশ পাওয়া যায়, যা আমাদের বিনাদ্বিধায় মিউটেশন করতে সাহায্য করে।
সঠিক ভঙ্গি নির্বাচনঃ
অনেকেই ভাবেন যে পদ্মাসন বা লোটাস পজিশন হচ্ছে মেডিটেশনের ক্ষেত্রে সবথেকে উপযুক্ত ভঙ্গি বা আসন কারণ সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত ভঙ্গিই হচ্ছে এটি। মেডিটেশন করতে এমন ভাবে বসা উচিত যাতে দেহের আশেপাশে কোন হেলান দেয়ার স্থান না থাকে এবং মেরুদন্ড সোজা করে ঘার টেনে চোখ বন্ধ করে মেডিটেশমন করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ হার্ট ব্লক কী? হার্ট ব্লক এর লক্ষণ - হার্ট ব্লক হলে কি করনীয়
মনোযোগঃ
সঠিক অবস্থা বা ভঙ্গিতে বসার পর মস্তিষ্ককে আস্তে আস্তে নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে নিজেকে সতেজ এবং প্রফুল্ল মনে করতে হবে এবং এর সাথে সাথে নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এইভাবে মেডিটেশন করলে কিছুদিনের মধ্যেই সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে।
মেডিটেশন সমাপ্তির নিয়মঃ
মেডিটেশনের সময় আমাদের মন এক কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। কি অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের কিছু সময় নেয়া দরকার। অনেকেই মেডিটেশন শেষ করে তাড়াহুড়ো করে উঠে যায় এটি মোটেও সঠিক নয়। এর ফলে মিডিটেশনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে না।
মেডিটেশন এককেন্দ্রিক একটি বিষয় যা থেকে বের হতে সময় প্রয়োজন। মানসিকভাবে শান্তি এবং মনোযোগ ফিরানোর জন্য মেডিটেশন হচ্ছে একমাত্র উপায় তাই মেডিটেশন শেষ করতে হবে সুষ্ঠুভাবে।
মেডিটেশন কত প্রকার? মেডিটেশন এর উপকারিতা
১।প্রেমময়-দয়া ধ্যানঃ এটি মেটা মেডিটেশন (Metta Meditation) নামেও পরিচিত। এর লক্ষ্য হল সমস্ত কিছুর প্রতি ভালবাসা এবং দয়ার মনোভাব গড়ে তোলা, এমনকি একজন ব্যক্তির শত্রু এবং স্ট্রেসের উত্স এর প্রতি। গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার সময়, অনুশীলনকারীরা তাদের মন উন্মুক্ত করে প্রেমময় দয়া পাওয়ার জন্য।
আরো পড়ুনঃ মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায় - মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির খাবার
তারপর তারা প্রকৃতি, নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তাদের প্রিয়জনের কাছে প্রেমময় দয়ার বার্তা পাঠায়।এই ধ্যানের বেশিরভাগ ফর্মে, মূল বিষয় হচ্ছে,(প্রকৃতি সুন্দর) বা সুন্দর কোন দোয়া বার্তাটি বহুবার পুনরাবৃত্তি করা, যতক্ষণ না অনুশীলনকারী প্রেমময় দয়ার মনোভাব অনুভব করেন। প্রেমময়-দয়া মেডিটেশন অন্যদের এবং নিজের উভয়ের জন্য সমবেদনা এবং ভালবাসার অনুভূতির প্রচার করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
এটি রাগ,পরাজয়,বিরক্তি এবং আন্তঃব্যক্তিক দ্বন্দ্ব দারা অক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে পারে। এই ধরনের ধ্যান ইতিবাচক ভাবে আবেগ বাড়াতে পারে এবং বিষণ্নতা, উদ্বেগ, এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস বা PTSD হ্রাসে করতে সক্ষম।
মেডিটেশনের উপকারিতা কি? মেডিটেশন করার নিয়ম
মানসিক চাপে রোধেঃ
মেডিটেশনের উপকারিতা রয়েছে অনেক কিন্তু প্রথম উপকারিতা হচ্ছে এটি আমাদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। মেডিটেশন মস্তিষ্ককে শীথিলীকরণ এর মাধ্যমে মানসিক চাপ কমায় এবং মস্তিষ্ককে দ্রুত চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না যারা মানসিক চাপের মধ্যে নেই ,তাই,কিছু সময় মেডিটেশন করার মাধ্যমে আমরা এই মানসিক চাপ হতে রক্ষা পেতে পারি।
রাগ কমানোর জন্যঃ
মনোযোগ বৃদ্ধিতেঃ
অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং বিভিন্ন কারণে বিরক্ত হওয়ার কারণে আমরা আমাদের কাজে মনোযোগ দিতে পারি না। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারেন সেক্ষেত্রে মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে মেডিটেশন হচ্ছে উত্তম একটি উপায়। কারন মেডিটেশন আমাদের মস্তিস্ককে শান্ত করে আমাদের কাজে মনোযোগ দৃড় করতে সহ্মম।
আরো পড়ুনঃ মাথা ভারী লাগার কারণ - মাথাব্যথার কারণ ও মুক্তির উপায়
রোগ দূর করতেঃ
আত্মনিয়ন্ত্রনেঃ
শেষকথাঃ মেডিটেশন কী? মেডিটেশন কিভাবে করে - মেডিটেশন করার উপকারিতা
মেডিটেশন বা ধ্যান একটি প্রক্রিয়া-ভিত্তিক উদ্যোগ যা সেই মুহূর্তের উপর লহ্ম্য করে, ফলাফলের উপর নয়। তাই মুহূর্ত উপভোগ করাই সফল ধ্যানের চাবিকাঠি। একজন ব্যক্তির ধ্যানের সেশন বা মেডিটেশন কখন করতে হয় ভাল না খারাপ, সঠিক বা ভুল তা বিচার করা উচিত নয়।
এই সকল বিষয় চিন্তা না করে তাদের কেবল সেই মুহূর্তে থাকা উচিত। ধ্যান একটি মস্তিস্কের দক্ষতা যা আয়ত্ত বা নিয়ন্ত্রন করতে সময় লাগে। কিছু মানুষ হতাশা এবং এমনকি রাগান্বিত বোধ করে যখন তারা প্রথম ধ্যান করার চেষ্টা করে তা নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
বর্তমান মুহুর্তে উপস্থিত থাকা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, যেমন বিভ্রান্ত না হয়ে একটি একক মন্ত্রে ফোকাস করা যেতে পারে। ধারনা করা যায় যে আপনারা আমাদের আর্টিকেল পড়ে মেডিটেশন সম্পর্কে অনেকটাই জানতে পেরেছেন। এই ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ক আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।😊
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url